পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ રG. ১৩ টি তোপের সম্মানের অধিকারী। কোচবিহারের সহিত বাংলা সরকারের কোন রাজনৈতিক সম্বন্ধ নাই, ইহা ভারত সাম্রাজ্যের প্রাচ্য রাজ্যব্যুহের অন্তর্গত। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র রাজ্য কোচবিহার সদর, মাথাভাঙ্গা, মেখলিগঞ্জ ও তুফান গঞ্জ এই চারি উপবিভাগে বিভক্ত। ইংরেজ শাসিত প্রদেশের ন্যায় এই রাজ্যেও হাইকোর্ট, নিয়ন আদালত, জেলখানা এবং স্বতন্ত্র পুলিস, জজ, ম্যাজিয়েট্রেট প্রভূতি আছে। তন্ত্রগ্রন্থে কোচবিহারের নাম “ কোচবষ্ণুপুর ” রূপে উল্লিখিত আছে। কথিত আছে, এই অঞ্চল শিবের অতি প্রিয় বিহারক্ষেত্র বলিয়৷ ইহার নাম “ কোচবিহার ” হইয়াছে। - ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে কোচবিহার রাজ্য ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সহিত সন্ধি সুত্রে আবদ্ধ হয়, তৎপূবেৰ্ব ইহা সম্পূর্ণ স্বাধীন রাজ্য ছিল। পূর্বকালে কোচবিহার প্রাচীন কামরুপ-খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কামতারাজ্যের শেষ রাজা নীলাম্বরের পতনের পর (“ দিনহাটা " দ্রষ্টব্য) কোচনেতা বিশু বা বিশ্বসিংহ ক্ষদ্র ক্ষুদ্র পাবর্বত্য জাতিগুলিকে সঙ্ঘবদ্ধ করিয়া একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং গৌড়েশ্বর হুসেন শাহের বিজিত অঞ্চলের কতকাংশ অধিকার করিয়া আনুমানিক ১৫১৫ খৃষ্টাব্দে কোচবিহার নামে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। কোচজাতি প্রাচীন ক্ষত্রিয় জাতির একটি শাখা বলিয়া প্রসিদ্ধ। বিশ্বসিংহের সময়ে কোচরাজ্য পূবেৰ্ব কামরূপ জেলার বড়নদী ও পশ্চিমে করতোয় নদী পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কথিত আছে, বিশ্বসিংহ কামাখ্যার সুপ্রসিদ্ধ কামপীঠের আবিষ্কার করেন। “পাও” স্টেশন দ্রষ্টব্য। ১৫৪০ খৃষ্টাব্দে বিশ্বসিংহের মৃত্যুর পর তাহার পুত্র মল্লদেব বা নরনারায়ণ রাজা হন। মল্লদেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শুক্লধ্বজ ৰ৷ চিলারায় কোচ বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। তাহার ন্যায় বীর তৎকালে অতি অল্পই ছিল। তিনি বাছৰলে আহোম, কাছাড়, মণিপুর, জয়ন্তীয়া, ত্রিপুরা, শ্রীহট্ট প্রভৃতি জয় করিয়া কোচ সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত করেন। এই সময়ে তাহার অপর ভ্রাতা কমলা ব্ৰহ্মপুত্রের ধার দিয়া যে সামরিক রাজপথ নিৰ্ম্মাণ করেন তাহা এখনও স্থানে স্থানে দৃষ্ট হয় ও গোহাঁই কমলা আলি নামে পরিচিত। কামাখ্যা দেবীর বর্তমান মন্দিরটি শুক্লধূজের চেষ্টায় নিৰ্ম্মিত হয়। ১৫৬০ খৃষ্টাব্দে গৌড়ের সুলতানের সহিত কোচ সাম্রাজ্যের সংঘর্ষ ঘটে এবং সেই যুদ্ধে মহাবীর চিলারায় পরাজিত ও বন্দী হন - নরনারায়ণ তখন সম্রাট আকবরের সহিত যোগ দিয়া গৌড় রাজ্য আক্রমণ করিয়া বহু দূর পর্য্যন্ত রাজ্য বিস্তার করিতে সমর্থ হন। ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে নরনারায়ণের মৃত্যুর পর কোচরাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়। সঙ্কোশ নদীর পশ্চিম দিকের অংশ অর্থাৎ বর্তমান কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কিয়দংশ নরনারায়ণের পুত্র লক্ষ্মীনারায়ণের ভাগে পড়ে, এবং সঙ্কোশ নদীর পূববতীর ও ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় তীরস্থ ভূভাগ চিলারায়ের পুত্র রঘুদেবের অধিকার ভুক্ত হয়। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ এই দুই রাজ্যকে যথাক্রমে "কোচবিহার ” ও “কোঁচহাজে ” নামে অভিহিত করিয়াছেন। কোচবিহার রাজ্যের অধিকারী লক্ষ্মীনারায়ণ মুঘলদিগের সহিত যোগ দেন এবং দিল্লীর সম্রাটের করদ রাজা রূপে পরিণত হন। কোচহাজো রাজ্যের রাজধানী বড়পেটার অনতিদূরবর্তী বড়নগর নামক স্বানে অবস্থিত ছিল। আহোমগণ কোচহাজো রাজ্যের কিছু কিছু জয় করিয়াছিলেন। রঘুদেবের পুত্র পরীক্ষিতের সময়ে কোচবিহার ও কোচহাজো রাজ্যদ্বয়ের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হইলে সেই সুযোগে ১৬১২ খৃষ্টাব্দে মুঘলগণ কোচহাজো রাজ্য অধিকার করিয়া নিজেদের খাদ্য শাসনাধীনে আনেন। পরে পরীক্ষিতের বংশধরগণ কয়েকটি জমিদারী লাভ করিয়া বর্তমান ৰিজনি গ্রামে বসবাস করেন। “ ৰিজনি " দ্রষ্টব্য।