পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 8b. বাংলায় ভ্রমণ Battalion মেদিনীপুরে বিদ্রোহ করিয়া বৰ্দ্ধমানের দিকে চলিয়া গিয়াছে। যাহা হউক সৌভাগ্য ক্রমে বিদ্রোহ হয় নাই | পরিশেষে এই পলটন স্থানান্তরিত হওয়াতে উদ্বেগের সকল কারণ চুকিয়া গেল । মেদিনীপুরে যে বিদ্রোহ হয় নাই তাহার প্রধান কারণ কর্ণেল সাহেবের রাজপুত উপপত্নী। তাহার কথা সিপাহীরা বড় মান্য করিত। বিদ্রোহের প্রস্তাব হইলে সে সিপাহীদিগকে তাহা করিতে নিবারণ করিত । " মেদিনীপুর শহরের অন্তর্গত নরমপুরে একটি অসমাপ্ত মসৃজিদ আছে। কথিত আছে শাহজাদা পুরম (সম্রাট শাহজাহান) দক্ষিণাত্য হইতে ফিরিবার পথে যে দিন মেদিনীপুরে অবস্থান করিয়াছিলেন সে দিন ঈদু পবর্ব থাকায় তাহার নমাজের জন্য একদিনেই এই মসজিদটি নিৰ্ম্মিত হয়। সময়ের অল্পতার জন্য ইহার নির্মাণ সম্পূর্ণ হইতে পারে নাই। খুরম ইহাতেই নমাজ পড়িয়াছিলেন। এই ঘটনার সমারকরূপে মসজিদৃটিকে অসমাপ্ত অবস্থায়ই রাখা হইয়াছে। জয়ানন্দের চৈতন্য মঙ্গলে বর্ণিত আছে যে শ্রীচৈতন্যদেব ওড়িষ্যা যাইবার সময় মেদিনীপুরের পথে গমন করিয়াছিলেন। কর্ণগড়—মেদিনীপুর হইতে ৬ মাইল উত্তরে শালবনি থানায় অবস্থিত কর্ণগড় একটি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ স্থান। এখানে সিংহ উপাধিধারী এক রাজবংশের রাজধানী ছিল। এই বংশীয় রাজা মহাবীর সিংহের নিৰ্ম্মিত একটি দুর্গের ভগ্নাবশেষ এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। এই দুর্গের মধ্যে একটি সরোবর ও তন্মধ্যস্থ একটি প্রস্তর নিৰ্ম্মিত প্রাসাদ এখানকার দ্রষ্টব্য বস্তু। প্রবাদ, কর্ণগড়ে দাতাকর্ণের বাট ও ভোজরাজার রাজধানী ছিল। কেহ কেহ অনুমান করেন যে উৎকলাধিপতি কর্ণকেশরী এখানে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। কবি সন্ধ্যাকর নন্দী প্রণীত “ রামচরিতম্” নামক সংস্কৃত কাব্যে কর্ণকেশরীর উল্লেখ আছে। বিখ্যাত “শিবায়ন " প্রণেতা রামেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য বরদা ঘাটালের রাজা শোভাসিংহের অত্যাচারে স্বীয় জন্মভূমি যদুপুর গ্রাম ত্যাগ করিয়া কর্ণগড়ে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই গড়টি প্রায় দুই মাইলব্যাপী ছিল এবং সদর ও অন্দর দুই মহালে বিভক্ত ছিল। গড়ের তিন দিকে জঙ্গল এবং পূবর্বদিকে কৃষিক্ষেত্র। জঙ্গল হইতে একটি নদী বাহির হইয়া গড়ের দুইদিক দিয়া প্রবাহিত হইয়া পুনরায় একত্র হইয়াছে । ইহাতে গড়ের একটি স্বাভাবিক পরিখার স্বষ্টি হইয়াছে। গড়ের দক্ষিণদিকে অনাদিলিঙ্গ দণ্ডেশ্বর শিব ও মহামায়ার মন্দির অবস্থিত। প্রস্তরনিৰ্ম্মিত এই মন্দির দুইটি অতি দৃঢ় ও ইহার নির্মাণকৌলশও অতি সুন্দর। মহামায়ার মন্দিরে যে পঞ্চমুণ্ডী যোগাসন আছে, প্রবাদ যে তথায় রামেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য ও কর্ণগড়ের রাজা যশোবন্ত সিংহ সিদ্ধ হইয়াছিলেন । এই মন্দিরের তোরণ-স্বারে “ যোগী ঘোপা ’ বা যোগমণ্ডপ নামে যে ত্রিতল পাথরের মন্দির আছে তাহাও দেখিবার মত বস্তু । . মেদিনীপুর হইতে এক মাইল উত্তরে রাণীগঞ্জ রাস্তার নিকট আবাসগড়ের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয় । কর্ণগড়ের পঞ্চম রাজা রামসিংহ সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগে ইহা নিৰ্ম্মাণ করেন । কর্ণগড়ের শেষ রাণী শিরোমণি ও নাড়াজোলের রাজা মোহনলাল খাঁ ইহার বহু উন্নতি সাধন করিয়াছিলেন। গড়ের ভিতরে প্রকাও দীঘির তীরে নবচুড়া সমন্বিত একটি পুরাতন মন্দির আছে। এই গড়ে দশভূজা, জয়দুর্গা: রাধাশ্যাম, শ্যামসুন্দর ও রাজরাজেশ্বরী প্রভৃতি অপরাপর বিগ্রহও আছেন। ।