পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে &సి ঘাটশিলার প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি সুন্দর। নীল পবর্বতমালা পরিবেষ্টত গ্রামের প্রান্ত দিয়া প্রবাহিত সুবর্ণরেখার সৌন্দর্য্যে মন মুগ্ধ হয়। ঘাটশিলা হইতে তিনমাইল দূরে মৌ-ভাণ্ডারে একটি তামার খনি ও কারখানা আছে। ঘাটশিলার নিকটবৰ্ত্তী পঞ্চপাণ্ডব নামক স্থানে পঞ্চপাণ্ডবের প্রস্তর নিৰ্ম্মিত মুক্তি বলিয়া কথিত পাঁচটি মুক্তি দেখিতে পাওয়া যায়। গালুড়ি—খড়গপুর জংশন হইতে ৬৭ মাইল। ইহাও একটি স্বাস্থ্যকর স্থান। চতুদিকে পাহাড় ও শালবন থাকায় ইহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও অতি মনোরম। গালুড়ি হইতে তিন মাইল দূরে রাখা নামক স্থানে তামার খনি আবিষ্কৃত হইয়াছে। গালুড়ির পর “রাখা মাইন " নামে একটি রেলস্টেশন আছে। টাটানগর—খড়গপুর জংশন হইতে ৮৪ মাইল দূর। ইহা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্প কেন্দ্র। পৃথিবীর যে কোন স্থান হইতে যে কেহ ভারত ভ্রমণে আসেন তিনি টাটানগরের বিরাট কারখানাটি না দেখিয়া যান না। এখানে প্রচুর পরিমাণে লৌহ, ইস্পাত, টিন ও লোহার কড়ি প্রভৃতি প্রস্তুত হয় এবং এই সকল দ্রব্যের জন্য ভারতবর্ষকে আর পূবেৰ্বর ন্যায় ততটা পর দেশের মুখাপেক্ষী হইতে হয় না। পরলোকগত জমসেদজী টাটার নামানুসারে এই স্থানের নাম হইলেও, বাঙালীর সহিত ইহার সম্বন্ধ যে কত ঘনিষ্ঠ তাহা বোধ হয় অনেকেই জানেন না । বাঙালী ভূতত্ত্ববিদ স্বগীয় প্রমথনাথ বসু মহাশয় নিকটবৰ্ত্তী স্থানসমূহে লৌহখনি আবিষ্কার করেন এবং প্রধানত: তাঁহারই পরামর্শে বোম্বাইএর ধনিকগণ বিপুল ধনভাণ্ডার লইয়া এক অজ্ঞাত, অখ্যাত ও উপেক্ষিত গগুগ্রাম দকৃতীতে উপস্থিত হন। সকচ পরে কানীমাট নাম ধারণ করে এবং কালীমাটি আজ ভুবনবিখ্যাত টাটানগর। বর্তমানে টাটানগরের মত সমৃদ্ধ শ্রমিক কেন্দ্র ভারতে আর একটিও নাই । টাটানগর হইতে বাংলা নাগপুর রেলপথের একটি শাখা ৫৫ মাইল দূরবর্তী বাদাম পাহাড় পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। এই লাইন দিয়াই টাটার কারখানার জন্য অধিকাংশ লৌহপ্রস্তর আনীত হয়। টাটানগরের পরবর্তী স্টেশন গোমারিয়া হইতে অপর একটি শাখা লাইন ৮৯ মাইল দূরবত্তীবরকাকান পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। এই শাখা পথের মুড়ী জংশনে নামিয়া ছোট মাপের গাড়ীতে রাচী যাইতে হয়। সিনি জংসন—খড়গপুর জংশন হইতে ১০০ মাইল দূর। ইহা সেরাইকেল রাজ্যের অন্তর্গত। এখান হইতে বাংলা নাগপুর রেলপথের প্রধান লাইন রাজখরসোয়ান ও চক্ৰধরপুর হইয়া নাগপুর অভিমুখে গিয়াছে এবং একটি শাখা লাইন মানভূম জেলার সদর শহর পুরুলিয়া হইয়া বদ্ধমান জেলার অন্তর্গত ঈস্ট ইণ্ডিয়ান রেলপথের আসানসোল স্টেশনের সহিত মিলিত হইয়াছে। খরসোয়ান—প্রাচীন ধলভূম রাজ্যের অধীন একটি সামস্ত রাজ্য ছিল। ইহা বৰ্ত্তমানে ওড়িষ্যা প্রদেশের অন্তর্গত একটি ছোট দেশীয় রাজ্য। এখানে অনেক প্রাচীন কীৰ্ত্তি আছে। রাজ-খরসোয়ন হইতে বাংলা নাগপুর রেলপথের একটি শাখা ৬৫ মাইল দূরবর্তী গুয়া পৰ্যন্ত গিয়াছে। গুয়ায় ম্যাঙ্গানিজের খনি আছে। এই শাখাপথে চাইবাসা উল্লেখযোগ্য স্টেশন। ইহা সিংহভূম জেলার সদর শহর। শহরটি বোরো নামক একটি পরির্বত্য নদীর তীরে অবস্থিত ও চারিদিকে অনুচচ পাহাড়ের দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই স্থানটি বিশেষ স্বাস্থ্যকর ও ইহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও নয়নানন্দকর। শহরের মধ্যে মধুবাঁধ, শিববাঁধ, রাণীবাধ নামে পরিচিত কয়েকটি সুন্দর জলাশয় আছে। সিংহভূম জেলায় হে, মুণ্ডা, কোল, সাঁওতাল প্রভৃতি বহু আদিম জাতির বাগ। এই জেলা বনজ ও খনিজসম্পদে পরিপূর্ণ। লৌহ, তাম্র ও অত্র এখানকার প্রধান খনিজ পদার্থ। এই জেলায় বহু পরিমাণে রেশম ও লাক্ষা উৎপন্ন হয় ।