পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে 58.5 সেকন্দর শাঁ যখন গৌড়ের রাজা সে সময়ে হিজলীগড়ে হরিদাস নামে এই প্রবল পরাক্রান্ত হিন্দু রাজা ছিলেন। দিল্লীর সম্রাটের সহিত যুদ্ধকালে সেকন্দর শ৷ ইহার সাহায্য প্রার্থনা করেন; কিন্তু ইনি সাহায্য করিতে সম্মত হন নাই। সে কারণ সেকন্দর হরিদাসের বিরুদ্ধে দক্ষ সেনানায়কের - নেতত্বে পাঠান সৈন্য প্রেরণ করেন। বীর হরিদাস পাঠান সৈন্যকে পরাজিত ও বিপর্য্যস্ত করিয়া হিজলী হইতে তাড়াইয় দেন । মুসলমান যুগে হিজলী “ মসনদ-ই-আলা ” উপাধিধারী একটি নবাব বংশের রাজধানী ছিল। নবাববংশের প্রায় সকল কীৰ্ত্তিই সাগরগর্ভে বিলীন হইয়াছে। নিকটস্থ জঙ্গল মধ্যে হিজলীর পুরাতন দুর্গের ধবংসাবশেষ এবং রসুলপুর নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি জীর্ণ মসজিদৃ অতীত দিনের সাক্ষ্য দিতেছে ; এই মসজিদটির তিনটি গম্বুজ আছে এবং ইহা বেশ উচচ। বঙ্গোপসাগর দিয়া কলিকাতা যাতায়াতের পথে ইহা বহুদূর হইতেই নজরে পড়ে। ইহার প্রাঙ্গনে হিজলী রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা তাজ খাঁ মসনদ-ই-আলা ও তাহার পরিবারস্থ কয়েকজনের কবর আছে। তাজ খার পূবৰ্ব জীবন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জ্ঞাত হওয়া যায় না। একটি প্রস্তরলিপি হইতে জানা যায় ষে ১৫৫৫ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয়। এই বংশের ঈশা খাঁ মসনদ-ই-আলা বিশেষ খ্যাতিমান ছিলেন। তাহার বহু সৈন্য সামস্ত ছিল এবং তিনি বঙ্গের প্রসিদ্ধ দ্বাদশ ভৌমিক বা “বার ভুইয়ার ” অন্যতম ছিলেন। যশোহর রাজ প্রতাপাদিত্য স্বীয় পিতৃব্য মহারাজ বসন্ত রায় ও তাঁহার পুত্রগণকে হত্যা করিলে বসন্তরায়ের কনিষ্ঠ পুত্র রাঘব রায় (কচুরায়) পিতৃবন্ধু ঈশা খাঁর আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই উপলক্ষে প্রতাপ হিজলী আক্রমণ করেন। কয়েকদিন বীর বিক্রমে যুদ্ধ করিবার পর ঈশা খাঁ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন। হিজলীর অপর পারে রসুলপুর নদীর যে স্থানে প্রতাপের রণতরী সমূহ ছিল, তাহা আজও "প্রতাপপুর ঘাট” নামে পরিচিত। ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর হিজলী প্রথমে প্রতাপাদিত্যের ও পরে মুঘলদের অধিকারভুক্ত হয়। কেহ কেহ এই ঈশা খাকে সোণারগাএর ঈশা খাঁ হইতে অভিন্ন মনে করেন। আবার কাহারও কাহারও মতে ইহারা দুই জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি । - ১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে হিজলীতে ঈসই ইণ্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যের সহিত নবাব সৈন্যের যুদ্ধ হয়। ইংরেজের হাত হইতে হিজলীর পুনরুদ্ধারের জন্যই এই যুদ্ধ সংঘঠিত হইয়াছিল। নবাবী ফৌজ প্রথমে দরিয়াপুর গ্রামে ছাউনি করে, পরে ২৮এ মে রসুলপুর নদী পার হইয়া হিজলীর দক্ষিণে এক অরণ্য মধ্যে সৈন্য সমাবেশ করে। কোম্পানির পক্ষে সৈন্য পরিচালনা করিয়াছিলেন স্ববিখ্যাত জব চার্ণক। উভয় পক্ষের মধ্যে ছোট খাট যুদ্ধ চলিতে থাকে এবং তাহাতে প্রতিদিনই ইংরেজের সৈন্যক্ষয় হয়। ইতিমধ্যে ১লা জুন ইংলণ্ড হইতে কয়েকজন সৈনিক আসিয়া পৌছিল। জব চাণৰ তখন এক কৌশল অবলম্বন করিলেন। মুসজ্জিত গোরা সৈন্যগণ কুচকাওয়াজ করিয়া হিজলীর দুর্গে প্রবেশ করিবার পর তিনি এক গুপ্তপথে তাহাদিগকে পুনরায় জাহাজঘাটায় পঠাইয়া দিলেন। তাহারা পুনশ্চ মুসজ্জিত হইয়া পুনঃ পুন: দুর্গ ও জাহাজঘাটায় যাতায়াত করিতে লাগিল। এই কৌশল বুঝিতে না পারিয়া নবাবী সৈন্য মনে করিল ইংলণ্ড হইতে না জানি কত সৈন্য আসিয়াছে। ভীত নবাব সেনাপতি সন্ধির প্রস্তাব পাঠাইতেই চার্ণক সানন্দে তাঁহাতে স্বীকৃত হইলেন এবং ২০এ জুন তারিখে সন্ধিপত্র লিখিত হইবার পর তাহার দলবল লইয়। উলুবেড়িয়ায় চলিয়া গেলেন।