পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে ఏసి) কও বিশেষ। ইহাতে সাত হাতের বেশী জল কখনও থাকে না। এখানে সবৰ্ব তীর্থের সমাবেশ হয় বলিয়া প্রবাদ আছে। পবর্বত গাত্র হইতে নি:স্থত একটি জলধারার নাম গুপ্তগঙ্গা । এই জলধারাটি যে কোথা হইতে আসিতেছে তাহ কেহই বলিতে পারে না । স্থানীয় লোকদের বিশ্বাস যে রুপনাথ শিবের অভিষেকের জন্য গঙ্গা গুপ্ত ভাবে এই ধারার মধ্যে প্রবাহিত হইতেছেন। নিকটস্থ অনুরূপ একটি কুণ্ডের নাম পাতালগঙ্গা। এই স্থানে শিবরাত্রি ও বারুণীর সময়ে বহু যাত্রীর সমাগম হয় । রুপনাথ শিবের দক্ষিণে একটি জলাশয়ের ধারে কাল পাথরের একটি প্রকাণ্ড হস্তী যুক্তি আছে। দেখিলে মনে হয় ঠিক যেন জীবন্ত বন্য হস্তী জল পানের জন্য আসিয়াছে। শ্রীহট্ট জেলা চৈতন্য-যুগের বহু বৈষ্ণব ভক্তের জন্মভূমি। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক নিবাস ছিল শ্রীহট্টে। শ্রীহট্ট হইতে ১৪ মাইল দক্ষিণ পূবেব “ঢাকা দক্ষিণ ” দত্তরাইল নামক গ্রামে চৈতন্য দেবের জনক জগন্নাথ মিশ্রের জন্মস্থান। এখানে মহা-প্রভুর মন্দির আছে। ইহা ঠাকুর বাড়ী নামে খ্যাত। শ্রীচৈতন্যদেব বৃদ্ধ পিতামহীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া তাহাকে দুইটি মুক্তি দিয়া যান বলিয়। কথিত। একটি নিজের এবং অপরটি কৃষ্ণমুক্তি। দুটি মুক্তিই ঠাকুর বাড়ীতে পূজিত হয়। শ্রীহট হইতে এই স্থান পৰ্য্যন্ত ভাল রাস্ত আছে। ঢাকা দক্ষিণে কৈলাস নামক ছোট একটি পাহাড়ে গোপেশ্বর শিব আছেন। শ্রীহট্ট হইতে সীমারে করিয়া এই জেলার প্রাচীন লাউড়ের অন্তর্গত অন্যতম মহকুমা সুনামগঞ্জে যাইতে হয়। শ্রীহট্ট হইতে সুনামগঞ্জ নদীপথে ৬৫ মাইল দূর। স্টীমারে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় লাগে। সুনামগঞ্জ হইতে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের অন্তর্গত নবগ্রামের পণাতীর্থে যাওয়া যায়। নবগ্রাম প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব অদ্বৈত আচার্য্যের জন্মস্থান। স্বীয় জননীর স্নানের জন্য অদ্বৈত আচাৰ্য্য শক্তিবলে লাউড় পাহাড়ের উপর সমগ্র তীর্থের সমাবেশ করেন। তীর্থগণ বৎসরের মধ্যে একদিন লাউড়ে আসিবার জন্য পণ করিয়াছিল বলিয়াই ইহার নাম পণাতীর্থ। এই তীর্থটি একটি ধরণ ঈশান নাগর কৃত "অদ্বৈত প্রকাশ” গ্রন্থে পণাতীর্থের বিবরণ সবিস্তারে বর্ণিত আছে। বারুণীর সময়ে এখানে বিস্তর জন সমাগম হয়। লাউড়ে প্রাচীন কালে ভগদত্ত নামে এক রাজা ছিলেন বলিয়া কথিত। দৈবশক্তি সম্পন্ন দ্রুতগামী হস্তী পৃষ্ঠে তিনি রাজ্যের সীমান্ত পৰ্য্যস্ত ভ্রমণ করিতেন। কেহ কেহ বলেন ইনিই কামরূপ রাজ ভগদত্ত। লাউড় কামরূপের অন্তর্গত ছিল। শ্রীহট্ট হইতে প্রায় ৩০ মাইল দূরে শ্রীহট্ট-শিলং মোটর রাস্তার উপর জয়ন্তীয়াপুর অবস্থিত। এখানে জয়ন্তীয়া রাজ্যের রাজধানী ছিল। জয়ন্তীয়ারাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জয়ন্তেশ্বরী নামক এক কালীমন্দির এখানে বিদ্যমান আছে। পূবেৰ্ব এই কালীর নিকট নরবলি দেওয়া হইত। এখনও প্রতি অমাবস্য তিথিতে বহু লোক এখানে পূজা দিতে আসে। লাতু-আখাউড়া জংশন হইতে ৫৪ মাইল। স্টেশন হইতে ৫ মাইল দূরে পঞ্চখণ্ডের সুপতলা গ্রামে বামুদেবের মন্দির বিদ্যমান। এক খণ্ড কালে পাথরে তিনটি মুন্দর মুক্তি উৎকীর্ণ।