পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে ১২৭ বীরকিটের গড় একটি উচচ টিলার উপর অবস্থিত ছিল। রাজা উদয়নারায়ণের সহিত রাজস্ব ব্যাপার লইয়া মুর্শিদকুলী খাঁর ঘোর বিবাদ উপস্থিত হয় এবং গ্রামের পশ্চিমদিকস্থ প্রাস্তরে উভয়পক্ষের যুদ্ধ হয়। বীরকিটের দুই মাইল পূবর্বদিকে জগন্নাথপুর গড়ে রাজা উদয়নারায়ণের সেনাগণ শিবির সন্নিবেশ করে এবং এই যুদ্ধে বহু লোকক্ষয় হয়। এই যুদ্ধ “জগন্নাথপুরের যুদ্ধ” নামে খ্যাত। নবাবের সেনাপতি গোলাম মহম্মদ এই যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করেন কিন্তু সপুত্র উদয়নারায়ণ নবাব সৈন্যের হস্তে বন্দী হন। যে স্থানে যুদ্ধ হইয়াছিল উহা আজও মুণ্ডমালা বা "মুড়মুড়ের ডাঙ্গ” নামে পরিচিত। তথায় বলুকাদির টুকর মধ্যে মধ্যে পাওয়া যায়। অপরাজিতাদেবীর প্রাচীন মন্দির রাজা উদয়নারায়ণ কর্তৃক সংস্কৃত হয়। রাজগা--খানা জংশন হইতে ৮৭ মাইল দূর। এই স্থান হইতে চার মাইল পশ্চিমে বীরনগর গ্রামে রাজবাড়ী নামে একটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। প্রবাদ, উহা বীরসেন নামক রাজার প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ। নিকটেই সীতাপাহাড়ী নামে একটি ছোট পাহাড় আছে। কথিত আছে যে বনবাসকালে সীতাদেবী ও শ্রীরামচন্দ্র এই পাহাড়ের গুহায় কিছুকাল বাস করিয়াছিলেন। পাকুড়–খানা জংশন হইতে ৯৪ মাইল দূর। ইহা সাঁওতাল পরগণা জেলার একটি মহকুমা। স্থানটি অতি স্বাস্থ্যকর ও সমৃদ্ধিশালী। এখান হইতে রেল লাইনের জন্য পাথর সংগ্ৰহ করা হয় । রাজা নামে পরিচিত একঘর জমিদার এখানে বাস করেন । এই শহরে তাঁহাদের বহু কীৰ্ত্তিকলাপ দেখিতে পাওয়া যায়। পাকুড়ের পর এই লাইন বারহাড়োয় জংশন, তিনপাহাড় জংশন, সকড়িগলি জংশন, ভাগলপুর জংশন ও জামালপুর জংশন হইয় প্রধান লাইনের কিউল জংশনে মিশিয়াছে। এই শাখার তিনপাহাড় জংশন হইতে ক্ষুদ্র একটি শাখা লাইন গঙ্গার তীরবর্তী রাজমহলে পৌঁছিয়াছে। রাজমহল এককালে বাংলার রাজধানী ছিল। ইহার পূর্ব নাম ছিল “আকৃ মহল ”। ষোড়শ শতাবদীর শেষভাগে ওড়িষ্যা বিজয় করিয়া প্রত্যাবৰ্ত্তনকালে মানসিংহ ১৫৯২ খৃষ্টাব্দে এই স্থানে বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। উত্তরকালে রাজধানী ঢাকায় লইয়া যাওয়া হয়। বৰ্ত্তমানে ইহা একটি নগণ্য পল্লী মাত্র। গ্রামের পশ্চিমদিকে প্রায় চার মাইল ব্যাপিয়া পুরাতন রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ জঙ্গলের দ্বারা আবৃত রহিয়াছে। জুম্মা মসজিদ, শাহ সুজা ও মীরকাসিমের প্রাসাদ, ফুলবাড়ী প্রভৃতির ধংসাবশেষ রাজমহলের পূর্ব গৌরবের স্মৃতি বহন করিতেছে। রাজমহল হইতে ৬ মাইল দক্ষিণ-পূবেৰ্ব উধুয়ানালায় ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর নবাব মীর কাসিমের সেনাবাহিনী ইংরেজদের নিকট সম্পূর্ণ বিধুস্ত হয় ; ইহার পর হইতে ইংরেজদের আধিপত্য স্বপ্রতিষ্ঠিত হয়। জঙ্গীপুর রোড স্টেশনও পূর্বভারত রেলপথের মুর্শিদাবাদ স্টেশন দ্রষ্টব্য।