পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে - ף צל এই সংবাদ রাজার কর্ণগোচর হইলে তাঁহারই জন্য ব্ৰহ্মহত্য ঘটয়াছে এইরুপ মনে করিয়া তিনি অত্যন্ত ম্ৰিয়মান হইয়া পড়েন। তৎকর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া পণ্ডিতগণ ব্যবস্থা দেন যে রাজা ও রাণী যতদূর পর্য্যন্ত একসঙ্গে পদব্রজে গমন করিতে পারবেন ততদূর পর্যন্ত একটি জলাশয় খনন করাইয়া দিলে ব্ৰহ্মহত্যার পাপ তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারবে না। প্রায় অৰ্দ্ধক্রোশ পৰ্য্যন্ত চলিবার পর রাণী ক্লান্ত হইয়া বসিয়া পড়েন। সুতরাং সাগরদীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় অৰ্দ্ধক্রোশ পরিমিত হয়। সাগরদীঘি পূর্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ, ইহার উত্তর ও দক্ষিণ পারে তিনটি করিয়া ছয়টি এবং পূর্ব ও পশ্চিম পারে দুইটি করিয়া চারিটি, মোট দশটি বাঁধাঘাট ছিল। ঘাটগুলির চিহ্ন এখনও কিছু কিছু বর্তমান আছে। এই দীঘির তীরে একখানি প্রস্তরফলকে একটি শ্লোক উৎকীর্ণ ছিল, উহা হইতে জানা যায় যে পালবংশীয় রাজা ব্ৰহ্মহত্যা পাপ ক্ষালনের জন্য ৭৪০ শকে ইহার প্রতিষ্ঠা করেন। এই দীঘি খনন করিতে ১০ হাজার কুলী, ৬ হাজার খনক, ১০ লক্ষ ইট ও ২ লক্ষ করিয়া তৃণ ও কাষ্ঠ লাগিয়াছিল এবং শত সহয় গরু, অসংখ্য শীতবস্ত্র, ধৌতবস্ত্র, সুবর্ণ ও ভূমি ব্রাহ্মণগণকে দান করা হইয়াছিল। প্রবাদ অনুসারে পালবংশীয় রাজা মহীপাল এই দীঘির প্রতিষ্ঠাতা। পাল বংশীয়গণ বৌদ্ধ হইলেও হিন্দু-ধর্মের প্রতি তাহদের শ্রদ্ধা ছিল। সাগরদীঘির পশ্চিমে লস্করদীঘি নামে আর একটি ক্ষুদ্র দীঘি আছে। সাগর দীঘি স্টেশনের ছয় মাইল দক্ষিণে গুড়ে ও পশলা নামে দুইটি গ্রামের নিকট দিয়া যে প্রকাণ্ড বিলটি দক্ষিণদিকে গিয়াছে তাহার নাম “ বসিয়ে ” বা বশিষ্ট বিল। এই বিলের কিয়দংশ “বশিষ্ঠ কুণ্ড ” নামে অভিহিত এবং তথায় বশিষ্ঠদেবের পূজা হয়। গ্রীষ্মকালে জল শুকাইলে এই বিলের স্থানে স্থানে শীতল জলের উৎস বাহির হয়। আজিমগঞ্জ জংশন হইতে মোরগ্রাম স্টেশন ১৬ মাইল দূর। মোরগ্রামের ১৬ মাইল দক্ষিণে খড়গ্রাম থানা পর্য্যস্ত রাস্ত আছে। খড়গ্রাম হইতে ৬ মাইল উত্তরে শেরপুর ও ৩ মাইল উত্তরে আতাই গ্রাম। মহারাজ মানসিংহের সহিত পাঠান বিদ্রোহিগণের শেরপুর আতাইএর যুদ্ধ মুর্শিদাবাদ জেলার একটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৫৭৬ খৃষ্টাব্দে গৌড়েশ্বর দায়ুদ খাঁর মৃত্যুর পর গৌড় রাজত্ব মুঘল অধিকারে আসিলেও অল্পকাল মধ্যে পাঠানগণ কত্নুর্থার নেতৃত্বে বিদ্রোহী হইয়া ওড়িষ্য জয় করেন। কতলুর্থার মৃত্যুর পর ওড়িষ্যা পুনরায় মুঘলদিগের অধিকারে আসে; কিন্তু মহারাজ মানসিংহ বাংলা ছাড়িয়া দক্ষিণাত্য অভিযানে বাহির হইলে পাঠাণগণ কতৃলখার পুত্র উদ্যমানের নেতৃত্বে পুনরায় বিদ্রোহী হন। মহারাজ মানসিংহকে বিদ্রোহ দমনের জন্য পুনরায় বাংলায় আসিতে হয়। শেরপুর ও আতাইএর মধ্যে অবস্থিত মরিচ বা মুৰ্চা নামক স্থানে উভয় পক্ষের ভীষণ যুদ্ধ হয় ; রিয়াজ-উস্-সলাতীন অনুসারে ২০ হাজার পাঠান সৈন্য এই যুদ্ধে যোগ দিয়াছিল। মানসিংহ এইবার পাঠানদিগকে পরাজিত করিয়া একেবারে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেন। যুদ্ধজয়ের জন্য মহারাজ মানসিংহ সম্রাট আকবরের নিকট হইতে সাতহাজারী-মনসবদার পদ প্রাপ্ত হন। মরিচার যুদ্ধপ্রান্তর এখনও গড়ের মাঠ নামে খ্যাত। আতাইএর গড়ের চিহ্ন এখনও দৃষ্ট হয়। আতাই গ্রামে যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিগণের সমাধি স্থান লোকের সম্মান আকর্ষণ করে। আতাইএর পার্শ্বস্ব নগর গ্রামে দাদাপীর নামক এক প্রসিদ্ধ ফকিরের আস্তানা আছে। প্রবা গৌড়েশ্বর হুসেন শাহ তাহার নানারূপ অদ্ভূত ক্ষমতার কথা শুনিয়া বুপ ও সনাতন সমভিব্যহারে তাঁহাকে দর্শন করিতে আসিয়াছিলেন। কথিত আছে, একবার এক ব্রাহ্মণ আত্মহত্যা করিতে উদ্যত হইলে দাদাপীর দেখিতে পাইয়া তাঁহাকে বাধা দেন এবং নিজের শিষ্য করিয়া লন; তদবধি সেই ব্রাহ্মণ শাহ মুরাদ নামে খ্যাত হন। তাঁহার সম্বন্ধে কাহিনী প্রচলিত আছে যে তিনি দাদাপীরের খাদ্য প্রস্তুত করিতেন এবং একবার অবিশ্রান্ত বর্ষার দুর্য্যোগে কাঠ না পাইয়া উনানের মধ্যে নিজের একখানি