পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে - ›ጳኃ চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠিবার পথে অনেকগুলি তীর্থ আছে। যথাক্রমে তাহদের বিবরণ পর পর দেওয়া গেল। স্টেশন হইতে বাজারের পথ ধরিয়া পাহাড়ের দিকে যাইতে প্রথমে পড়িবে ব্যাসকুণ্ড বা ব্যাস সরোবর। কথিত আছে, মৎস্যগন্ধার পুত্র মহামুনি ব্যাসদেব তপস্যা করিবার জন্য বারাণসীধামে গমন করিলে মহর্ষি ভৃগু প্রভৃতি তাহাকে নীচকূল সস্তুত বলিয়া অপমান করেন। অপমানে ও দুঃখে ব্যাসদেব তখন একটি নূতন কাশী স্বষ্টি করিবার সঙ্কল্প করিয়া কঠোর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। শিব প্রীত হইলেন। কলিযুগে শিব ভারতের অগ্নিকোণে স্থিত চটলে চন্দ্রশেখর ক্ষেত্রে অবস্থান করিবেন এই আশ্বাস পাইয়া শিবেরই উপদেশ মত এই স্থানে আসিয়া ব্যাসদেব নূতন কাশী প্রতিষ্ঠা করেন। তপোবলে তিনি অন্যান্য তীর্থগুলিকে চন্দ্রনাথে লইয়া আসিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সাড়ে তিন কোটি দেবতা আসিয়া এই স্থানে অধিষ্ঠিত হইলেন। চন্দ্রনাথ সবৰ্বতীর্থসার মহাতীর্থে পরিণত হইলে ব্যাসদেবের স্নান তর্পণের জন্য শিব ত্রিশূল নিক্ষেপ করিয়া ব্যাস-কুণ্ডটি স্বষ্টি করেন। পরে নৈমিষারণ্য হইতে সূত নামে কোনও ঋষি চন্দ্রনাথ তীর্থে আসিয়া ব্যাসকুগুটি খনন করাইয়া বৰ্ত্তমান সরোবরে পরিণত করেন। ব্যাসকুণ্ডের পশ্চিম তীরে মন্দির মধ্যে ব্যাসেশ্বর শিব, ভৈরব, ব্যাসদেব ও চণ্ডিকা দেবীর মুক্তি আছে। এই মন্দিরের পাশেই বটুক বৃক্ষ বা অক্ষয় বট দ্বাপর যুগ হইতে দণ্ডায়মান বলিয়া লোকের বিশ্বাস। ব্যাস সরোবর ছাড়িয়া কিছু অগ্রসর হইয়া ৭০টি সিড়ি অতিক্রম করিলে বামদিকে হনুমান মন্দির পড়িবে। হনুমান মন্দিরের সম্মুখ হইতে চন্দ্রনাথের রাস্ত ছাড়িয়া নীচে ৪৫টি সিঁড়ি অবতরণ করিলে সীতাকুণ্ড পাওয়া যাইবে। কথিত আছে, বনবাস কালে শ্রীরামচন্দ্র যখন এখানে আগমন করেন তখন মহমি ভাগৰ সীতাদেবীর স্নানের জন্য এই কুণ্ডের স্বষ্টি করেন। কুণ্ডের পার্শ্বস্ব মন্দিরে সীতাদেবীর মুক্তি আছে। সীতাদেবীর মন্দিরের পশ্চাতেই পবর্বতগাত্র ভেদ করিয়া মাঝে মাৰে অগ্নিশিখা জলিতে দেখা যায়। ইহা জ্যোতিৰ্ম্ময় নামে খ্যাত। সীতাকুণ্ডের পাশ্বেই রাম ও লক্ষ্মণকুণ্ড এবং মন্মথ নদ অবস্থিত। - সীতাকুণ্ড প্রভৃতি দেখিয়া চন্দ্রনাথের রাস্তায় পুনরায় ফিরিয়া আসিয়া কিছুদূর গিয়া ৬১টি সিড়ি অতিক্রম করিলে ভবানীদেবীর মন্দির পড়িবে। ইহা একটি পীঠস্থান। বিষ্ণুচক্র-খণ্ডিত সতীদেহের দক্ষিণ বাহু এইখানে পড়িয়াছিল। “চট্টলে দক্ষ বাহুৰ্ম্মে ভৈরবশচন্দ্রশেখরঃ । ” এই মন্দিরে ভবানী বা কালী ও দশভুজার মুক্তি আছে। ভবানীমন্দির হইতে ৪৯টি সোপান আরোহণ করিলে স্বয়ম্ভুনাথ মহাদেবের মন্দির। স্বয়ম্ভুনাথের অপর নাম ক্রমদীশ্বর। মন্দিরের উত্তরদিকে নৰভৈরব এবং মন্দিরদ্ধারে দ্বারপাল ভৈরব অবস্থিত। স্বয়ম্ভুনাথের ভিতর হইতে সৰ্ব্বদা জল বাহির হইতেছে। মন্দির মধ্যে রামীতা ও অন্নপূর্ণার মুক্তি রক্ষিত আছে। যাত্রীরা স্বয়ম্ভুনাথ দৰ্শন করিয়া বাহিরে আসিয়া সাক্ষীশিব দশন করেন । স্বয়ম্ভুনাথের প্রকাশ সম্বন্ধে প্রবাদ আছে, যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিকটে শম্ভ নামে এক রজক বাস করিতেন। তাহার একটি কপিল৷ গাভী গ্রামে প্রচুর আহার পাওয়া সত্বেও প্রতিদিন পাহাড়ের দিকে কোথায় পলাইয়া যাইত এবং রাত্রে গৃহে ফিরিয়া আসিত। একদিন রজক গাভীর পিছনে পিছমে যাইয়া দেখিলেন যে উহ! পাহাড়ে উঠিয়া একস্থানে স্থির হইয়া দাড়াইল এবং উহার স্তন হইতে