পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(চ) সান্তাহার জংশন—বগুড়া—কাউনিয়া জংশন ও পাৰ্বতীপুর জংশন—লালমণিরহাট জংশন-- গোলকগঞ্জ জংশন। i. আদমদীঘি—কলিকাতা হইতে ১৭৮ মাইল। এই স্থানে বাবা আদম নামে একজন অদ্ভুত শক্তিসম্পন্ন ফকির বাস করিতেন। নাটোরের রাণী ভবানী তাহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন এবং এই স্থানে একটি দীঘি খনন করাইয়া ফকিরের নামে উৎসর্গ করেন ; দীঘির পাড়ে বাবা আদমের দরগাহে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেই পূজা দিয়া থাকেন। এই দীঘি ও বাবা আদমের নাম হইতে গ্রামটির নাম হইয়াছে আদমদীঘি। আদমদীঘির থানা হইতে ৩ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব দেওড়া গ্রামে একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। গ্রামের মধ্যে ৮৮টি পুরাতন জলাশয় আছে। দেওপাল নামক রাজার প্রাসাদ এখানে ছিল বলিয়া কথিত। আদমদীঘির পূর্ব পার্বে তালশন গ্রাম সারস্বত ব্যাকরণের টীকাকার পণ্ডিত রামনারায়ণ ভট্টাচার্য্যের জন্মস্থান। ইহার টীকার নাম “ কৃতভাষ্য ”। ইহার বংশীয় কৃষ্ণনাথ ভট্টাচাৰ্য্যও সারস্বত ব্যকরণের "ঋজুদীপিকা ও প্রভাবতী ’ নামে এক খানি টকা রচনা করেন। এই বংশে বহু পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । আদমদীঘি থানার অন্তর্গত ছাতিন বা ছাতিয়ান গ্রামে পুণ্যশ্লোকা রাণী ভবানীর জন্মস্থান। তিনি যে স্থানে জন্মগ্রহণ করেন সেই স্থানে তাহার মাতার নামে জয়দুর্গার মন্দির স্থাপিত আছে। ছাতিন গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী পীঠ এ অঞ্চলে পবিত্র বলিয়া পূজিত হয়। কথিত আছে, সিদ্ধেশ্বরী পুকুরের পাড়ে তপস্যা করিয়া আত্মারাম চৌধুরী মহাশয় রাণী ভবানীর মত কন্যারত্ন লাভ করেন। এই গ্রাম হইতে নীল সরস্বতী, বাসুদেব ও সূৰ্য্যমূৰ্ত্তি রাজশাহীর বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমতির চিত্রশালায় স্থান পাইয়াছে। নসরৎপুর—কলিকাতা হইতে ১৮০ মাইল। স্টেশনের দুই মাইল দক্ষিণে কড়ই বা কড়ইবদুল গ্রামে ময়মনসিংহ গৌরীপুরের জমিদার বংশের পূবর্ব বাস ছিল। আরও দুই মাইল দক্ষিণে ঝাকইর গ্রামে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার জমিদারগণের পূর্ব বাস ছিল ; তাঁহাদের প্রকাণ্ড প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ এখনও দৃষ্ট হয়। বাকইরের এক মাইল পূর্বদিকে কাঞ্চনপুর গ্রামে একঘর কায়স্থ জমিদারের বাস আছে। ইহার পার্বস্ব চাপাপুর গ্রামও বিশেষ প্রসিদ্ধ; তালোড়া স্টেশন হইতেও চাপাপুর যাওয়া যায়; তথা হইতে ৫ মাইল দূর। এ অঞ্চল এক কালে মজনু ফকির নামক দুৰ্দ্ধান্ত দসু্যর অত্যাচারে বিশেষ উপদ্র ত হইয়াছিল । ১৭৭৭ খৃষ্টাব্দে একদল নাগা সন্ন্যাসী পশ্চিম অঞ্চল হইতে ময়মনসিংহ গোয়ালপাড়া অভিমুখে যাইৰার সময়ে মজনু ফকিরের দলের সহিত সংঘর্ষে লিপ্ত হন। চাগাপুরের নিকট ফকিরকটি বিলের পাশে দুই দলে যুদ্ধ হয় এবং মজনু দলগুদ্ধ নিহত হয়। মজনু ফকিরের অত্যাচার বর্ণনা করিয়া “মজনুর কবিতা ” নামে একটি গাথা এতদঞ্চলে প্রচলিত আছে; তাহা হইতে কিছ নিয়ে প্রদত্ত হইল ;– * কালাস্তক যম বেটা কে বলে ফকির। যার ভয়ে রাজা কাপে প্রজা নহে স্থির। সাহেব সুবার মত চলন সুঠাম। আগে চলে বাগুবিন বাউল নিশান । বগুড়ার ইতিহাস, প্রভাস চন্দ্র সেন, ১৩৯ পৃষ্ঠা । তালোড়–কলিকাতা হইতে কিঞ্চিদধিক ১৮৬ মাইল। স্টেশনের ৪ মাইল উত্তরে দুপচাঁচিয়া একটি পুরাতন ও বদ্ধিষ্ণু গ্রাম। - -