পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে বাংলাদেশ ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গ রেলপথের ঢাকা বিভাগে যখন গাড়ীর চলাচল আরম্ভ হইল, তখন সরকার চিন্তা করিতে লাগিলেন যে কি উপায়ে আসাম ও পূর্ববঙ্গকে রেলপথের দ্বারা সংযুক্ত করিতে পারা যায়। এ বিষয়ে অনেকদিন ধরিয়া নানাপ্রকার জল্পনা কল্পনা চলিতে থাকে। ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে মণিপুর বিদ্রোহের পর সরকার “আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি " নামক একটি কোম্পানির সহিত চুক্তি করেন যে উক্ত কোম্পানি আংশিকভাবে সরকারী অর্থসাহায্যে মোট ৭৪০ মাইল রেলপথ খুলিবেন। আসামের পাবর্বত্য অঞ্চলে রেলপথ খুলিতে কোম্পানিকে বহু অর্থব্যয় ও কষ্ট স্বীকার করিতে হইয়াছিল। অনেক জায়গায় পবর্বত মধ্যে সুড়ঙ্গ নিৰ্ম্মাণ করিয়া রেলের লাইন পাতিতে হইয়াছিল। বদরপুর—লামৃডিং বিভাগে রেলের লাইন নিৰ্ম্মাণ করিতে কোম্পানির ১১ বৎসর সময় লাগিয়াছিল। এই শাখা লাইন পাবৰ্বত্য প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্ঘ্যে পরিপূর্ণ। ইহার দুই দিকের অরণ্যে হস্তী, ব্যাঘ্র ও ভলুক দেখিতে পাওয়া যায়। ১৯০৪ খৃষ্টাব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারি তারিখে বড়লাট লর্ড কর্জন চট্টগ্রাম শহরে আসাম বাংলা রেলপথের উদ্বোধন উৎসব সম্পন্ন করেন। ইহার পর কোম্পানি আরও অনেকগুলি শাখা লাইন খুলিয়া রেলপথকে বাংলা ও আসামের বহুদূর পর্য্যন্ত বিস্তৃত করিয়াছেন। এই সকল শাখার মধ্যে আখাউড়া-আশুগঞ্জ, ভৈরববাজার-টঙ্গী, কুলাউড়া-শ্রীহট্ট, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার ও চাপারমুখশিলঘাট প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। আশুগঞ্জ ও ভৈরববাজারের মধ্যে পূবেৰ্ব খেয়া স্টীমারযোগে যাত্রী ও মালগাড়ী পারাপার করা হইত। সম্প্রতি ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে ৫৬ লক্ষ মুদ্র ব্যয়ে আশুগঞ্জ ও ভৈরববাজারের মধ্যে মেঘনা নদীর উপর এক বিশাল সেতু নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। বর্তমান ভারত সম্রাটের নামানুসারে এই সেতুর নাম রাখা হইয়াছে “ ঘণ্ঠ জর্জ সেতু"। ইহার দৈর্ঘ্য ২৯৪৭ ফুট। ইহা ভারতের অন্যতম প্রধান রেলওয়ে সেতু। এখন রেলগাড়ী চট্টগ্রাম হইতে একেবারে সরাসরি পূর্ববঙ্গ রেলপথের জগন্নাথগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ পর্য্যন্ত আসিয়া পৌছাইতেছে। ইহাতে চট্টগ্রাম হইতে কলিকাতা, ময়মনসিংহ ও ঢাকা যাতায়াতের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে। বৰ্ত্তমানে আসাম বাংলা রেলপথের স্টেশন সংখ্যা ৩১৫টি ও মোট দৈর্ঘ্য ১৩০৬ মাইল। এই রেলপথের সমগ্র লাইনই মিটার গেজ বা মাঝারি মাপের। ইহা বাংলা ও আসাম প্রদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, ত্রিপুরা, শ্রীহট্ট, কাছাড়, শিবসাগর, নওগাঁ, লখিমপুর ও কামরূপ এই একাদশটি জেলার মধ্য দিয়া প্রসারিত। আসাম বাংলা রেলপথ দিয়া বাংলাদেশের যে সকল প্রসিদ্ধ স্থানে যাওয়া যায় নিয়ে তাহাদেৱ সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদত্ত হইল। যদিও শ্রীহট্ট ও কাছাড় জেলা অধুনা আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত, ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়া উহারা বাংলাদেশ হইতে অভিন্ন। সুতরাং এই দুই জেলার প্রসিদ্ধ স্থানগুলির পরিচয়ও লিপিবদ্ধ করা হইল।