পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে SJN দামলিপ্ত ছিল। দ্রাবিড় সভ্যতার প্রাধান্যে ঈর্ষান্বিত হইয়া আর্য্যগণ এই নগরের নাম “তযোলিপ্ত" বা অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত রাখেন বলিয়াও কেহ কেহ অনুমান করেন। পরে এইস্থানে আর্য্যসভ্যতার অভু্যদয় হইলে তাহারা তমোলিপ্ত নামের ঘূণাসূচক ব্যাখ্যারও পরিবর্তন করেন। দ্রাবিড় বা দামল জাতিকে আর্য্যেরা ঘৃণাভরে অসুর বলিতেন। সম্ভবতঃ তাহদের পরাজয়ের পর হইতেই তযোলিপ্ত “তাম্রলিপ্ত ” বা “তাম্রলিপ্তি ” নামে পরিচিত হয়। অসুরগণকে নিধনকালে কন্ধিরুপধারী বিষ্ণুর দেহ হইতে ঘৰ্ম্ম নির্গত হইয়৷ এই স্থানে পতিত হওয়ায় ইহার পবিত্রতা সম্পাদিত হয়, এইরুপ একটি কাহিনীও আছে। এই জন্য আর্ঘ্যগণ তমোলিপ্তের নাম দেন “বিষ্ণুগৃহ ”। মহাভারতে প্রাচীন তাম্রলিপ্ত রাজ্যের উল্লেখ আছে। অনেকের মতে এখানে মহাভারতোক্ত তাম্রধূজ রাজার রাজধানী ছিল। তাম্রধূজ পাণ্ডবগণের অশ্বমেধযজ্ঞের অশ্ব ধারণ করেন ও মহাবীর অর্জুনের সহিত তাহার ঘোরতর যুদ্ধ হয়। তাহার বীরত্বে প্রীত হইয়া কৃষ্ণ ও অৰ্জ্জুন তাহার সহিত সখ্যসুত্রে আবদ্ধ হন। রাজা তাম্রধবজের প্রতিষ্ঠিত বলিয়। কথিত কৃষ্ণাৰ্জ্জুনের মূf এখনও তমলুকের রাজবাড়ীতে জিষ্ণু হরি নামে পূজিত হইতেছে। প্রায় ত্রিশ একর জমির উপর প্রাচীন রাজবাটীর ভগ্নাবশেষ বিদ্যমান। কথিত আছে, রাজা তাম্রধবজ ও তাঁহার রাণী এক প্রকাও দীঘি খনন করাইয়া তাহার মধ্যে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করিবার সময় উভয়ে জলমগু হইয়া প্রাণত্যাগ করেন। ঐ দীঘিটি বর্তমানে “ খাটপুকুর ” নামে পরিচিত। জৈন কল্পসূত্র গ্রন্থ হইতে জানা যায় যে খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে ত্রয়োবিংশ তীর্থঙ্কর পাশ্বনাথ বৈদিক কৰ্ম্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুণড়, রাঢ় ও তাম্রলিপ্তে চতুর্যাম ধৰ্ম্ম প্রচার করেন। বৌদ্ধগ্রন্থের নানাস্থানেও তাম্রলিপ্তের নাম পাওয়া যায়। তৎকালে ইহা সমুদ্রতীরে অবস্থিত ছিল এবং তজ্জন্য ইহার অপর নাম ছিল বেলাকল। তাম্রলিপ্ত বন্দরের খ্যাতি তখন সমগ্র জগতে পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল। সে সময়ে এখানে জাহাজ নিৰ্ম্মিত হইত। কথিত আছে, যে বৎসর বুদ্ধদেব মহাপরিনিবৰ্বাণ লাভ করেন সেই বৎসর বাংলার রাজ সিংহবাহুর পুত্র বিজয়সিংহ তাম্রলিপ্তে নিৰ্ম্মিত জাহাজ লইয়া সিংহলদ্বীপ জয় করেন। বিজয়সিংহের নাম হইতেই সিংহল নামের উৎপত্তি হয়। প্রসিদ্ধ বৌদ্ধগ্রন্থ মহাবংশে উল্লিখিত আছে যে খৃষ্টপূবর্ব ৩০৭ অব্দে তাম্রলিপ্ত একটি প্রসিদ্ধ সামুদ্রিক বন্দর ছিল এবং ঐ স্থান হইতেই পবিত্র বোধিদ্রুম সিংহলে প্রেরিত হইয়াছিল। বৌদ্ধ ভারতের প্রধান সঙঘারাম তৎকালে তাম্রলিপ্তে অবস্থিত ছিল। সম্রাট অশোকের সময় তাম্রলিপ্ত মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হওয়ার পর সম্রাট অশোক সাম্রাজ্যের নানাস্থানে ধৰ্ম্মানুশাসন ও ধৰ্ম্মরাজিক প্রতিষ্ঠা করেন। অনুশাসনগুলি প্রস্তরস্তন্তে খোদিত হইত। তাম্রলিপ্তনগরেও একটি অশোকস্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। হর্ষবৰ্দ্ধনের রাজত্বকালে খৃষ্টীয় সপ্তম শতকে চৈনিক পর্য্যটক যুয়ানু চোয়াঙ উহা দেখিয়ছিলেন। -- প্রিয়দর্শী সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে যখন বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ পৃথিবীর দিকে দিকে বুদ্ধদেবের বাণী বহন করিয়া লইয়া যাইতেছিলেন, সেই সময়ে মহারাজ অশোকের পুত্ৰ মহেন্দ্র সিংহলরাজ তিষ্যের আমন্ত্রণে খৃষ্টপূর্ব ২৪৩ অব্দে ভিক্ষু ও ভিক্ষুনীসহ তাম্রলিপ্ত বন্দর হইতে সিংহলে যাত্র করেন। তৎকালে ভারতবর্ষ হইতে সিংহল, চীন ও জাপান প্রভৃতি দেশে যাইবার জন্য তাম্রলিপ্ত প্রধান বন্দর ছিল। - -