পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্বববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ SS প্রাচীন মানচিত্রে মহাস্থান গড়ের নাম "মুস্তানগড়’ রূপে লিখিত আছে। এই স্থানের “মহাস্থান " নাম হওয়া সম্বন্ধে স্কন্দপুরাণে একটি সুন্দর আখ্যায়িক আছে। বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম তপস্যা করিবার জন্য একটি উপযুক্ত ও শাস্ত্রানুসারে চতুঃষষ্টি দোষ বিবর্জিত স্থানের অনুসন্ধান করিতে করিতে পুণ্যতোয় করতোয়ার তীরবর্তী এই স্থানটিকে আবিস্কার করেন এবং এই স্থানে তপস্যার স্বারা সিদ্ধিলাভ করিয়া ইহার “ মহাস্থান ’ নাম দেন । সমরণাতীত কাল হইতে মহাস্থান তীর্থরূপে গণ্য হইয়া আসিতেছে। উত্তরকালে এই স্থানে পুওরাজ্যের রাজধানী স্থাপিত হইলে ইহা পুঞ্জনগর, পুঞ্জবৰ্দ্ধন, পৌণ্ডবৰ্দ্ধন নামে পরিচিত হয়। পুণ্ডবৰ্দ্ধন অতি সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল। বুদ্ধদেব পুণ্ড্রবন্ধনে আগমন করিয়াছিলেন। সম্প্রতি মহাস্থানে আবিস্কৃত মৌর্য্যযুগের একটি শিলালেখ হইতে জানা যায় যে খৃষ্টপূর্ব চতধ শতাব্দীতে পুড়িবদ্ধন মৌর্ধ্য সাম্রাজ্য ভুক্ত ছিল। ইহার শাসনকর্তা মহামাত্য নামে অভিহিত হইতেন। ৬৪০ খৃষ্টাব্দে স্বপ্রসিদ্ধ চৈনিক পর্য্যটক য়ুয়ান চোয়াং কামরূপ হইতে পৌণ্ড্রবন্ধনে আগমন করেন। তাহার লিখিত বিবরণ হইতে জানা যায় যে তৎকালে করতোয় অতি বিস্তৃত নদী ছিল। তিনি ইহাকে ক’লো-তু বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। রাজধানী পুঞ্জবন্ধনের পরিধি ছিল ৩০ লী বা ৫ মাইল । তাহার বর্ণনায় পুনু-না-ফা-তান-না বা পৌণ্ডবৰ্দ্ধন গঙ্গার উপরিস্থ রাজমহল হইতে ৬০০ লী বা ১০০ মাইল পূবর্বদিকে। দুইটি স্থানের বর্তমান অবস্থানের সহিত ইহা আশ্চৰ্য্যরূপে মিলিয়া যায়। ইহা হইতে প্রমাণ করা সহজ হইয়াছে যে মহাস্থান গড়ই প্রাচীন পৌণ্ডবন্ধন। তিনি আরও লিখিয়াছেন যে পুঞ্জবৰ্দ্ধন হইতে ৯০০ লী বা ১৫০ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব যাইয়া কামরুপ রাজ্যে গমন করিয়াছিলেন। স্কুয়ান চোয়াং এই স্থানে ২০টি বৌদ্ধসংঘারাম, একশত হিন্দু-মন্দির ও ছয় হাজার বৌদ্ধশ্রমণকে দেখিয়াছিলেন। তিনি সন্ন্যাসীদের বেশীরভাগ দিগম্বর জৈন নিগন্থ সম্প্রদায়ভুক্ত দেখিয়াছিলেন। তিনি এই নগরীকে জনবহুল, বহু পুষ্করিণী ও পুষ্পোদানসমন্বিত এবং অধিবাসিগণকে অর্থশালী ও বিদ্যানুরাগী বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন। অধিবাসীরা শৈৰ, বৈষ্ণব, স্কন্দ বা কাত্তিকের উপাসক ও বৌদ্ধ, এই কয় সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিলেন। পুরুষেরা টুপী ব্যবহার করিতেন ও স্ত্রীলোকগণ স্কন্ধ পর্য্যস্ত বস্ত্রাবৃত করিয়া রাখিতেন। তৎকালে পুওদেশে বহু পরিমাণে দধি, দুগ্ধ, ধৃত ও নৰনী পাওয়া যাইত এবং অধিবাসিগণের স্বাস্থ্য খুব ভাল ছিল। মন্দির গুলির মধ্যে গোবিন্দ অর্থাৎ বিষ্ণু ও স্বদের মন্দিরই সবর্বপেক্ষ বড় ছিল। কথিত আছে, বুদ্ধদেব ছাড়া জৈন তীর্থঙ্কর পার্বনাথ স্বামীও ধর্মপ্রচারের জন্য পুঞ্জবৰ্দ্ধন নগরে পদার্পণ করিয়াছিলেন। - সুপ্রসিদ্ধ রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে বণিত আছে যে অষ্টম শতাব্দীর শেষ ভাগে কাশমীররাজ জয়াপীড় পুঞ্জবৰ্দ্ধনের ঐশ্বর্ঘ্যের খ্যাতি শুনিয়া তাহা স্বচক্ষে দেখিবার জন্য ছদ্মবেশে এই নগরীতে উপস্থিত হন। তৎকালে জয়ন্ত পুওবন্ধনের রাজা ছিলেন। রাজধানীর ঐশ্বৰ্য্য দেখিয়া জয়াপীড় বিসিমত হন। একদিন রাত্রে তিনি স্কন্দমন্দিরে নাচগান শুনিতেছেন, এমন সময়ে প্রধান নৰ্ত্তকী কমলা দেখিতে পাইলেন যে তিনি অভ্যাসবশত: নিজের অজ্ঞাতসারে কাহারও নিকট হইতে যেন কিছু গ্রহণ করিবার অভিপ্রায়ে মধ্যে মধ্যে পশ্চাৎদিকে হস্ত প্রসারণ করিতেছেন। বুদ্ধিমতী কমলা বুঝিলেন যে ইনি নিশ্চয়ই কোন ছদ্মবেশধারী অভিজাত ব্যক্তি। জয়াপীড়কে কিছ না বলিয়া কমলা একখানি সুবৰ্ণ পাত্রে করিয়া তামুল লইয়া জয়াপীড়ের পশ্চাতে গিয়া দাড়াইলেন। এবার হস্ত প্রসারণ করিবামাত্রই জয়াপীড় তামুল প্রাপ্ত হইলেন ও হঠাৎ পিছন ফিরিবামাত্র অপৰূপ মুন্দরী কমলার সহিত তাহার দৃষ্ট বিনিময় হইল। কমলার সৌজন্যে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাহার গৃহে আতিথ্য স্বীকার করিয়া তথায় বাস করিতে লাগিলেন। এই সময়ে রাজধানীর নিকটবৰ্ত্তী স্থানে একটি ভীষণ