পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে ➢ ጳ¢ চাটিগ বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। প্রসিদ্ধ ভ্ৰমণকারী ইবন বতুত ইহাকে আৰ্বৰী অক্ষরে "ছতের কাত্তন " লিখিয়াছেন। এইরূপ গল্পও প্রচলিত আছে যে প্রসিদ্ধ পীর বদর সাহেব এখানে আসিয়া রাজার নিকট হইতে এক চাটি (অর্থাৎ প্রদীপে যতটুকু স্থান আলোকিত হয়) ততটুকু স্থান প্রাথন করিয়া লইয়া একটি পাহাড়ের উপর তাহার প্রদীপ স্থাপন করেন। যতদূর প্রদীপের আলো পড়িয়াছিল তাহারই নাম চাটি-গী হয়। এখনও শহরের মধ্যে “ চেরাগী পাহাড়ে ” প্রদীপের স্থান নির্দেশ করা হয়। এই চাটিগ ক্রমে চাটিগ্রাম ও চট্টগ্রামে পরিণত হয় বলিয়া কথিত। এই গল্পের সামান্য প্রকার ভেদ এইরূপ, যে পূবেৰ্ব এই অঞ্চল দৈত্য ও পরীদিগের দ্বারা উৎপীড়িত ছিল ; মুসলমানগণ গৌড় জয় করিলে বার জন আউলিয়া বা সিদ্ধ ফকির এখানে আসিয়া একটি পাহাড়ের উপর প্রদীপ জালিয়া দৈত্য ও পরীদের দমন করেন। প্রদীপ বা চাটির প্রভাবে এই স্থান লোকের বাসোপযোগী হইয়াছিল বলিয়া ইহার নাম হয় চাটগ । { বৈষ্ণব সাহিত্যে চট্টগ্রামের নাম চাটিগ্রাম। বৌদ্ধ শ্রমণগণ ইহাকে বলিতেন রমাবতী । ১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জয় করিয়া মুসলমানগণ ইহার নাম রাখেন ইস্লামাবাদ। ফকির দরবেশের নিকট ইহা “বার আউলিয়ার দেশ ’ নামে পরিচিত ছিল। পর্তুগীজগণ ইহার নাম রাখিয়াছিলেন “ পোটোগ্রাণ্ডো ’ বা বড় বন্দর ; তাহারা সপ্তগ্রামকে বলিতেন “ পোটোপিকুইনো ’ বা ক্ষুদ্র বন্দর { মুসলমান বিজয়ের পূবেৰ চট্টগ্রাম বহুবার হিন্দু ত্রিপুরারাজ ও বৌদ্ধ আরাকানরাজের শাসনাধীন ছিল। উনবিংশ শতাব্দীতেও আরাকানের বৌদ্ধ রাজা মুসলমানদের নিকট হইতে ইহা জয় করেন। কথিত আছে তিনি বলিয়াছিলেন “চিৎ-ত-গং ” অথাৎ যুদ্ধ করা অন্যায়। আরাকানি ও মগের বলেন এই উক্তি হইতেই চট্টগ্রাম শহরের নাম হইয়াছে চিটাগং। চট্টগ্রাম শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি সুন্দর। শহরের মধ্যে নানাস্থানে উচচ টিলা ও পাহাড় থাকায় ইহার সৌন্দর্য্য বিশেষ বৃদ্ধি পাইয়াছে। সরকারী আফিস আদালত, যুরোপীয় ক্লাব, আসাম বাংলা রেলপথের প্রধান কাৰ্য্যালয় ও বহু সম্রাস্ত ব্যক্তির বাস-ভবন এইরূপ উচচ পাহাড়ের উপর অবস্থিত । এই সকল পাহাড় হইতে জাহাজ, স্টীমার ও সাম্পান নৌকা পরিপূর্ণ কর্ণফুলী নদী ও অনতিদূরবর্তী সমুদ্রের দৃশ্য অতি সুন্দর দেখায়। বিশেষতঃ জ্যোৎস্না রাত্রিতে ইহার সৌন্দর্য্য হইয়া উঠে আতি মনোরম। শহরের একটি অনুচচ পাহাড়ের উপর চট্টগ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চট্টেশ্বরী কালীর মন্দির অবস্থিত । শহরের মধ্যে "পীর বদরউদ্দীন সাহেবের দরগাহ ” অবস্থিত। সুপ্রসিদ্ধ হজরৎ শাহজলাল কর্তৃক শ্রীহট্ট বিজয়ের পর তাঁহার বাবা আদিষ্ট হইয়া সেনাপতি নাসিরউদ্দীন পার্শ্ববর্তী রাজ্য ভদক জয় করেন । তাহার সহিত যে চারজন আউলিয়া বিজিত ভূমিতে ধৰ্ম্মপ্রচারার্থ গিয়াছিলেন তাহারা তরফ জয়ের পর নিকটস্থ নানাস্থানে গিয়া ধৰ্ম্মপ্রচার করেন। ইহাদেরই অন্যতম পীর বদরউদ্দীন চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হন। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকে এই দরগাহে "শিরণি" দিয়া থাকেন। মাধির নৌকা ছাড়িবার সময় “বদর, বদর ” উচচারণ করিয়া এই পীরের জয়ধবনি করে।