পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$08 বাংলায় ভ্রমণ নামে প্রসিদ্ধ হন এবং নবদ্বীপবাসী মুকুন্দ সঞ্জয়ের চণ্ডীমণ্ডপে টোল খুলির অধ্যাপক হইয়া বসেন। ইতিমধ্যে তিনি তাঁহাদের প্রতিবেশী বল্লভাচার্য্যের কন্যা লক্ষ্মীদেবীক্ষে বিবাহ করেন। নিমাই পণ্ডিত পূবর্ববঙ্গ ভ্রমণে বাহির হইলে সপদংশনে লক্ষ্মীদেবীর লোকান্তর ঘটে। গৃহে প্রত্যাগমন করিবার পর তিনি রাজপণ্ডিত সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীকে বিবাহ করেন। অধ্যাপক হিসাবে অতি অল্পদিনের মধ্যেই তাহার বিপুল খ্যাতি হয় এবং দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতকে জয় করিয়া তিনি নবদ্বীপের অদ্বিতীয় পণ্ডিতরূপে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। গয়াধামে পিতার পিণ্ডদান করিতে গিয়া গদাধরের পাদপদ্ম দর্শনে তাহার মনে অভূতপূর্ব ভাবের সঞ্চার হয় এবং সেই স্থানেই তিনি ভক্তিপন্থী সন্ন্যাসী ঈশ্বরপুরীর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। নবদ্বীপে ফিরিয়া আসিবার পর তিনি সংকীৰ্ত্তনে মাতিয়া উঠেন এবং ক্রমে ক্রমে তাহার অসংখ্য ভক্ত পরিকরের সহিত তাহার মিলন ঘটে। নবদ্বীপের বিখ্যাত পাষণ্ড জগাই ও মাধাইকে তিনি প্রেমের স্বারা বশীভত করেন এবং সর্বত্রই তাঁহার অসাধারণ প্রেমভক্তির খ্যাতি বিস্তৃত হয়। গয়া হইতে ফিরিবার তিন বৎসর পরে ১৪৩১ শকে (১৫৫৯ খৃষ্টাব্দে) উত্তরায়ণের দিন কাটোয়ায় মাধবেন্দ্রপুরীর শিষ্য কেশব ভারতীর আশ্রমে গমন করিয়া তিনি সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং তাহার নব নামকরণ হয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য। তিনি যৎকালে সংকীৰ্ত্তন রসে মগ্র ছিলেন, সেই সময়ে বৈষ্ণব প্রধান নিত্যানন্দের সহিত তাহার মিলন হয়। নবদ্বীপবাসিগণ ক্রমে চৈতন্যদেবকে শ্রীকৃষ্ণের ও নিত্যানন্দকে বলরামের অবতার বলিয়া বিশ্বাস করিতে থাকেন। অতঃপর চৈতন্যদেব বহু তীর্থ পৰ্য্যটন করিয়া বহু স্থানে প্ৰেমধৰ্ম্ম প্রচার করেন। ১৪৫৫ শকের (১৫৩৩ খৃষ্টাব্দে) আষাঢ় মাসে তিনি এই নশ্বর জগৎ পরিত্যাগ করেন। মাত্র ৪৮ বৎসর এই জগতে থাকিয়া তিনি যে প্রেমধৰ্ম্মের প্রচার করিয়া গিয়াছেন, ভারতের ভাবধারায় উহা বাঙালীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দান। তাহার মহান জীবন অবলম্বন করিয়া যে বিরাট বৈষ্ণব সাহিত্য গড়িয়া উঠিয়াছে, বাংলা ভাষার তাহা অপূর্ব সম্পদ। র্তাহার পুণ্যপদম্পশে বাংলা ও ওড়িষ্যার বহু অখ্যাত স্থান তীথের গৌরব অর্জন করিয়াছে। বৈষ্ণবগণ র্তাহাকে সাক্ষাৎ ভগবান জ্ঞানে আচর্চনা করেন এবং অপরাপর ব্যক্তিগণ তাহাকে ঈশ্বর-প্রেমিক মহাপুরুষ জ্ঞানে শ্রদ্ধা করেন। বাংলার বৃন্দাবন নবদ্বীপে দেখিবার বস্তু আছে অনেক। তন্মধ্যে বিষ্ণুপ্রিয় দেবীর প্রতিষ্ঠিত শ্ৰীগৌরাঙ্গ বিগ্রহ সবৰ্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। যে মন্দিরে এই বিগ্রহের পূজা হয় উহা “মহাপ্রভু বাট ” নামে পরিচিত। নবদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রীদেবী বিদগ্ধজননী বা পোড়া-মা তলা, বুড়া শিবের মন্দির, পাড়ার মা সিদ্ধেশ্বরী কালী, আগমেশ্বরী তলা, সোনার গৌরাঙ্গ, বড় আখড়া বা শ্যামসুন্দর মন্দির, অদ্বৈত প্রভুর ঠাকুর বাটী, নিত্যানন্দ মন্দির, মড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দির, শ্রীবাস অঙ্গন, মণিপুর রাজের স্বর্ণচূড় মন্দির, কাচকামিনীর মন্দির, চরণদাস বাবজীর সমাজ বাগ, মধাইএর ঘাট, প্রভৃতি তীর্থযাত্রী ও ভ্রমণকারী মাত্রেরই দ্রষ্টব্য। পোড়া-মা তলা বা জগন্মাতা দেবীর ঘট বৃহদ্ৰথ নামে এক সিদ্ধ সন্ন্যাসী কর্তৃক স্থাপিত বলিয়া কথিত। সাধকের তপস্যায় প্রীত হইয়া দেবী প্রত্যহ দুই দণ্ডকাল নবদ্বীপে অধিষ্ঠান করিতে প্রতিশ্রুত হন। বাসুদেব সাবর্বভৌম চতুষ্পাঠী স্থাপন করিয়া দেবীর ঘটটিকে গ্রামের মধ্যে আনিয়া বর্তমান বটবৃক্ষের ছায়ায় স্থাপন করেন ; একবার গাছটি পুড়িয়া গেলে দেবী বিদগ্ধজননী বা পোড়ামা নামে আখ্যাত হন। নবদ্বীপের পল্লীমাত বা পাড়ার মা সিদ্ধেশ্বরী কালী এখানকার সবর্বাপেক্ষা পুরাতন দেবতা। কথিত আছে একজন সিদ্ধপুরুষ ইহার প্রতিষ্ঠা করেন এবং বহু সাধক এই স্থানে সাধনা করিয়া সিদ্ধ হন। ইনি বিশেষ জাগ্রত বলিয়া খ্যাত ।