পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ኟፄ রাজাভাতখাওয়া জংশন—পাবৰ্বতীপুর জংশন হইতে ৯৬ মাইল দুর। ইহা দুয়ার অঞ্চলের বকসা নামক সংরক্ষিত বন বিভাগের অন্তর্গত অরণ্যজাত শাল, শিশু, খয়ের প্রভূতি কাষ্ঠ চালানের প্রধান কেন্দ্র। এখানে বক্সা বন বিভাগের দপ্তর অবস্থিত। রাজাভাতখাওয়া এই অদ্ভুত নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কথিত হয় যে, পূবেব কোচ রাজ ও ভুটিয়া রাজের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধের পর যখন শাস্তি স্থাপিত হয় তখন এই স্থানে সন্ধি ও শাস্তি স্থাপন কালে কোচরাজের নিমন্ত্রণে ভুটিয়ারাজ আহারাদি করিয়াছিলেন। এই স্থান হইতে একটি শাখা লাইন গভীর জঙ্গল ভেদ করিয়া ৯ মাইল উত্তরে জয়ন্তী পর্য্যন্ত গিয়াছে। এই শাখাপথে বক্সা রোড ও জয়ন্তী এই দুইটি স্টেশন আছে। অপর একটি শাখা লাইন উত্তর-পশ্চিমে ১৭ মাইল দূরবত্তী দলসিংপাড়া পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। শেষোক্ত শাখায় গারোপাড়া, কালচিনি, হ্যামিলটনগঞ্জ, হালিমার ও দলসিংপাড়া এই কয়টি স্টেশন ও উহাদের আশে পাশে বহু চা-বাগান আছে। কালচিনির চায়ের বাজারে নাম আছে। হাসিমারায় সুমিষ্ট আনারস পাওয়া যায়; হাসিমারা স্টেশন হইতে ৮ মাইল পশ্চিমে তোসা নদী পার হইয়া বাংলা-দুয়ার রেলপথের মাদারীহাট স্টেশন অবস্থিত। হ্যামিলটুন্‌গঞ্জের কাঠের কারবার প্রসিদ্ধ। দলসিংপাড়ার সুমিষ্ট কমলা লেবুর খ্যাতি আছে। - বকস রোড—পাবর্বতীপুর জংসন হইতে বক্সা রোডের দূরত্ব ১০২ মাইল। অরণ্য মধ্যস্থ এই স্টেশন হইতে ভূটান সীমান্তের নিকট অবস্থিত বকুল ছাউনী বা সেনা নিবাসে যাইতে হয়। স্টেশন হইতে বকসা প্রায় ৫ মাইল উত্তরে। প্রথম তিন মাইল পথ জঙ্গলের মধ্য দিয়া গিয়াছে। ইহার পর সাঁতরাবাড়ী নামক স্থান হইতে পাহাড়ী পথ সুরু হইয়াছে। রেল স্টেশন হইতে বক্সা পৰ্য্যন্ত বেশ ভাল রাস্ত আছে। মোটর কার বা এক্কখ যোগে যাওয়া যায়। বকৃসার সেনা নিবাস ভুটান পাহাড়ের সানুদেশে প্রায় ১৮০০ ফুট উচেচ অবস্থিত। ইহার নিকটবর্তী উচচতম পবর্বতশৃঙ্গ ছোট সিন্ধুলা প্রায় ২৪৫৭ ফুট উচচ। বক্সার পাবর্বত্যপথ দিয়া ভুটান তিববত ও মধ্য-এসিয়ায় যাওয়া যায়। ভুটিয়ারা যাহাতে বাংলার সমতল ভূমিতে আসিয়া অত্যাচার করিতে না পারে সেই জন্য উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় পাদে এখানে একটি সেনা নিবাস ও দুর্গ নির্মিত হইয়াছিল। বৰ্ত্তমানে এই দুর্গটি বন্দীনিবাস রূপে ব্যবহূত হইতেছে। এখানে ভুটিয়ারা গজদন্ত, মোম, মধু, কমল লেবু, ভোট-কম্বল, মৃগনাভি, গণ্ডারের শৃঙ্গ ও এণ্ডি কাপড় প্রভৃতি বিক্রয় করিতে আসে। বক্সার পথ দিয়া মধ্য-এশিয়া, তিববত ও ভুটান প্রভৃতি স্থান হইতে ভারতবর্ষে বহু পরিমাণে পশম আমদানি হয়। ভুটিয়ারা চাউল, তামাক, সুপারি ও বস্ত্রাদি কিনিয়া লইয়া যায়। সমুদ্রের উপর হইতে বক্স সেনানিবাস ১,৮০০ ফুট উচচ; ইহা একটি স্বাস্থ্যকর স্থান। সেনানিবাসের ৭ মাইল উত্তরে অবস্থিত ৫,৬০৫ ফুট উচচ ছোট সিন্ধুলা গিবিশৃঙ্গ জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে সবের্বাচচ পবর্বতশিখর ; ইহার পর হইতেই ভুটান রাজ্যের আরম্ভ। জয়ন্তী—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে জয়ন্তী ১০৫ মাইল দূর। ইহার নিকটেই অরণ্য বেষ্টিত পবর্বতমালা অবস্থিত। রাজাভাতখাওয়া হইতে গভীর জঙ্গল মধ্য দিয়া ট্রেন আসিবার সময়ে প্রায়ই -বন-মুরগী প্রভূতি দেখিতে পাওয়া যায়। এই জঙ্গলের দৃশ্য সত্যই অতি মহান ও গম্ভীর। বন্য হস্তী ব্যাঘ্র প্রভূতি হিংস্র প্রাণী এই জঙ্গলে দেখিতে পাওয়া যায় এবং শিকারের জন্য বহু লোক এ অঞ্চলে আসিয়া থাকেন। জয়ন্তীতে একটি চুণের কারখানা আছে। এই স্বান হইতে অনতিদূরে