পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে Yసి দরবারে একটি চাকুরি গ্রহণ করেন এবং শীঘ্রই উজির পদে উন্নীত হন। উত্তরকালে ৰাদশাহ হইয়া তিনি মুবুদ্ধি রায়কে এই গ্রাম নিষ্কর দিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু ব্ৰাহ্মণ সুবদ্ধি রায় মুসলমান বাদশাহের দান গ্রহণে সন্মত না হওয়ায় হুসেন শাহ এই গ্রামের খাজনা মাত্র এক আন ধার্য্য করেন। তদবধি গ্রামের নাম হয় একজান-চাঁদপাড়া । চৈতন্যচরিতামৃতে বর্ণিত আছে যে স্ববুদ্ধি রায় একবার একটি পুষ্করিণী খনন করাইবার সময় হুসেনকে উহার তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। এই কার্য্যে হুসেনের অবহেলা দেখিতে পাইয়া তিনি তাহার পৃষ্ঠে চাবুকের দ্বারা আঘাত করেন। এই আঘাতের চিহ্ন তাহার দেহে চিরদিনের জন্য থাকিয়া যায়। উত্তরকালে হুসেন বাদশাহ হইলে তাহার বেগম এই চিহ্ন দেখিয়া এবং উহার আনুপূবিক বিবরণ শুনিয়া ক্রোধে স্ববুদ্ধি রায়ের প্রাণনাশের জন্য হুসেনকে উত্তেজিত করেন। কিন্তু ধীরবুদ্ধি হুসেন শাহ তাহার বাল্যকালের প্রতিপালক ও অনুদাতার প্রাণনাশে অস্বীকৃত হন। ইহাতে বেগম তাহার জাতি নাশ করিবার জন্য হুসেনকে অনুরোধ করেন। কৃতজ্ঞ হুসেন তাহাতেও সম্মত না হইলে স্বয়ং বেগম সাহেবা স্ববুদ্ধি রায়ের প্রাণদণ্ডের আদেশ দিতে উদ্যতা হইলে অনন্যোপায় হুসেন অগত্যা করোয়া হইতে জল লইয়া সুবুদ্ধি রায়ের মুখে নিক্ষেপ করিতে আদেশ দেন। ইহাতে অত্যন্ত মৰ্ম্মাহত হইয়া সুবুদ্ধি রায় বিষয়সম্পত্তি ত্যাগ করিয়া কাশীধামে গমন করেন। তথাকার পণ্ডিতগণ র্তাহাকে তপ্ত বৃতপানে জীবন বিসর্জজন দেওয়ার ব্যবস্থা দেন। মুবুদ্ধি রায় কাশীতেই শ্রীচৈতন্যদেবের সাক্ষাৎ পান এবং তাহার পরামর্শ মত বৃন্দাবনে গমন ও নিরস্তর কৃষ্ণনাম জপে আত্মনিয়োগ করেন। সুবুদ্ধি রায় যে দীঘি খননের কার্য্যে হুসেন শাহকে নিযক্ত করেন, চাঁদপাড়ায় অদ্যাপি লোকে তাহা দেখাইয়া থাকে। ইহার নিকটেই সুবুদ্ধি রায়ের বাসভবনের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয় ; ইহা চাদরায়ের ভিটা বলিয়া পরিচিত । মণিগ্রাম স্টেশন হইতে ৫ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব ভাগীরথীর পূর্ববতীরে নশীপুর ও পানিশালা গ্রাম। ইহাদের নিকটস্থ রেয়াপুরে প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব পণ্ডিত নরহরিদাস চক্রবর্তী খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্মগ্রহণ করেন ; তাহার অপর নাম ঘনশ্যাম দাস। তিনি ভাল ভোগ রাধিতে পারিতেন বলিয়া রসুয়া নরহরি নামে অভিহিত হইতেন। তৎকৃত বিরাট গ্রন্থ “ভক্তিরত্নাকর” ও “নরোত্তমবিলাস’ বৈষ্ণৰ সমাজে আদৃত। সংস্কৃত ছন্দ শাস্ত্র অবলম্বনে বাংলায় “ছন্দ সমুদ্র” নামে একখানি পুস্তকও তিনি রচনা করেন। গণকর—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ১২৮ মাইল। স্টেশনের নিকটে বৌদ্ধযুগের বলিয়া অনুমিত ভীমের গদা নামে প্রস্তরস্তম্ভ দৃষ্ট হয়। স্টেশনের ৩ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ও আজিমগঞ্জ নলহাটি শাখার মোরগ্রাম স্টেশনের ৫ মাইল উত্তরে জঙ্গীপুর রোড নামক রাজ পথের পাশ্বে "শেখের দীঘি ” নামে একটি বৃহৎ জলাশয় আছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় সাগর দীঘি ও মহেশালের দীঘির পর এত বড় দীঘি আর নাই। দীঘির পার্শ্বস্থ গ্রামটিও শেখের দীঘি নামে পরিচিত। দীঘির পশ্চিম তীরে একটি প্রস্তর ফলক হইতে জানিতে পারা যায় যে গৌড়রাজ হুসেন শাহ ১৫১৪ খৃষ্টাব্দে এই দীঘি প্রতিষ্ঠা করেন। শেখের দীঘির ধারে আবু সৈয়দ ত্রিমিজ নামক একজন ফকিরের সমাধি আছে। ইহার নানারূপ অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল বলিয়া প্রকাশ। কথিত আছে, দীৰি খননের পর জল বাহির না হইলে হুসেন শাহের অনুরোধে ফকিরের আদেশ মত তাহার এক চেলা তাহার নিকট হইতে একটি দণ্ড লইয়া দীঘির গর্ভে পুতিলে জল বাহির হয়।