পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(খ) হাওড়া বৰ্দ্ধমান কর্ড লাইন ও তারকেশ্বর শাখা । কলিকাতা ও বদ্ধমানের মধ্যে যাতায়াতের সময় কমাইবার জন্য এই কর্ড বা সোজা লাইনটি নিৰ্ম্মিত হয়। এই লাইনটি বেলুড় স্টেশনের পর হইতে পৃথক হইয়া বদ্ধমানের দুই স্টেশন পবর্ববর্তী শক্তিগড়ে মেন বা প্রধান লাইনের সহিত মিলিত হইয়াছে। প্রধান লাইনের শেওড়াফুলি জংশন হইতে একটি শাখা এই লাইনের কামারকুণ্ডু স্টেশন হইয়া তারকেশ্বর পর্য্যন্ত গিয়াছে। জোগ্রাম—হাওড়া হইতে কর্ড লাইনে ৪১ মাইল দূর। জোগ্রাম স্টেশন হইতে ৩ মাইল দুরে কুলীনগ্রাম। ইহা কৰ্ড লাইনের নিকটবর্তী স্থানসমূহের মধ্যে একটি বিশেষ প্রসিদ্ধস্থান । প্রধান লাইনের মেমরি স্টেশনে নামিয়াও এই স্থানে যাওয়া যায়। মেমরি হইতে কুলীনগ্রাম ৫ মাইল দূর। - কুলীনগ্রাম একটি বিখ্যাত বৈষ্ণব শ্রীপটি। ইহা বস্তু রামানন্দ ঠাকুরের পাট নামে প্রসিদ্ধ । কুলীনগ্রামের পরম বৈষ্ণব বস্তু বংশের খ্যাতি বৈষ্ণব সাহিত্যে অতি উজ্জ্বল অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। আদিশূর কর্তৃক আনীত দশরথ বসু হইতে ত্রয়োদশ পুরুষ অধস্তন এই বংশীয় মালাধর বস্তু ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধ অবলম্বনে “ শ্রীকৃষ্ণ বিজয় ’ কাব্য রচনা করেন। অনেকের মতে ইহাই বাংলা ভাষার আদি কাব্য। ১৪৭৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণ বিজয়ের রচনা আরম্ভ হয় এবং ১৪৮০ খৃষ্টাব্দে উহা শেষ হয়। কবি মালাধর গৌড়েশ্বর সামস্-উদ-দীন ইউসুফ শাহের নিকট হইতে “ গুণরাজ খ৷ ” উপাধি লাভ করেন। আত্ম পরিচয় প্রসঙ্গে মালাধর লিখিয়াছেন :– “বাপ ভগীরথ মোর মাত ইন্দুমতী । যাহার পুণ্যে হইল মোর কৃষ্ণচন্দ্রে মতি। যক্ষ রক্ষ সবৰ্বজনে করিয়া বিনয় । মালাধর বসু কহে শ্ৰীকৃষ্ণ বিজয়।” “গুণ নাহি অধম মুঞি নাহি কোন জ্ঞান। গৌড়েশ্বর দিলা নাম গুণরাজ খান।” “কায়স্থ কুলেতে জন্য কুলীনগ্রামে বাস। স্বপ্নে আদেশ দিলেন প্ৰভু ব্যাস।” শ্ৰীকৃষ্ণ বিজয়ের বন্দনার দ্বিতীয় পদটি এইরূপ :– “ এক ভাবে বন্দ হরি যোড় করি হাত। নন্দের নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণনাথ।” এই পদটি চৈতন্য দেবের অতি প্রিয় ছিল। এ সম্বন্ধে তাঁহার নিজ মুখের উক্তি যথা :-- “ গুণরাজ খান কৈল শ্রীকৃষ্ণ বিজয়। তহি তার বাক্য এক আছে প্রেমময় । নন্দ নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণনাথ । এই বাক্যে বিকাইনু তার বংশের হাত।” কুলীনগ্রাম এবং এই বস্তু বংশকে চৈতন্যদেব অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখিতেন ও প্রাণের তুল্য ভালবাসিতেন ।