পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে )8。 বগীর উপদ্রবের ন্যায় চুয়াড় উপদ্রবও মেদিনীপুর জেলাকে বিশেষ বিপৰ্য্যস্ত করে। চুয়াড়গণ জেলার জঙ্গল মহালের অধিবাসী বন্যজাতি। শিকার, দস্থ্যবৃত্তি ও জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কার্য্য করাই তাঁহাদের পেশা ছিল। ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে মেদিনীপুর ইংরেজের অধিকারে আসিলে জমিদারগণকে বশে আনিবার চেষ্টা চলিতে থাকে। ১৭৬৬ খৃষ্টাব্দে কোম্পানি জঙ্গল মহালের দুর্গগুলি ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য সৈন্য প্রেরণ করিতে মনস্থ করেন। সৈন্য সংগ্রহে কোম্পানির কিছু বিলম্ব ঘটে, কিন্তু ইতিমধ্যে এই কথা প্রচারিত হওয়ায় ১৭৬৭ খৃষ্টাব্দে ২০০ মাইল ব্যাপী জঙ্গল মহালে ঘোর বিদ্রোহ ঘোষিত হয়। লেফুটেন্যান্ট ফাগুসন সাহেবকে এই বিদ্রোহ দমন করিতে বিশেষ কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। চুয়াড়গণের বিষাক্ত শরে ও ব্যাধিতে অনেক ইংরেজ সৈন্যের প্রাণহানি হয়। ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে চুয়াড়গণ পুনরায় বিদ্রোহী হয়। মেদিনীপুর শহরের নিকটবৰ্ত্তী আবাসগড় ও কর্ণগড়কে কেন্দ্র করিয়া তাহারা নানাস্থানে আক্রমণ চালাইতে থাকে। এই বিদ্রোহ দমন করিবার জন্য কোম্পানি কর্ণগড়ের রাণী শিরোমণিকে বন্দিনী করেন । চুয়াড়দিগের সমুদয় আডডা ভাঙ্গিয়া দিয়া এই বিদ্রোহ দমন করা হয়। জায়গীর জমি কোম্পানি কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হইবার ফলেই চুয়াড়েরা বিদ্রোহী হইয়াছিল। গোদাপিয়াশাল—খড়গপুর হইতে ১৩ মাইল। এখানে কুমারগড় নামক একটি দুর্গের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। উহা চাঙ্গুয়ালরাজ বীরসিংহের বংশধর রাজা কুমারসিংহ কর্তৃক নিৰ্ম্মিত। এই বংশীয় রাজা জামদার সিংহ নিৰ্ম্মিত জামদারগড়ের ভগ্নাবশেষ গোদাপিয়াশালের নিকটে অবস্থিত । এই স্থানেই মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানি তাঁহাদের গোদাপিয়াশাল কুঠি নিৰ্মাণ করেন। চন্দ্রকোণ রোড—খড়গপুর জংশন হইতে ৩০ মাইল দূর। স্টেশন হইতে চন্দ্রকোণ শহর মোটরবাসযোগে ২১ মাইল। ইহা ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত। প্রবাদ যে বহুকাল পূবেৰ্ব এখানে চন্দ্রকেতু নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁহারই নামানুসারে চন্দ্রকোণ নাম হইয়াছে। রাজবাটীর ধবংসাবশেষ এখনও চন্দ্রকোণার প্রাচীনত্বের পরিচয় প্রদান করে । কথিত আছে, এককালে চন্দ্রকোণ নগরে বাহান্নটি বাজার ছিল। ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে অঙ্কিত ভ্যালেণ্টাইনের মানচিত্রে চন্দ্রকোণাকে (Sjandercona) শিলাবতী নদীর তীরে একটি সমৃদ্ধ নগর বলিয়া দেখান হইয়াছে। চন্দ্রকোণার দক্ষিণে প্রাচীন হিন্দুরাজগণের দ্বাদশদ্বারী বা “বার দুয়ারী ” নামক গড়ের ভগ্নাবশেষের নিকটেই রাজবংশের প্রতিষ্ঠিত মল্লেশ্বর ও উজ্জনাথ শিব আজিও বিদ্যমান । কথিত আছে, কালাপাহাড়ের অত্যাচার হইতে রক্ষা করিবার জন্য পূজারিগণ মল্লেশ্বরকে প্রস্তর দিয়া মুড়িয়া ফেলেন ও উজ্জনাথকে লইয়া এক বটবৃক্ষ মূলে স্থাপন করেন। কালাপাহাড় শূন্য মন্দির ধবংস করিয়া চলিয়া যান। মল্লেশ্বরের বর্তমান সুন্দর মন্দিরটি বদ্ধমানের মহারাজা কীৰ্ত্তিচন্দ্রের দ্বারা নিৰ্ম্মিত। মল্লেশ্বর আজিও প্রস্তরাবৃত আছেন। ইহার মন্দিরের নিকুটে উন্মুক্ত আকাশতলে এক বটবৃক্ষের মূল আশ্রয় করিয়া উজ্জনাথ মহাদেৰ বিদ্যমান। যতবারই ইহার জন্য মন্দির নির্মাণ করা হইয়াছে ততবারই তাহা বজ্রপাত, ভূমিকম্প প্রভৃতি দৈবদুর্ঘটনার দ্বারা ধবংস হইয়া গিয়াছে। চন্দ্রকোণার লালজীউ, রঘুনাথজীউ ও কামেশ্বর মহাদেবও বিশেষ প্রসিদ্ধ। দশহর ও রথযাত্র। এবং রঘুনাথজীউর পুষ্যা উৎসব উপলক্ষে চন্দ্রকোণায় বিস্তর জনসমাগম হয়।