পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(গ) আখাউড়া-বদরপুর-শিলচর ইটাখোলা-আখাউড়া জংশন হইতে ২৩ মাইল। ইহা শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত। স্টেশন হইতে ৫৬ মাইল পশ্চিমে বেজোড়াগ্রাম। ইহার সহিত একটি করুণ ঘটনার স্মৃতি জড়িত। পূবেৰ্ব শ্রীহট্ট জেলার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে তরফ নামে একটি বিস্তৃত রাজ্য ছিল। শায়েন্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চল এই রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। তরফের মুসলমান রাজা মেকায়েলের দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ আব্বাস দিল্লীতে গিয়া বীরত্ব ও অন্যান্য গুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেন এবং এক ওমরাহ কন্যাকে বিবাহ করিয়া সম্রাটের নিকট হইতে শ্রীহট্টে প্রচুর ভূসম্পত্তি লাভ করিয়া দেশে প্রত্যাগমন করেন। তাহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা ঈর্ষান্বিত হইয়া বাড়ী পৌছিবার পূবেৰ্ব পথিমধ্যে র্তাহাকে সহসা _ আক্রমণ করিয়া হত্যা করেন। তাহার স্ত্রী মর্মাহত হইয়া ঐ স্থান হইতেই দিল্লীতে ফিরিয়া যান। " এই ঘটনায় স্বামী হইতে স্ত্রী চিরকালের জন্য বিযুক্ত হইয় পড়েন বলিয়া স্থানটি আজও বেজোড়া নামে পরিচিত । -

ত্বরফের শেষ হিন্দু রাজার নাম আচক নারায়ণ; প্রবাদ তিনি হঠাৎ রাজ্যলাভ করেন বলিয়া আচক বা আচম্বিত নামে পরিচিত হন। আচক নারায়ণ ত্রিপুরেশ্বরের করদ রাজা ছিলেন। রাজপুর নামক স্থানে তাহার রাজধানী ছিল। তাহার বিষয়ে নানা গল্প ও কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত , আছে, তিনি বৈষ্ণৰ ছিলেন এবং প্রত্যহ দ্রুতগামী অশ্বে চড়িয়া রাজধানী হইতে বহু দূরে পবিত্র বরচক্র বা বরাক নদে স্নান করিতে যাইতেন। যে ঘাটে তিনি স্নান করিতেন তাহা আজও স্নানঘাট নামে অভিহিত। জনশ্রুতি যে পৌরাণিক কালের রাজা ভগদত্ত শাসনকাৰ্য্য উপলক্ষে শ্রীহটে আসিলে এই ঘাটে স্নান করতেন। আচক নারায়ণ স্নান করিয়া ফিরিয়া রাজধানী হইতে তিনক্রোশ দূরে স্থিত কীৰ্ত্তনীয়া টিলা নামক একটি নির্জন টিলায় পূজা করিতেন। রাজবাটীতে কুলদেবতার ভোগ আরম্ভ হইলে একটি প্রকাণ্ড চাক বাজাইলে মেঘ গৰ্জনের ন্যায় তাহার উচচংবনি কীৰ্ত্তনীয়া টিল হইতে শুনিতে পাইতেন। তখন তিনি প্রাসাদে ফিরিয়া মধ্যাহ্ন ভোজন করিতেন। আচক নারায়ণ শ্রীহট্টের প্রসিদ্ধ রাজা গৌড়গোবিন্দের সমসাময়িক ছিলেন। প্রসিদ্ধ পীর শাহজলালের ; নেতৃত্বে মুসলমানগণ শ্রীহট্ট জয় করিলে পর তাঁহারই আদেশে সেনাপতি নসিরউদ্দীন চারজন আউলিয়ার সহযোগিতায় তরফ আক্রমণ করেন। আচক নারায়ণ রাজা গৌড়গোবিন্দের পরাজয়ের খবর পাইয়া এবং তাহার অশিক্ষিত সৈন্যগণ সুশিক্ষিত মুসলমান সৈন্যবাহিনীর সহিত যুদ্ধে পরিবে না এবং কেবল লোকক্ষয় হইবে, এই ভাবিয়া রাজধানী ত্যাগ করিলেন এবং পরিজনসহ ত্রিপুরেশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করেন। ত্রিপুরায় অবস্থান করা নিরাপদ নহে ভাবিয়া পরে তিনি মথুরা তীর্থে গমন করেন এবং তথায় তাহার মৃত্যু হয়। নসিরুদিন তরফের শাসনভার প্রাপ্ত হন। তরফ নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কথিত আছে যে এই রাজ্য মুসলমানগণ কর্তৃক আক্রমণের সময় দ্বাদশ আউলিয়ার অন্যতম শাহবাজী অঙ্গুলি নির্দেশে আচক নারায়ণের অশ্বের প্রতি নির্দেশ করিয়া বলিয়াছিলেন “ইস্ তরফ যাও”। তদবধি এই অঞ্চলের নাম তরফ হইয়াছে। নসিরুদিনের ৮ প্রপৌত্র সৈয়দ শাহ ইসরাইল বিদ্যাবত্তার জন্য মুলক-উল-উলামা উপাধি পাইয়াছিলেন এবং ইরাণী । ভাষায় তিনি “মদানেল ফাওয়ায়েদ ” নামক গ্রন্থ রচনা করেন (১৫২৩ খৃষ্টাব্দে) । তরফরাজগণ দিল্লীর অধীন হইলেও ত্রিপুর রাজগণের দ্বারা প্রভাবান্বিত ছিলেন। তরফরাজ সৈয়দ মুসার সহি আরাকান রাজ্যের বিশেষ যুদ্যতা ছিল। আরাকান মন্ত্রী মাগন ঠাকুরের উৎসাহে বঙ্গীয় কৰি আলাওল \