পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ సి তালোড়া স্টেশন হইতে ২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে কুন্দগ্রাম বা কুওগ্রামে “ অদ্ভুত রামায়ণের” গ্রন্থকার অদ্ভুতাচাৰ্য্য বা নিত্যানন্দ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া অনুমিত হয়। এই রামায়ণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ অপেক্ষা অনেক বৃহৎ। কাহালু—কলিকাতা হইতে ১৯২ মাইল। এখানকার আচার বংশীয় কায়স্থ জমিদারগণ প্রতিঠিত একটি পুরাতন শিবমন্দিরে এয়োদশটি গৌরীপাটের উপর শিব স্থাপিত। কাহালু হইতে অনতিদূরে এই থানার অন্তর্গত লক্ষীচাপড়া গ্রামে বিশিষ্ট নৈয়ায়িক পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় গদাধর ভট্টাচাৰ্য্য খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার নব্যন্যায়ের ব্যাখ্যা গদাধরী ” এখনও আদৃত হয়। তিনি বহু টকা প্রণয়ন করিয়াছিলেন, এগুলি “ গদাধরী পাতড়া " নামে পরিচিত। ইহার বংশীয় মহামহোপাধ্যায় ভুবন মোহন বিদ্যারত্ব ও মধুসুদন স্মৃতিরত্নও প্রসিদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। এ বগুড়া-কলিকাতা হইতে ১৯৯ মাইল দূর। জেলার সদর শহর বগুড়া করতোয়া নদীর পশ্চিমতটে অবস্থিত। বগুড়া আধুনিক শহর, ইহা ইংরেজগণ কর্তৃক ১৮২১ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এবং তখন হইতেই জেলার সদর শহর। বগুড়ার নবাববাটই এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য। বগুড়ার ফৌজদারি কাছারির নিকট শহরের বিভিন্ন অংশ হইতে সাতটি রাস্ত আসিয়া একত্রে মিলিত হইয়াছে। এই স্থানকে “সাতশড়ক ” বলে। বগুড়ার প্রায় সমুদায় সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি সাতশড়কের নিকটে অবস্থিত। বগুড়া শহরে একটি ধৰ্ম্মশালা ও কয়েকটি হোটেল আছে। বালকবালিকাদের জন্য কয়েকটি উচচ ইংরেজী বিদ্যালয় ও সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজ এখানে আছে। বগুড়ার প্রাস্তবাহিনী করতোয় নদী এককালে প্রবলস্রোতা ছিল এবং প্রাচীন বরেন্দ্র ও কামরূপ রাজ্যের সীমা নির্দেশ করিত। পূবেৰ এই নদীর খাত দিয়াই তিস্তার জলরাশি গিয়া পদ্মায় পড়িত। ১৭৬৭ খৃষ্টাব্দের ভীষণ বন্যায় তিস্ত গতি পরিবর্তন করিয়া পূবর্বদিকে গিয়া ব্ৰহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। এই বিপর্য্যয়ের পর হইতে করতোয়ার পতন আরম্ভ হয়। অমরকোষে ইহার অপর নাম সদানীরা বলা হইয়াছে এবং গঙ্গা-যমুনার ন্যায় এই নদীও পুণ্যতোয় । স্কন্দপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও যোগিনীতন্ত্রে ইহার উল্লেখ আছে। স্কন্দপুরাণে “করতোয় মাহাত্ম্য ” নামে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় আছে। করতোয়ার অপর নাম সদানীর নামে একটি নদীর উল্লেখ বেদের অনুগামী শতপথ ব্রাহ্মণেও দৃষ্ট হয়। স্কন্দপুরাণে করতোয়াকে “ পৌত্ত্বগণের প্লাবনকারিনী” বলা হইয়াছে। তাহাতে আরও বণিত আছে যে হরগেীরীর বিবাহকালে গিরিরাজ হিমালয়ের করশ্ৰষ্ট মন্ত্রপূত জল হইতে এই নদীর উৎপত্তি বলিয়া ইহার নাম “ করতোয় ”। স্কন্দপুরাণের মতে বর্ষাকালে অপর সকল নদ নদীই মলিনতা প্রাপ্ত হয় এবং তাঁহাদের পাবনী শক্তি আর থাকে না ; সেই সময়ে একমাত্র করতোয়াই বিশুদ্ধ সলিল বহন করে এবং তাহার পবিত্রতা অক্ষুন্ন থাকে। গঙ্গাস্নানের ন্যায় পঞ্জিকাগুলিতে করতোয়া-স্নানেরও বিভিন্ন যোগ উল্লিখিত থাকে। মহাভারতের বনপবেব লিখিত আছে যে করতোয়ায় স্নান করিয়া ত্রিরাত্রি উপবাস করিলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। স্কন্দপুরাণের পেীওখও অনুসারে পোষনারায়ণীযোগে বারাণসীতে পূজা করিলে ত্রিকোটি কুল উদ্ধার লাভ করে, কিন্তু করতোয় জলে পূজা করিলে তাহার দ্বিগুণ ফল পাওয়া যায়। করতোয়ার শীলাদ্বীপে স্নান করিলে আবার সর্বাপেক্ষা অধিক পুণ্যসঞ্চয় হয়। বগুড়ার নিকটবৰ্ত্তী বৃন্দাবন পাড়া নামক গ্রামে ক্ষেীণী-নায়ক ভীমের জাঙ্গালের কিয়দংশ বিদ্যমান আছে। বগুড়া হইতে মহাস্থানের পথে স্থানে স্থানে এই জাঙ্গাল বা প্রাচীরের চিহ্ন সুস্পষ্ট দেখিতে