পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে ᎼO☾ কাশী বৃন্দাবনের ন্যায় নবদ্বীপে নিত্যই মহোৎসব লাগিয়া আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে এখানকার দেবমন্দিরগুলিতে কীৰ্ত্তন, পাঠ ও কথকতা প্রভৃতি হয়। নবদ্বীপের উৎসবের মধ্যে বৈশাখে চন্দন যাত্রা, শ্রাবণে বুলন, ভদ্রে জন্মাষ্টমী, মাঘে বুলেট ও ফাত্তনে গেীর পূর্ণিমা বা দোলযাত্র বিশেষ বিখ্যাত। মাঘী শুক্লা একাদশী হইতে ১২ দিন ধরিয়া ধুলোট মেলায় বাংলার সমস্ত প্রসিদ্ধ কীৰ্ত্তনিয়াগণ সদলবলে মিলিত হন। গৌর বা ফাল্গুনী পূর্ণিমায় চৈতন্য দেবের আবির্ভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইহা ছাড়া প্রধান বৈষ্ণব মহাস্তগণের মৃত্যু তিথিতে এবং গ্রহণ প্রভৃতি গঙ্গাস্নানের যোগে নবদ্বীপে দেশ বিদেশ হইতে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। কাত্তিকী পূৰ্ণিমায় বৃহৎ কালী মুক্তি গড়িয়া পূজা ও দুইদিন ব্যাপী মেলা হয়। ইহা পট পূর্ণিমার মেলা নামে খ্যাত । নবদ্বীপে যাত্ৰিগণের থাকিবার জন্য বহু ধৰ্ম্মশালা, যাত্রীনিবাস ও আখড়া আছে। এখানকার চালাই করা দেবদেবীর মুক্তির বিশেষ খ্যাতি আছে। আদি নবদ্বীপের অবস্থান সম্বন্ধে পণ্ডিতগণের মধ্যে মতদ্বৈধ আছে। কাহারও কাহারও মতে ভাগীরথীর গতি পরিবর্তনের জন্য আদি নবদ্বীপ লুপ্ত হওয়ার ফলে বর্তমান নবদ্বীপের প্রতিষ্ঠা হয় এবং আদি নবদ্বীপ বৰ্ত্তমান নবদ্বীপের নিকটে উত্তরদিকে একটি স্থানে এবং মতান্তরে গঙ্গার পবর্বতীরবর্তী মায়াপুরে অবস্থিত ছিল। পূবর্ববঙ্গ রেলপথের নবদ্বীপ ঘাট স্টেশন দ্রষ্টব্য। নবদ্বীপ বাসী শ্রীচৈতন্য দেবের প্রিয় পার্ষদ ও কীৰ্ত্তনিয়া ছোট হরিদাস অধুনা ব্যবহুত মৃদঙ্গ বা থোলের আবিষ্কৰ্ত্ত বলিয়া কথিত। ইনি একবার শিখি মাহাতির বৃদ্ধা ভগিনীর নিকট ভিক্ষা লইলে চৈতন্যদেব বুষ্ট হইয়া বলেন— “বৈরাগী হইয়া করে প্রকৃতি সম্ভাষণ। দেখিতে না পারি অামি তাহার বদন ৷ ” চৈতন্য চরিতামৃত। হরিদাস দুঃখে ক্ষোভে প্রয়াগে ত্রিবেণী সঙ্গমে প্রাণ বিসর্জন করেন। ১৫৬৭ খৃষ্টাব্দে শ্রীনিবাস আচার্যের ভ্রাতুপুত্ৰী নারায়ণীর পুত্র বৃন্দাবন দাস নবীপে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নিত্যানদের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। তাহার রচিত “চৈতন্য ভাগবত ” ও " নিতানন্দ বংশমালা ” প্রসিদ্ধ পুস্তক। প্রথমোক্ত গ্রন্থ চৈতন্য দেবের জীবনী সম্বন্ধীয় বাংলা ভাষায় একখানি মূল্যবানু পুস্তক। নবদ্বীপের সহজে পাড়ায় সহজিয়া সম্প্রদায়ের একটি কেন্দ্র আছে। এই সম্প্রদায় বাউল সম্প্রদায়ের প্রকার ভেদ। ইহাদের বহু গুরু মানিতে বাধা নাই; ইহার বলেন, গুরু করব শত শত মন্ত্র করব সার। মনের আঁধার যে ঘুচাবে দায় দিব তার। নবদ্বীপের মতিলাল রায়ের যাত্রার দল আধুনিক কালে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। তিনি বহু পালা রচনা করিয়াছিলেন এবং নবদ্বীপের পণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট হইতে কবিরত্ন উপাধি লাভ করিয়াছিলেন।