পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে לא) ל গড় বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই গড়ের উত্তরস্কারের সম্মুখে সাতটি পুষ্করিণীর মধ্যস্থলে প্রাচীন আমলের প্রস্তরনিৰ্ম্মিত সাতটি মন্দির আছে। ইহাও চৌহানদিগের কীৰ্ত্তি বলিয়া খ্যাত। এখানকার সবর্বমঙ্গলা দেবী, কামেশ্বর মহাদেব ও রাধাবল্লভজীর মন্দির প্রসিদ্ধ। ইহাদের মধ্যে আবার সবৰ্বমঙ্গলাই সমধিক খ্যাত। কবে এবং কাহার দ্বারা এই মন্দিরটি স্থাপিত হইয়াছিল তাহা জানা যায় নাই। প্রবাদ, বগড়ীর প্রথম রাজা গজপতি সিংহ ইহার প্রতিষ্ঠাতা, আবার কাহারও মতে উজ্জয়িনীরাজ বিক্রমাদিত্যের সমসাময়িক কোন সিদ্ধপুরুষ অরণ্যমধ্যে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সবর্বমঙ্গলা দেবীর মাহাজ্যের কথা শুনিয়া বিক্রমাদিত্য নাকি গড়বেতায় আগমন করিয়া এই স্থানে শবসাধনা করিয়াছিলেন। তাহার সাধনায় তুষ্ট হইয়া দেবী তাল ও বেতাল নামে স্বীয় অনুচরস্বয়কে বিক্রমাদিত্যের আদেশ অনুসারে চলিবার জন্য নিযুক্ত করেন। মহারাজ বিক্রমাদিত্য এই আদেশ সত্য কি না তাহ পরীক্ষা করিবার জন্য তৎক্ষণাৎ মন্দিরদ্বার পূবর্বদিক হইতে উত্তরদিকে পরিবত্তন করিবার আদেশ করেন। এই আদেশ সঙ্গে সঙ্গইে পালিত হয়। তদবধি এই মন্দিরটি উত্তরদ্বারী। এই মন্দিরের গঠনপ্রণালী সাধারণ মন্দির হইতে বিভিন্ন। মন্দিরদ্বার হইতে একটি প্রশস্ত অথচ অন্ধকার সুড়ঙ্গপথে যাইয়া পাষাণময়ী দেবীপ্রতিমার সম্মুখে উপস্থিত হইতে হয়। দেবীর পার্শ্বে সবৰ্বক্ষণই একটি দীপ জালাইয়া রাখা হয়। প্রবাদ, দেবীর পাশ্বে যে পঞ্চমুঙী আসন আছে তাহার উপর বসিয়া রাজা গজপতি ও বিক্রমাদিত্য প্রভৃতি সিদ্ধ হইয়াছিলেন। গড়বেতায় একটি মুনসেফী আদালত আছে। বগড়ী রোড—খড়গপুর হইতে ৪০ মাইল। স্টেশন হইতে বগড়ী-কৃষ্ণনগর গ্রাম আড়াই মাইল। অনেকের মতে বগডিহি বা বক রাক্ষসের বাসস্থান হইতে “ বগড়ী ” শব্দের উৎপত্তি । প্রবাদ, পুরাকালে এই স্থানে নাকি মহাভারতোক্ত বক রাক্ষসের রাজ্য ছিল। জতুগৃহ দাহের পর পাণ্ডবেরা বিদুরের পরামর্শ মত নৌকায় গঙ্গাপার হইয়। দক্ষিণদিকে অরণ্য সমাবৃত এই স্থানে উপনীত হন। বক রাক্ষস প্রত্যহ একটি করিয়া মানুষ ভক্ষণ করিত। ভীমের হস্তে বক রাক্ষসের নিধন ঘটে । বগড়ী-কৃষ্ণনগর একটি প্রাচীন গ্রাম। এখানে কৃষ্ণরায়জীর একটি সুন্দর পাষাণ নিৰ্ম্মিত বিগ্ৰহ ও মন্দির আছে। দোলযাত্রার সময় এখানে একটি বড় মেলা হয় ও তাহাতে বাংলার নানাস্থান হইতে বহু নরনারীর সমাগম হয়। প্রবাদ, বগড়ীর প্রথম রাজা গজপতি সিংহের মন্ত্রী রাজ্যধর রায় এই মন্দির নির্মাণ করেন। পরে বগড়ীর রাজা রঘুনাথ সিংহ কৃষ্ণমূত্তির পাশ্বে রাধিক বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করিয়া মন্দিরটি সম্পূর্ণ করেন। বগড়ীর নিকটে ভিকনগর ও গনগণির মাঠ নামক দুইটি স্থান আছে। প্রবাদ, পাণ্ডবেরা ভিকৃনগর হইতে ভিক্ষা করিয়া দৈনিক আহাৰ্য্য সংগ্ৰহ করিতেন। শিলাবতী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত গনগণির মাঠে ভীম কর্তৃক বক রাক্ষস নিহত হইয়াছিল বলিয়া স্থানীয় লোকের বিশ্বাস। এই মাঠের উপর কতকগুলি প্রস্তরীভূত বৃক্ষকাওকে লোকে বক রাক্ষসের অস্থি বলিয়া দেখাইয়া থাকে। বগড়ী-কৃষ্ণনগরের নিকটবৰ্ত্তী মহাভারতোক্ত একচক্রপুর বা একারিয়। গ্রামে সপুত্র কুন্তীদেবী যে স্থানে বাস করিয়াছিলেন লোকে আজিও তাঁহা নির্দেশ করিয়া থাকে। জঙ্গলমহালের চুয়াড়দিগের দমনের কথা পূবেৰ্বই বলা হইয়াছে। ইহার অব্যবহিত পরে ১৮০৬ খৃষ্টাব্দে নাএক নামে বন্যজাতি মেদিনীপুর জেলার উত্তরাংশে বিদ্রোহী হয়। নাএকর প্রায় । চুয়াড়দিগেরই মত। তাহারা ধৰ্ম্মে হিন্দু ছিল এবং গো-ব্রাহ্মণের উপর তাহদের অত্যন্ত ভক্তি ছিল; বগড়ীর রাজবংশ কর্তৃক প্রদত্ত জায়গীর তাহারা পুরুষানুক্রমে ভোগদখল করিত এবং প্রয়োজন হইলে