পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে ፭»ጫ বাঁশবেড়িয়ায় বহুপূবেৰ্ব একটি গির্জা ছিল ; ইহার আচাৰ্য্য ছিলেন ইংরেজী, ফরাসী ও পর্তুগীজ ভাষাবিদ তারাচাদ নামে একজন দেশীয় লোক। কেহ কেহ বলেন এই গির্জাটিই বাংলাদেশের সবর্বপ্রথম গির্জা । বাঁশবেড়িয়ায় খামারপাড়ায় একটি আখড়া আছে; হুগুলীর চতুরদাস বাবাজীর বড় আখড়ার সহিত ইহার সম্বন্ধ আছে। খামারপাড়ার আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা ভিখারীদাস সম্বন্ধে নানারপ কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, একদিন সকালে ভিখারীদাস যখন দস্তধাবন করিতেছিলেন ত্রিবেণীর দরাফগাজী ব্যাঘ্ৰপষ্ঠে তথায় উপস্থিত হন। তাহাকে দেখিয়া ভিখারীদাস যে দাওয়ায় বসিয়াছিলেন তাহাকে হস্ত দ্বারা আঘাত করিয়া আগাইয়া যাইতে বলিলেন । দাওয়া আগাইয়া যাইলে ভিখারীদাস দরাফ গাজীর সম্মুখস্থ হইলেন এবং উভয়ে নামিয়া আলিঙ্গন করিলেন। কথিত আছে ইহার পর দরাফগাজী সংস্কৃত ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং গঙ্গা স্তোত্র লিখিয়া প্রসিদ্ধ হন। দরাফগাজী ত্রিবেণীর জাফর খাঁ বলিয়া কথিত । ত্রিবেণী—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৫ মাইল দূর। ইহা একটি প্রসিদ্ধ তীর্থ ও মুক্তবেণী নামে পরিচিত। যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদ বা প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী একধারায় মিলিত হইয়া এই স্থানে আসিয়া পুনরায় পৃথক ধারায় প্রবাহিত বলিয়া লোকের বিশ্বাস। সেই জন্য এই স্থানকে মুক্ত বেণী বলা হয়। ত্রিবেণীতে গঙ্গাস্নান হিন্দু মাত্রেরই কাম্য। ইহা অতি প্রাচীন স্থান। দ্বাদশ শতাবদীতে রচিত ধোয়ী কবির “পবন দূতম ” নামক কাব্যে ইহার উল্লেখ আছে। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ এই স্থানকে “তিরপানি ” ও “ফিরোজাবাদ ” নামে অভিহিত করিয়াছেন। বঙ্গাধিপ ফিরোজ শাহ কিছুকাল এই স্থানে বাস করিয়াছিলেন। মুসলমান আমলের কীৰ্ত্তির মধ্যে ত্রিবেণীতে জাফর খার মসজিদ উল্লেখযোগ্য। এই মসজিদের প্রাচীর গাত্রে আরবী ভাষায় কোর-আনের বচন উৎকীর্ণ আছে। অদিসপ্তগ্রাম দ্রষ্টব্য । মুঘল আমলে ত্রিবেণী একটি প্রসিদ্ধ বন্দর ও শহর ছিল এবং তীর্থ হিসাবেও ইহার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম লিখিয়াছেন, “ বামদিকে হালিশহর দক্ষিণে ত্রিবেণী । যাত্রীদের কোলাহলে কিছুই না শুনি। ” ত্রিবেণীতে ওড়িষ্যারাজ মুকুন্দদেব হরিচন্দনের নিৰ্ম্মিত একটি পুরাতন ঘাটের ধ্বংসাবশেষ আজিও বৰ্ত্তমান আছে। সপ্তগ্রাম-বিজেতা জাফর খ্য ভাগীরথী ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে একটি পুরাতন প্রস্তরের দেব মন্দিরের মধ্যে সমাহিত আছেন। সমাধির নিকটে একটি বৃহৎ মসজিদ ; ইহা প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ লইয়া নিৰ্ম্মিত। মসজিদের একটি খিলান মসজিদ অপেক্ষাও প্রাচীন ও জাফর স্ব। নিক্ষিত পূবেৰকার মসজিদের মিহরাব। এই মিহরাবটি বর্তমান মসজিদের অন্য মিহরাব হইতে দেখিতে সম্পূর্ণ পৃথক এবং ইহার শিলালেখ হইতে জানা যায় যে ১২৯৮ খৃষ্টাব্দে জাফর খা একটি মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। এই মিহরাবটি বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার মুসলমান রাজত্বকালের প্রাচীনতম স্থাপত্য নিদশন। জাফর খার মসজিদটি ভাঙ্গিয়া গেলে বর্তমান মসজিদ নিৰ্মাণকালে এই পুরাতন মিহরাবটি ব্যবহৃত হইয়াছে। - 7