পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে 6נכ হইতে এই তীৰ্থ বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করে। “সয়ের মুতক্ষরীণ ” নামক গ্রন্থে লিখিত আছে যে নবাব জাফর আলি খাঁ বা মীরজাফর অস্তিমকালে শান্তি লাভের আশায় তাহার দেওয়ান মহারাজ নন্দকুমারের অনুরোধে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত পান করিয়াছিলেন। নাটোরের সাধক রাজা রামকৃষ্ণ নিকটস্থ বড়নগর হইতে এখানে প্রায়ই আসিতেন এবং সাধন ভজনে মগ্ন থাকিতেন ; এখনও দুইখানি প্রস্তরখণ্ড তাহার আসন বলিয়া পরিচিত আছে। মুর্শিদাবাদ হইতে রাজধানী উঠিয়া বাওয়ার পর কিরীটেশ্বরীর অবস্থা ক্রমশ: শোচনীয় হইয়া পড়ে। বৰ্ত্তমানে লালগোলার মহারাজ; বহু অথব্যয়ে কিরীটেশ্বরীর মন্দিরের সংস্কার করিয়া দিয়াছেন। কিরীটেশ্বরীর মন্দির পশ্চিমম্বারী মন্দির মধ্যে কোন প্রতিমূৰ্ত্তি নাই। কেবল একটি উচচ প্রস্তরবেদী আছে। উচচ বেদীর উপর আর একটি ক্ষুদ্র বেদী আছে, উহাই দেবীর কিরীটরূপে পূজিত হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবেশ করিবার তোরণের দুই দিকে দুইটি শিবমন্দির আছে। উহার মধ্যে দক্ষিণ দিকের মন্দিরটি রাজা রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কথিত। নিকটেই আর একটি প্রাচীন মন্দিরে এক বৃহৎকায় বিদীর্ণ শিবলিঙ্গ অবস্থিত। উহাও রাজা রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত বলিয়। কথিত। প্রবাদ যে রাজা রাজবল্লভের পুত্র নিষ্ঠুরভাবে নিহত হইলে এই শিবলিঙ্গ আপনা হইতে বিদীণ হইয়া যায়। কিরীটেশ্বরীর ভৈরব বলিয়া যে মূত্তির পূজা করা হয় উহা প্রকৃত পক্ষে একটি বুদ্ধমূত্তি। গ্রামের মধ্যে গুপ্তমঠ নামে আর একটি নূতন মন্দিরেও কিরীটেশ্বরীর পূজার ব্যবস্থা আছে। পুরাতন মন্দির হইতে পূজারীরা দেবীর কিরীট এই নূতন মন্দিরে লইয়া আসিয়াছেন ; উহা সবৰ্বদা লাল কাপড়ে ঢাকা থাকে এবং দেখিতে নিষেধ । আজিমগঞ্জ জংশন-ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ১১০ মাইল দূর। ইহা একটি বাণিজ্য প্রধান স্থান। এই স্থানে দুধোরিয়া ও নওলাক্ষা উপাধিধারী দুইটি ধনী জমিদার বংশের বাস। বাংলা দেশের মধ্যে আজিমগঞ্জ ও গঙ্গার পূবর্বপারে স্থিত জিয়াগঞ্জে বহু জৈন বণিকের বসতি আছে। মুর্শিদাবাদের অভু্যদয়ের সময় এই সকল পশ্চিমদেশীয় বণিক বাংলায় আসিয়া স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজিমগঞ্জে অনেকগুলি জৈন মন্দির আছে। এখানকার বিখ্যাত ধনী ধনপৎ সিং নওলাক্ষার " গোলাপবাগ ’ নামক মনোরম উদ্যানবাটী বিশেষ দ্রষ্টব্য বস্তু আজিমগঞ্জ এককালে মুর্শিদাবাদের শহরতলী বলিয়া গণ্য হইত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম্ব-উস-সাণের নাম হইতে এই শহরের নাম আজিমগঞ্জ হয় । আজিমগঞ্জের এক মাইল উত্তরে অবস্থিত ভাগীরথীর পশ্চিমকলে বড়নগর একটি প্রসিদ্ধ স্থান। এখানে নাটোর রাজবংশের ‘গঙ্গাবাস ’ ছিল। বড়নগর মন্দিরে পরিপূর্ণ এই স্থানে রাণী ভবানীর অনেক পুণ্যকীৰ্ত্তি আছে। ভবানীশ্বর শিবের মন্দির বড়নগরের মধ্যে সবৰ্বাপেক্ষ বৃহৎ। বাংলা দেশে ইহার মত উচচ মন্দির অল্পই আছে। ইহার চারিদিকে বরাদ ও আটটি প্রবেশ পথ আছে। এই মন্দিরের কারুকার্য্য অতি সুন্দর। বারাণসী ধামেও রাণী ভবানী স্থাপিত ভবানীশ্বর আছেন; কথিত আছে দুইটি মন্দির একই কালে স্থাপিত। রাণী ভবানীর কন্যা তারাসুন্দরীর স্থাপিত গোপাল মন্দির ও ভবানীর প্রতিষ্ঠিত সিংহবাহিনী দশভূজা অন্নপূর্ণরূপিনী রাজরাজেশ্বরীর মন্দির, মদনগোপালের মন্দির ও চারি বাংলার মন্দির দ্রষ্টব্য বস্তু। মদনগোপালের মন্দিরটি বড়নগরের আদি রাজা উদয়নারায়ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। নবাব মুর্শিদ কুলীর সহিত বিবাদের ফলে উদয়নারায়ণ বড়নগর ত্যাগ করিয়া গিয়া বীরকিটিতে বাস করেন। তথায় নবাবের সহিত যুদ্ধে জাহার পরাজয় ও পতন হইলে বড়নগর নাটোরের জমিদারীভুক্ত হয়। রাণী ভবানী প্রতিষ্ঠিত