পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে ১৩৫ বর্শার পেগু জেলার কল্যাণী গ্রামে যে শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহা হইতে জানা যায় যে খৃষ্টীয় দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তাম্রলিপ্ত হইতে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ পেগুতে গিয়া ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়াছিলেন। - - তমলুকের বর্গভীমাদেবীর মন্দির একটি প্রাচীন কীৰ্ত্তি। ইহার শিল্পনৈপুণ্য অতি অপূবর্ব। সেই জন্য সাধারণ লোকের ধারণা যে ইহা বিশ্বকৰ্ম্মার নিৰ্ম্মিত। কবে এবং কাহার দ্বারা যে এই মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল তাহা জানা যায় নাই। রূপনারায়ণ নদের তটে একটি উচচ ভূখণ্ডে উন্নত পাদ-পীঠের উপর এই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরের উন্নত চুড়া বহুদুর হইতে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেকে অনুমান করেন, সম্রাট অশোক তাম্রলিপ্তে যে স্তুপ নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন উত্তরকালে তাহার উপরই এই মন্দিরটি নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। মন্দিরটির বহির্ভাগের গঠনপ্রণালী বাংলার স্থাপত্যরীতি হইতে পৃথক। ভিতরের গঠনপ্রণালী বৌদ্ধ বিহারের সদৃশ ও বুদ্ধগয়ার মন্দিরের অনুরূপ। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন যে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব লুপ্ত হইলে কোন পরিত্যক্ত বৌদ্ধ বিহারই হিন্দুমন্দিরে পরিণত হয়। ৩০ ফুট উচচ বুনিয়াদের উপর মূল মন্দিরটি প্রায় ৬০ ফুট উচচ । অভ্যস্তরে প্রবেশ করিলে মনে হয় যে ছাদটি যেন একখও অতি বৃহৎ শ্বেতপ্রস্তরের চাপ হইতে কুঁদিয়া তৈয়ারী করা হইয়াছে। খাজ কাটিয়া প্রস্তর খোদাই করা হইয়াছে বলিয়াই ইহার শোভ হইয়াছে অতি অনুপম এবং কোথাও জোড় আছে বলিয়া ধরা যায় না। মূল মন্দিরটির সম্মুখে “ যজ্ঞমন্দির” নামে অরি একটি মন্দির আছে। এই দুইটি মন্দির “ জগমোহন” নামে একটি খিলানের দ্বারা সংযুক্ত। যজ্ঞমন্দিরের সম্মুখে বলিদান ও গীতবাদ্যাদির জন্য, “নাটমন্দির” আছে। উহার সম্মুখে তোরণ ও নহবতখানা। একখণ্ড প্রস্তরের সন্মুখভাগ কুঁদিয়া বর্গভীমা দেবীর মুক্তি নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। এই ধরণের নিৰ্ম্মাণপ্রণালী বড় একটা দেখা যায় না। মুক্তিটি উগ্রতার মুক্তির অনুরূপ। দেবীমুক্তির বেদীর নিয়ে সোপানশ্রেণীর মধ্যে “ভূতিনাথ ” ভৈরব অবস্থিত। বর্গভীমা দেবী বিশেষ জাগ্রত দেবতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। কথিত আছে বহুদেবমুক্তি-ভগ্নকারী কালাপাহাড় ওড়িষ্যা বিজয় অভিযানের পথে এই দেবীকে দর্শন করিয়া বিশেষ মুগ্ধ হন এবং ফারসীতে একখানি দলিল লিখিয়া দিয়া যান। “বাদশাহী পাঞ্জ ’ নামে অভিহিত দলিলখানি আজিও বর্গভীমার পূজকগণের নিকট আছে। দুৰ্দ্দান্ত মহারাষ্ট্ৰীয় বর্গীগণ নিম্নবঙ্গের সবর্বত্র নিদাৰুণ অত্যাচার করিলেও এই দেবীর ভয়ে তমলুকে কোন প্রকার অত্যাচার করিতে সাহস করিত না। বরং এই দেবীকে তাহারা বহু অলঙ্কারে সাজাইয়া ষোড়শোপচারে পূজা দিত। বর্গভীমাদেবী একানুপীঠের অন্তর্গত না হইলেও অনেকে ইহাকে উপপীঠ মনে করেন এবং সেই জন্য এই মন্দিরের চতুৰ্দ্দিকস্থ একটি নিদিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে তাহারা অপর কোন দেবী প্রতিমা গঠন করিয়া পূজা করেন না। বর্গভীমা দেবীর প্রকাশ সম্বন্ধে তিনটি কিংবদন্তী আছে। প্রথম কিংবদন্তীর মতে সুপ্রসিদ্ধ ধনপতি সদাগর যখন সিংহলে বাণিজ্য-যাত্রা করেন তখন তাম্রলিপ্তে তিনি এক ব্যক্তির হস্তে একটি মুৰণ ভুলার দেখিয়া সে উহা কোথায় পাইল তাহ জিজ্ঞাসা করেন। সে উত্তর দেয় যে নগরের প্রাস্তবত্তা অরণ্যে এক অদ্ভুত কুণ্ড আছে। উহার জলে পিতলের জিনিস ডুবাইলে তাহা সোণার হইয়া যায়। এই কথা শুনিয়া ধনপতি তাম্রলিপ্তের বাজারের সমস্ত পিতলের জিনিস কিনিয়া সেই