পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$38 বাংলার ভ্রমণ পরবর্তীকালে গুপ্তয়াবগণ দৰাজ শশাঙ্ক ও সম্রাট হর্ষবর্ধন তযপ্তি জয় করেন। চৈনিক পৰ্য্যটকগণের লিখিত বিবরণ হইতে তাম্রলিপ্ত সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায়। ४४ সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে ইতিহাস বিশ্ৰুত চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়ান ভারত ভ্রমণে আগমন করেন এবং তাহার ভ্রমণকালের শেষ দুই বৎসর ৪১১-৪১২ খৃষ্টাব্দ তাম্রলিপ্ত নগরে অবস্থান করিয়া বহু বৌদ্ধগ্রন্থের প্রতিলিপি ও দেবমুত্তির চিত্র গ্রহণ করেন। তিনি তাম্রলিপ্তে ২৪টি সঙঘারাম ও বহু বৌদ্ধশ্রমণ দেখিয়াছিলেন। এই স্থান হইতেই তিনি সিংহলে গমন করেন। য়ুয়ান চোয়াঙের কথা পূবেৰ্বই উল্লিখিত হইয়াছে। তিনিও তাম্রলিপ্তের বাণিজ্যসম্পদ দেখিয় বিসিমত হইয়াছিলেন। তাহার ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখিত আছে যে তিনি সমতট অর্থাৎ বৰ্ত্তমান ঢাকা হইতে পশ্চিমদিকে নয় শত “লি” অতিক্রম করিয়া তাম্রলিপ্তে উপস্থিত হন। তখন তাম্রলিপ্ত বঙ্গোপসাগরের উপকূলস্থ নিম্নভূমিতে অবস্থিত ছিল। রাজ্যের পরিধি ছিল ১৪০০ “লি" এবং রাজধানীর বিস্তার ১০ লি'র অধিক ছিল। তাম্রলিপ্তে তখন ১০টি বৌদ্ধ মঠ ছিল এবং এক হাজারের উপর বৌদ্ধ ভিক্ষ ছিলেন । নগরের এক প্রাস্তে প্রায় একশত ফুট উচচ একটি অশোকস্তস্ত ছিল। ইহা ছাড়া য়ুয়ান্‌ চোয়াঙ তাম্রলিপ্তে ৫০টি হিন্দু মন্দির দেখিয়াছিলেন। অধিবাসীরা পরিশ্রমী, উদ্যোগী, সাহসী ও সমৃদ্ধ ছিলেন। য়ুয়ান্‌ চোয়াঙ আরও লিখিয়াছেন যে ৬৩৫ খৃষ্টাব্দে তাম্রলিপ্ত সমুদ্রসলিলের দ্বারা প্লাবিত হইয়াছিল। ইহার পর ৬৭৩ খৃষ্টাব্দে ই-চিং নামক আর একজন বৌদ্ধ পর্য্যটক সেঙু চউ নগর হইতে সমুদ্রপথে ভাগীরথীর সঙ্গমস্থলে তাম্রলিপ্ত নগরে আগমন করেন। তিনি সংস্কৃত শিক্ষার জন্য কয়েক বৎসর নালন্দার মহাবিহারে অবস্থান করিয়া পুনরায় তাম্রলিপ্ত হইতে জাহাজযোগে দক্ষিণদিকে গমন করেন। তিনি লিখিয়াছেন যে তৎকালে তাম্রলিপ্ত রাজ্য উত্তর-দক্ষিণে চারিশত যোজন ও পূর্বব: পশ্চিমে তিনশত যোজনের অধিক ছিল। শ্রীনালন্দা ও “মহাবোধি ” হইতে ইহার দূরত্ব প্রায় ৬০ যোজন। ই-চিং তাম্রলিপ্তে পাঁচ ছয়টি ধৰ্ম্মমন্দির দেখিয়াছিলেন। তিনি এই স্থানের অধিবাসিগণকে ধনী বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ই-চিংয়ের পর আরও কয়েকজন বৌদ্ধ চৈনিক পর্য্যটক তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়া ভারতে আগমন করিয়াছিলেন এবং তাহারাও তাম্রলিপ্তের কথা সবিস্তারে বর্ণনা করিয়াছেন। চীন সম্রাটের আমন্ত্রণে আচাৰ্য্য বোধিধৰ্ম্ম ৫২৬ খৃষ্টাব্দে তাম্রলিপ্ত হইয়া সমুদ্রপথে ক্যান্টন যাত্রা করেন। তাহার কামায় বস্ত্র ও ভিক্ষা-ভাণ্ড জাপানের ইকরুণ মঠে বহুকাল সসম্মানে রক্ষিত্ত্ব ছিল। তিনি “প্রজ্ঞাপারমিতকৃদয়সূত্র ” ও “উষ্ণৗষবিজয়ধারিণী ” নামক বঙ্গাক্ষরে লিখিত দুইখানি গ্রন্থ সঙ্গে লইয়া গিয়াছিলেন। জাপানের প্রসিদ্ধ হোরিউজি মঠ হইতে ঐ গ্রন্থ দুইখানি আবিষ্কৃত হইয়াছে। একাদশ শতাব্দীতে ওড়িষ্যারাজ চোল গঙ্গদেব মেদিনীপুর জয় করেন। সেই সময় হইতে তাম্রলিপ্ত বন্দরের অধঃপতনের সূত্রপাত হয়। সমুদ্র ক্রমে ক্রমে এই স্থান হইতে বহুদূরে সরিয় গিয়া এই প্রসিদ্ধ বন্দরকে বর্তমানে একটি নগণ্য উপনগরে পরিণত করিয়াছে।