পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে Ꮌ&Ꮌ ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে বরাহভূমের রাজা গঙ্গানারায়ণের সহিত ইংরেজ সরকারের সংঘর্ষ উপস্থিত হয় এবং মানভূমের তদানীন্তন ডেপুটি কমিশনার ক্যাসেল সাহেব গঙ্গানারায়ণের সহিত যুদ্ধে পরাজিত হইয়া বাঁকুড়ায় গিয়া আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইহার পর গঙ্গানারায়ণ বিশেষ শক্তিশালী হইয়া উঠেন কিন্তু ইংরেজ সেনাধ্যক্ষ ডেণ্টের হস্তে তাহার পরাজয় ঘটে। এই ঘটনার পর বরাহভূম রাজ্য ইংরেজের খাস শাসনাধীনে আসে। পুরুলিয়া—সিনি জংশন হইতে ৫০ মাইল দূর। ইহা মানভূম জেলার সদর শহর। এই শহর হইতে ৩ মাইল দূরে একটি কষ্ঠাশ্ৰম আছে। ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে মিশনারীগণ কর্তৃক ইহা স্থাপিত হয়। প্রায় ৬০০ বিঘা জমির উপর এই আশ্রমটি অবস্থিত । ইহা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে সবর্বাপেক্ষা বৃহৎ কুষ্ঠাশ্ৰম। . সাহেববাধ নামক জলাশয় পুরুলিয়া শহরের অপর একটি দ্রষ্টব্য বস্তু। ১৫০ বিঘা জমি জুড়িয়া এই বৃহৎ বাঁধটি অবস্থিত। ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে কয়েদী মজুরগণের দ্বারা ইহা খনন করান হয়। পুরুলিয়া হইতে তিন মাইল দক্ষিণ পূবেৰ্ব অবস্থিত ছোট বলরামপুর নামক গ্রামে জৈন তীর্থঙ্করদিগের স্তুপ ও হিন্দু মন্দির সমূহের ধবংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। পুরুলিয়া হইতে এই জেলার রঘুনাথপুর থানার অন্তর্গত চেলিয়ামা নামক স্থান পর্য্যস্ত মোটরবাস সাভিস আছে। চেলিয়াম হইতে সাত মাইল উত্তর পূবেব অবস্থিত তেলকুপি (তৈলকম্প) মানভূম জেলার মধ্যে একটি অতি প্রাচীন স্থান ; ইহা পঞ্চকোটের শেখর রাজবংশের রাজধানী ছিল। এই গ্রামে মন্দিরাদি বহু পুরাকীৰ্ত্তি আছে। পৌষ ও চৈত্রমাসে এখানে খালুই-চণ্ডী ও বারুণী উৎসব উপলক্ষে মেলা হয় । মানভূম জেলা খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ। কয়লা, স্বর্ণ, অন্ত্র, গৈরিক বা গিরিমাটি, প্রস্তর, ফায়ার ক্লে, কেয়লিন ও গ্রাফাইট এই জেলায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এখানকার আদিম অধিবাসিগণের মধ্যে কোড়া, মুণ্ডা, উরাঙ, ভুইয়া ও খেড়িয়ার নাম উল্লেখযোগ্য এই জেলার শতকরা ৭২ জন লোক বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। পুরুলিয়া হইতে বাংলা নাগপুর রেলপথের একটি ছোট মাপের (ন্যারো গেজ) লাইন মুড়ী জংশন হইয়া প্রসিদ্ধ পাবর্বত্য স্বাস্থ্য-নিবাস রাঁচী শহর দিয়া ৮৩ মাইল দূরবর্তী ছোট নাগপুরের অন্তর্গত লোহারডাগা পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। এই শাখাপথে গড়-জয়পুর ও ঝালদা মানভূম জেলার অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য স্টেশন। গড়-জয়পুর পুরুলিয়া হইতে ৯ মাইল দূর। এই স্থান হইতে চার মাইল দক্ষিণে অবস্থিত বোড়াম গ্রামে তিনটি প্রাচীন জৈন মন্দিরের ধবংসাবশেষ আছে। মন্দির তিনটির গঠন প্রণালী বুদ্ধগয়ার বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দিরের অনুরূপ। পুরুলিয়া হইতে ঝালদার দূরত্ব ১৩ মাইল। ইহা একটি বদ্ধিষ্ণু গ্রাম। এখানে মিউনিসিপ্যালিটি, থানা, হাসপাতাল, স্কুল, ডাকঘর ও ডাকবাংলা প্রভৃতি আছে। এখানকার লৌহনিৰ্ম্মিত দ্রব্যাদি বিশেষ প্রসিদ্ধ। মধুকুণ্ডা—আদড় জংশন হইতে আসানসোলের দিকে ১৭ মাইল দূর। এই স্থানে নামিয়া বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত বেহারীনাথ পাহাড়ে যাইতে হয়। মধুকুণ্ড সেটশন হইতে বেহারীনাথ পাহাড় প্রায়৬ মাইল দুর। যাইবার জন্য মোটরবাস পাওয়া যায়। বাঁকুড়া জেলার মধ্যে বেহারীনাথ পাহাড়ই সবর্বাপেক্ষা উচচ । ইহার উচচতা ১৪৭১ ফুট। এই পাহাড়ে বেহারীনাথ শিবের মন্দির আছে। তথায় শিবরাত্রি ও চড়কের সময় বিশেষ সমারোহ হয়। .