পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$O বাংলায় প্রমণ পাওয়া যায়। ভীমের জাঙ্গাল বগুড়া শহরের উত্তর-পূর্ব হইতে বৃন্দাবন পাণ্ডা, মহাস্থানগড়, চাদমুয়া, কীচক, শালদহ প্রভৃতি হইয়া ঘোড়াঘাট পর্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছিল। লাল মাটির এই জাঙ্গালটি মধ্যে মধ্যে এখনও ২০ ফুট পৰ্য্যন্ত উচচ। এই জাঙ্গাল বেষ্টিত স্থান ক্ষেীণীনায়ক ভীম প্রতিষ্ঠিত মহাস্থানের উপপুর ছিল বলিয়া কথিত। হান্টার সাহেব ইহাকে ইতালীয় রিং ফোর্ট বা অঙ্গুরীয়ক দুর্গের সহিত তুলনা করিয়াছেন; বিপদের সময়ে নিকটস্থ জনপদের প্রজাগণ কিছুদিনের জন্য ইহার মধ্যে আশ্রয় লইতে পারিত। বগুড়া হইতে ৫ মাইল দক্ষিণে মাঝিড়া গ্রামে উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে পণ্ডিতসা নামক একজন বিখ্যাত দ্যুর আড্‌ডা ছিল ; তাহার অত্যাচারে জনসাধারণ ব্যতিব্যস্ত হইয়াছিল। বগুড়ার উত্তরে কালীতলা হাট গ্রামেও তাহার একটি আভূডা ছিল। এই দুই গ্রামের কালী মুক্তির প্রতিষ্ঠা ও পূজা পণ্ডিত সা কর্তৃক প্রবত্তিত হয়। বগুড়া হইতে ৬ মাইল উত্তরে করতোয়ার নিকট লাহিড়ীপাড়া গ্রামে “বিষহরি পদ্মপুরাণ” রচয়িতা কবি জীবনকৃষ্ণ মৈত্র মহাশয়ের বাস ছিল। তিনি রাণী ভবানীর সমসাময়িক ছিলেন। বগুড়া অঞ্চলে প্রচলিত “যোগীর কাছ” নামক লোকগীতি জীবনকৃষ্ণের রচনা বলিয়া কথিত। বগুড়া হইতে ৭ মাইল উত্তর-পশ্চিমে যোগীরভবন নামক গ্রামে নাথপন্থী কাণফটু যোগীদের একটি দেবপুরী আছে। দেবপুরী মধ্যে ধৰ্ম্মভুঙ্গি বা ধর্মের মন্দির আছে এবং ইহার গদীঘরে একটি অগ্নিকুণ্ড সববদা জালাইয়া রাখা হয়। দেবপুরীর প্রাচীরের বাহিরে ভৈরব, দুর্গা, সবর্বমঙ্গলা, গোরক্ষনাথ প্রভৃতির মন্দির আছে। গোরক্ষনাথের মন্দিরের পার্বে নাথপন্থীদের গুরুর, তাহার শিষ্যের ও কুকুরের তিনটি সমাধি আছে। শিবরাত্রি ও জন্মাষ্টমীর সময় এখানে উৎসব হয়। বগুড়া হইতে ৬ মাইল পূর্বদিকে দুগৗহাটা গ্রামে মুসলমান যুগের একটি পুরাতন গড়ের "TTX - গড়-এবগুড়া হইতে ৭ মাইল উত্তরে করতোয় নদীর পশ্চিমতীরে বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়ের ধংশাবশেষ অৰস্থিত। বগুড়া হইতে মহাস্থান পর্য্যস্ত করতোয় নদীর তীর দিয়া পাকা ব্যস্ত আছে। বগুড়া হইতে মোটর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী বা এন্ধাযোগে মহাস্থানে যাওয়া যায় ৮ > - ঐতিহাসিকগণ কর্তৃক প্রমাণিত হইয়াছে যে মহাস্থান গড় প্রাচীন পুঞ্জ বা পৌণ্ডুরাজ্যের রাজধানী পুণ্ডবৰ্দ্ধন বা পুঞ্জনগর হইতে অভিনন। ঐতরেয় আরণ্যক, মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত, বিষ্ণুপুরাণ ও স্কন্দপুরাণ প্রভূতি প্রাচীন গ্রন্থে পুণ্ডদেশ ও পৌণ্ড্রজাতির উল্লেখ আছে। পুরাণে বর্ণিত আছে যে পুত্ত্বদেশের রাজা পৌঁওক বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের একজন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনি নিজেকে বাসুদেব বা ভগবানের অবতার বলিয়া প্রচার করিতেন এবং বাসুদেবত্ব জ্ঞাপক শঙখ, চক্র, গদা ও পদচিহ্ন ব্যবহার করিতেন। শ্রীকৃষ্ণের অপর নাম ছিল বাসুদেব এবং তিনিও এই সকল চিহ্ন ধারণ করিতেন। এই জন্য পুণ্ডুরাজ বাসুদেব অত্যস্ত ক্রুদ্ধ হইয়া শ্ৰীকৃষ্ণকে এই সকল চিহ্ন ব্যবহার করিতে নিষেধ করিয়া পাঠান। শ্রীকৃষ্ণ তাহার কথা উপেক্ষা করিলে তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া সসৈন্যে দ্বারকাপুরী আক্রমণ ও অবরোধ করেন। ভীষণ যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ কৌশল অবলম্বন করিয়া তাঁহাকে নিহত করেন। মহাভারতে বর্ণিত আছে যে পৌণ্ডদেশবাসিগণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দুর্য্যোধনের পক্ষভুক্ত হইয়া পাগুৰগণের বিরুদ্ধে তুমুল সংগ্রাম করিয়াছিল। ’