পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে $0.3) শতাব্দীতে বারাণসী ধামে অধ্যয়ন করেন। উক্ত শতাব্দীর শেষভাগে শ্রীনাথ আচাৰ্য্য চূড়ামণির সময় হইতেই নবদ্বীপে স্মৃতিশাস্ত্র চচর্চার আরম্ভ হয় এবং খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে সাৰ্ত্ত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্যের সময় ইহা বিশেষ প্রাধান্য লাভ করে। তাহার স্থাপিত নব্যস্মৃতি এখনও বাঙালী হিলুদের আচার ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করিতেছে। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাবদীতে শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার জীমূতবাহনের দায়ভাগের টীকা ও “ দায়ক্রম সংগ্রহ ’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। শেষোক্ত গ্রন্থ কোলব্রুক সাহেব কর্তৃক ইংরেজীতে অনুদিত হয়। ওয়ারেন হেষ্টিংস হিন্দু আইনের প্রামাণিক বিধি প্রস্তুতের জন্য বাংলার নানা স্থান হইতে এগার জন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতকে নিয়োজিত করেন ; ইহাদের মধ্যে দুইজন রামগোপাল ন্যায়ালঙ্কার ও বীরেশ্বর পঞ্চানন নবদ্বীপের অধিবাসী ছিলেন। এই পণ্ডিত মণ্ডলী “ বিবাদার্ণব সেতু ” নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন ; উহা প্রথমে ইরাণীয় ও পরে ইংরেজীতে অনুদিত হয়। নবদ্বীপে বহুকাল হইতে জোতিঃশাস্ত্রেরও বিশেষ চচর্চা আছে। “ জ্যোতিঃসার সংগ্রহ ” নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ প্রণেতা জোতিৰী দয়ানন্দ বিদ্যার্ণব, তৎকালের নবদ্বীপের পঞ্জিকাকার রামচন্দ্র বিদ্যানিধি, রামজয় শিরোমণি, শতানন্দ সিদ্ধাস্তবাগীশ, কমলাকর জ্যোতিমী, গণিতাচাৰ্য্য বংশীয় বিশ্বেশুর বাচস্পতি, হারাধন বিদ্যাভরণ, নানা শাস্ত্রবিদ রাজীবলোচন বিদ্যাসাগর প্রভূতির নাম উল্লেখযোগ্য । - খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাবদীর শেষভাগে নবদ্বীপে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে একজন বিশিষ্ট সাধক ও মহাপুরুষ ছিলেন; তন্ত্র বা আগম শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি আগমবাগীশ নামে পরিচিত হন। তিনি তন্ত্রশাস্ত্রের দেবী মুক্তির সাকার পূজাবিধির প্রচলন করেন। আধুনিক কালের কালী বা শ্যামা মুক্তি কৃষ্ণানন্দের উদ্ভাবিত বলিয়া কথিত। “ তন্ত্রসার ” নামক তাহার গ্রন্থ সুপ্রসিদ্ধ। আজিও নবদ্বীপের পণ্ডিতগণের “বঙ্গবিৰুধ জননী সভা ” যাহা পূবেব “ বিদগ্ধ জননী সভা ” নামে খ্যাত ছিল ও “ নবদ্বীপ সমাজ ’ নামে দুইটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান আছে। নানা শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিতগণের নিবাসভূমি এই নবদ্বীপের সবর্বপ্রধান গৌরব ইহা শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব ভূমি বলিয়া । এই জন্যই ইহার তীর্থগৌরব, এই জন্যই ইহার “শ্রীধাম” আখ্যা, এই জন্যই ইহা বাংলার “বৃন্দাবন " রূপে সন্মানিত। শ্রীচৈতন্যদেবের পিতা জগন্নাথ মিশ্র ও মাতামহ নীলাম্বর চক্রবর্তী মহামারী ও দুভিক্ষের জন্য তাহাদের আদি বাসস্থান শ্রীহট্ট পরিত্যাগ করিয়া পরিজনগণসহ নবদ্বীপে আসিয়া বসবাস করেন। ইহারা পাশ্চাত্য বৈদিক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ । ১৪০৭ শকে (১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে) বাসস্তী সন্ধ্যার ফালগুনী পূর্ণিমা তিথিতে চৈতন্যদেব জন্য গ্রহণ করেন। তাহার জন্মের পূর্বে তদীয় জননী শচীদেবীর আটটি সস্তানের অকাল মৃত্যু ঘটিয়াছিল। তাহার জন্য সময়ে তদীয় অগ্রজ বিশ্বরূপ কিশোরবয়স্ক বালক ছিলেন। বিশ্বরুপ পরে ঘোল বৎসর বয়সে গৃহত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হয়েন। জগন্নাথ মিশ্র নবজাত পুত্রের নাম রাখিয়াছিলেন বিশ্বম্ভর,—অকাল মৃত্যুর হাত হইতে সন্তানকে বাঁচাইবার জন্য পুরস্ত্রীগণের পরামর্শ মত শচীদেবী পুত্রের নাম রাখেন নিমাই। নিমাইএর গায়ের রং অতি উজ্জল গৌরবণ ছিল বলিয়া কেহ কেহ তাহাকে গৌরাঙ্গ বা গেীর বলিতেন। ষোল বৎসর বয়সে পড়াশুনা শেষ করিয়া নিমাই “পণ্ডিত ”