পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

) のい。 বাংলায় ভ্রমণ চারি বাংলার মন্দিরের প্রত্যেক খানি ইষ্টকের গাত্রে অতিসুন্দর কারুকার্য্যময় পৌরাণিক চিত্রাবলী উৎকীর্ণ আছে। চারিদিকে চারিটি বাংলা ধরণের শিবমন্দির পরস্পর সংলগ্ন হইয়া চারিবাংলার চারি বাংলা মুর্শিদাবাদ জেলার একটি প্রধান দ্রষ্টব্য। ১৭৯৫ খৃষ্টাব্দে এই বড়নগরেই রাণী ভবানী ৭৯ বৎসর বয়সে পরয়োক গমন করেন। তাঁহার দত্তকপুত্ৰ সাধক রাজ রামকৃষ্ণের পঞ্চমুঙী আসন এই স্থানে দৃষ্ট হয়। বড়নগরের অষ্টভূজ গণেশের মন্দির, রাণী ভবানীর গুৰু বংশীয়দের মঠবাড়ী, ব্ৰহ্মানন্দ নামক সন্নাসী প্রতিষ্ঠিত দয়াময়ী বাড়ীর অতি সুন্দর পাথরের কালী মুক্তি প্রভৃতিও উল্লেখযোগ্য। খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দী পর্য্যস্ত বড়নগর এ অঞ্চলের একটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। বড়নগরের বড় বাংলার সবর্বত্র আদৃত, ছিল। বহরমপুর খাগড়ার অধিকাংশ বাসন-নিৰ্মাতা বড়নগর হইতে আগত। - + আজিমগঞ্জ হইতে প্রায় ৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত গয়সাবাদ একটি প্রাচীন স্থান। এখানে বহু ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। আজিমগঞ্জের পরের স্টেশনে মহীপাল হলুই হইতে গয়সাবাদ ৪ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব অবস্থিত এবং ইহা প্রাচীন মহীপাল নগরীর অংশ বলিয়া অনুমিত হয়। পাঠান রাজত্বকালে গয়যাবাদ একটি সমৃদ্ধ স্থান ছিল। প্রবাদ বঙ্গেশ্বর গিয়াস-উদ-দীন কর্তৃক এই নগরের প্রতিষ্ঠা হয়। গৌড়ে গিয়াস উদ্দীন নামে দুইজন নৃপতি রাজত্ব করিয়াছিলেন। কেহ কেহ অনুমান করেন প্রথম গিয়াস উদ্দীনের সময়ে খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রাচীন মহীপাল নগরীর প্রস্তরাদি লইয়া নগরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে একটি দরগাহ আছে, উহার মধ্যে চারিটি সমাধি দৃষ্ট হয়। সবৰ্বাপেক্ষা উচচ সমাধিটি জনৈক ফকীরের সমাধি বলিয়া পরিচিত। দরগাহের সোপানগুলি প্রাচীন মহীপাল নগরীর প্রস্তর লইয়া নিৰ্ম্মিত। ইহার নিকট পালি ভাষায় খোদিত দুইটি প্রস্তর খণ্ড ও কয়েকটি স্বর্ণ মুদ্রা পাওয়া গিয়াছিল। গয়সাবাদে নশীপুর রাজবংশের নিৰ্ম্মিত একটি উচচ তুলসী বিহার মন্দির আছে। বৰ্ত্তমানে এখানে কোন উৎসব হয় না। মন্দিরটির এখন ভগ্নদশ . আজিমগঞ্জ জংশন হইতে একটি শাখ লাইন সাহেবগঞ্জ লুপ শাখায অবস্থিত বীরভূম জেলার বিখ্যাত স্বাস্থ্যনিবাস নলহাটি জংশন পর্যন্ত গিয়াছে। এই শাখা পথে সাগরদীঘি, মোরগ্রাম ও লোহাপুর উল্লেখযোগ্য স্থান। আজিমগঞ্জ জংশন হইতে সাগরদীঘি স্টেশন ৯ মাইল দুর। স্টেশন হইতে সাগরদীঘির দূরত্ব প্রায় এক মাইল। দীঘিটি প্রায় এক মাইল দীর্ঘ। কথিত আছে, যে এই দীঘি খুব গভীর করিয়া খনন করা সত্বেও উহাতে জল উঠে নাই। অত:পর রাজার প্রতি স্বপ্রাদেশ হয় যে সাগর নামক জনৈক কুম্ভকার যদি দীঘির মধ্য হইতে এক কোদাৰী মাটি তুলিয়া ফেলে, তবেই জল উঠিৰে। রাজার আদেশে সাগর এক কোদালী মাটি তুলে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই দীঘি জলে পূর্ণ হইয়া যাওয়ায় লোকেরা এই ফিঞ্চ জল ব্যবহার করে না বা ইহাতে মাছ ধরে না। তাহার এই দীঘিটিকে বিশেষ ভয়ের চক্ষে দেখেশ সাগর দীঘির উৎপত্তি সম্বন্ধে অধ্য প্রকার কাহিনীও প্রচলিত আছে। এক সময়ে রাজা মহীপাল তাঁহার পরিবারবর্গসহ স্বানান্তরে যাইবার পথে এখানে শিবির সন্নিবেশ করেন। রাজসৈন্য ও কর্মচারিগণকে দেখিয়া স্থানীয় দুইটি ব্রাহ্মণ বালক বিশেষ ভয় পাইয় এক বৃক্ষে জারোহণ করে। উহাদের মধ্যে একজন এতদূর ভয় পায় যে সে বৃক্ষশাখায় প্রাণত্যাগ করে।