পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ 85 (জ) নারায়ণগঞ্জ—ঢাকা—বাহাদুরাবাদ । কলিকাতা হইতে গোয়ালন্দ হইয়া নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ২৫৯ মাইল। গোয়ালন্দ ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে প্রত্যহ ডাকবাহী স্টীমার যাতায়াত করে। এই জলপথের দূরত্ব ১০৪ মাইল। গোয়ালন্দ ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যবৰ্ত্তী স্টীমার স্টেশনগুলির মধ্যে টেপাখোলা, কুতুবপুর-পদ্মা, ভাগ্যকুল, তারপাশ, বহর, মুন্সীগঞ্জ ঘাট ও মিরকাদিম ব্যবসায় প্রধান ও উল্লেখ যোগ্য স্টেশন। ভাগ্যকুলের রায় উপাধিধারী বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জমিদারবংশ বাংলার অন্যতম ধনী পরিবার বলিয়া প্রসিদ্ধ। ভাগ্যকুল হইতে প্রায় দুই মাইল দূরবর্তী রাঢ়ীখাল গ্রাম বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পরলোকগত আচাৰ্য্য সার জগদীশ চন্দ্র বসু মহাশয়ের জন্মস্থান। ভাগ্যকুল হইতে ছয় মাইল দূরবর্তী ষোলঘর গ্রাম কলিকাতা হাইকোর্টের প্রথম বাঙালী প্রধান বিচারপতি স্বৰ্গীয় স্যর চন্দ্রমাধব ঘোষ মহাশয়ের জন্মস্থান । তারপাশা একটি বিখ্যাত স্টীমার স্টেশন। এই স্থান হইতে স্টীমারযোগে মাদারিপুর ও খুলনা প্রভৃতি স্থানে যাওয়া যায়। তারপাশ স্টেশনের অতি নিকটে ঢাকা জেলার অন্যতম বন্দর লৌহজঙ্গ অবস্থিত। লৌহজঙ্গের পাল চৌধুরী বংশও বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও ধনী। পূবেব লৌহজঙ্গে এই বংশের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন ও একুশরত্ন মঠ বিশেষ দ্রষ্টব্য বস্তু ছিল। কিন্তু কীৰ্ত্তিনাশা পদ্মার ভাঙ্গনে উহা নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে। লৌহজঙ্গের নিকটবৰ্ত্তী ব্রাহ্মণগ নামক পল্লী শ্রীমতী সরোজিনী নাইডুর পিতা স্বগীয় ডক্টর অঘোর নাথ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের জন্মস্থান। পদ্মার ভাঙ্গনে এই পল্লীটিও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ইহয়াছে। বহর স্টেশনটি সাধারণের নিকট রাজাবাড়ী নামে পরিচিত। রাজাবাড়ীতে বিক্রমপুরের সুবিখ্যাত ভৌমিক ইতিহাস প্রসিদ্ধ কেদার রায়ের মাতার শ্মশানের উপর নিৰ্ম্মিত একটি অতি সুন্দর ও সু-উচচ মঠ ছিল। পদ্মানদীর বহু দূর হইতে এই মঠের চুড়া দেখিতে পাওয়া যাইত। এরূপ সুন্দর মঠ বাংলা দেশে অতি অল্পই ছিল। কয়েক বৎসর পূবেৰ্ব এই মঠটি গর্ভসাৎ করিয়া পদ্মা তাহার কীৰ্ত্তিনাশা নাম সম্পূর্ণরূপেই সার্থক করিয়াছে। বহরের নিকটবৰ্ত্তী দীঘির পাড় ঢাকা জেলার অন্যতম বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র । বহর বা রাজাবাড়ীর বিপরীত দিকে পদার অপর পারে বর্তমান ফরিদপুর জেলার এলাকায় ইংরেজ ঈসটু ইণ্ডিয়া কোম্পানির ঢাকাস্থ নায়েব দেওয়ান মহারাজা রাজবল্লভের বাসস্থান রাজনগর অবস্থিত ছিল। রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত একুশ চূড়া বিশিষ্ট মঠ ও অন্যান্য কীৰ্ত্তিও পদ্মার কুক্ষিগত হইয়াছে। বহর হইতে প্রায় তিন মাইল দূরে বাধিয়া গ্রামে লস্কর দীঘি নামক একটি পুরাতন দীঘি ও তীরে অতি সুন্দর কারুকার্য্য খচিত একটি শিবমন্দির আছে। ৰূপরাম লস্কর নামক জনৈক ব্যক্তি এই দীঘি ও শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বহরের অদূরবর্তী তেলিরবাগ গ্রাম দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পৈতৃক বাসস্থান। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে চাদরায় ও তাঁহার পুত্র বা ভ্রাতা কেদার রায় বিক্রমপুরে পদ্মার কুলে শ্রীপুর নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করিয়া সবিক্রমে রাজত্ব করিতে থাকেন। তাহারা যথেষ্ট নৌবল সঞ্চয় করিয়া সন্দ্বীপ প্রভৃতি অঞ্চল অধিকার করেন। শ্রীপুর তখন একটি প্রসিদ্ধ পোতাশ্রয় ছিল এবং পর্তুগীজগণও জাহাজ মেরামতের জন্য এই স্থানে আসিতেন। সন্দ্বীপ