পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ©ጫ মুখরিত হইয় উঠে। দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ও চৈত্রমাসে অশোকাষ্টমী তিথিতেও এখানে বহু নরনারীর সমাগম হয়। তাহা ছাড়া বৎসরের সবর্ব সময়েই এখানে ধৰ্ম্মপ্রাণ তীর্থযাত্ৰিগণ আগমন করিয়া থাকেন । উমানন্দ—কামাখ্যা দেবীর ভৈরব বা রক্ষক উমানন্দ মহাদেবের মন্দির ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। কামাখ্যা হইতে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় দুই মাইল। গৌহাটি শহরের খেয়াঘাট হইতে সটীমলঞ্চ অথবা নৌকাযোগে এই দ্বীপে যাইতে হয়। বর্ষাকালে নৌকার যাওয়া নিরাপদ নহে, কারণ এই সময়ে ব্ৰহ্মপুত্রে অত্যন্ত প্রবল স্রোত বহিতে থাকে। হরিদ্বর্ণ বৃক্ষাদি শোভিত উমানন্দ দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্য বড়ই মনোরম। উমানন্দ পাহাড়টির উচচতা তত বেশী নহে, তবে ইহার সিড়িগুলি কতকটা খাড়াভাবে অবস্থিত। ভৈরবের মন্দিরে যাইতে পথের দুইদিকে পলাশ, গোলক চাপা, কাঠাল, আম, নারিকেল, শিমুল, তেঁতুল প্রভৃতি গাছ দেখিতে পাওয়া যায়। এই ক্ষুদ্র দ্বীপটিতে কতকগুলি অদ্ভুত জাতীয় উল্লুক আছে। ইহাদের লাঙ্গুল দীর্ঘ, গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ ও মুখ হনুমানের মত। নিকটবৰ্ত্তী আর কোথাও এই শ্রেণীর উল্লুক দেখিতে পাওয়া যায় না। যাত্রীরা ইহাদিগকে কলা প্রভূতি খাইতে দিয়া থাকেন। উমানন্দের মন্দিরটি একচুড়া বিশিষ্ট; ইহার স্থাপত্য প্রণালীও কামাখ্যা মন্দিরের ন্যায়। কামাখ্যার ন্যায় এখানেও গুহামধ্যে নামিয়া দীপালোকের সাহায্যে দেবদর্শন করিতে হয়। উমানন্দ শিবলিঙ্গটি পিতল নিৰ্ম্মিত পঞ্চমুখী ডেকচির দ্বারা আবৃত। ভৈরবের নিকটেই দ্বাদশটি শালগ্রাম ও অষ্টধাতু নিৰ্ম্মিত দশভুজ ও পঞ্চ মস্তক বিশিষ্ট চণ্ডীর বিগ্রহ অবস্থিত। মন্দির-গহ্বরে একটি ক্ষুদ্র কুণ্ড আছে। ইহা ভোগবতী গঙ্গা নামে পরিচিত। উমানন্দ দ্বীপে ভৈরবের সেবায়েত ভিনন অপর কাহারও বাসস্থান নাই । উমানন্দের মন্দিরের উত্তর দিকে আর একটি ভগ্নপ্রায় প্রাচীন মন্দির দেখিতে পাওয়া যায় ; ইহার নিকটে বৈদ্যনাথ নামক অপর একটি শিব বিরাজমান। কথিত আছে, যে পূবেৰ্ব উমানন্দ শৈল নীল পবর্বত বা কামাখ্যার সহিত অবিচিছন ছিল । কালক্রমে ব্ৰহ্মপুত্রের স্রোতের বেগে ইহা মূলপবর্বত শ্রেণী হইতে পৃথক হইয়া একটি দ্বীপে পরিণত হইয়াছে। শিবরাত্রির সময় উমানন্দ শৈলে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। যাহারা কামাখ্যা দশন করিতে যান তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই উমানন্দ দর্শন করিয়া থাকেন। উমানন্দ শৈলের উত্তর দিকে ব্ৰহ্মপুত্র গর্তে উবর্বশী নামে আর একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে। এখানে উবৰ্বশী কুণ্ড নামে একটি তীর্থ ছিল, বর্তমানে উহা বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি বর্ষাকালে জলমগ্ন হইয়া যায় বলিয়া জলযানের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উহার উপর একটি শুভ্রবর্ণ স্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত আছে। . গৌহাটি—কামরূপ জেলার সদর ও আসামের সবর্বপ্রধান শহর গৌহাটি কামাখ্যা হইতে মাত্র দুই মাইল দূর। পাণ্ডু হইতে ট্রেণে, মোটরবাসে অথবা ঘোড়ার গাড়ীতে গৌহাটি যাওয়া যায়। অসমীয়াগণ গৌহাটিকে "গুয়াহাটি” বলেন। ইহার পূর্ব নাম গুবাক হাট। ব্ৰহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত গৌহাটি একটি সুন্দর ও পরিপাটী শহর। উত্তর তীরে উত্তর গৌহাটি নামে একটি গ্রাম আছে।