পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8及 বাংলায় ভ্রমণ পরে টাদৱায়ের হস্তচ্যুত হয় এবং কিছু কাল পর্তুগীজগণের অধীনে আসিয়া আরাকান বাজে| হস্তগত হয় ; তখন পর্তুগীজ নেত কার্ভালো প্রভৃতি পলাইয়া আসিয়া শ্রীপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই সময়ে চাঁদ রায়ের মৃত্যুর পর মহারাজ মানসিংহ মন্দ রায় নামক একজন সেনাপতিকে শ্রীপুর অধিকার করিবার জন্য প্রেরণ করিলে নৌযুদ্ধে কেদার রায় ও কার্ভালো তাঁহাকে পরাস্ত ও নিহত করেন। তখন মহারাজ মানসিংহ স্বয়ং কেদার রায়কে দমন করিতে আসেন। কেদার পরাজিত হইয়া সপরিবারে সমুদ্রাভিমুখে পলায়ন করেন। অতঃপর তাঁহাদের মধ্যে সন্ধি হয়, কিন্তু কেদার সন্ধিমত কর না দেওয়ায় মহারাজ মানসিংহের আদেশে সেনাপতি কিলমক্ বিপুল বাহিনী লইয়া শ্রীপুর আক্রমণ করেন ; কিন্তু তিনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। কেদার সহজ শত্ৰু নহেন বুঝিতে পারিয়া মানসিংহ স্বয়ং চতুরঙ্গবাহিনী সজ্জিত করিয়া শ্রীপুরের নিকটে আসিয়া হানা দিলেন! কথিত আছে, যে মানসিংহ একজন দূতের নিকট একখানি তরবারী ও একটি শৃঙ্খল সহ নিম্নলিখিত মিশ্রভাষায় রচিত শ্লোকটি লিখিয়া পাঠান, - “ত্রিপুর মঘ বাঙ্গালী কাককুলী চাকালী সকল পুরুষ মেতৎ ভাগি যাও পলায়ী হয়-গজ নর-নৌকা কম্পিত বঙ্গভূমি বিষম সমর সিংহে মানসিংহ প্রযাতি । ” মহাবীর কেদার এই সিংহের হুঙ্কারে ভীত না হইয়া দূতের নিকট হইতে তরবারি গ্রহণ করিলেন এবং তাহার হাত দিয়া মানসিংহকে নিয়লিখিত সংস্কৃত শ্লোকটি লিখিয়া পাঠাইলেন, “ভিনত্তি নিত্যং করিরাজকুম্ভং বিভত্তি বেগং পবনাদতীব করোতি বাসং গিরি গহবরেষু তথাপি সিংহঃ পশুরেব নান্যঃ । ” অত:পর উভয় পক্ষের প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হইল। নয় দিন বীর বিক্রমে যুদ্ধ করিবার পর মহাবীর কেদার রায় দশম দিবসে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন। মানসিংহ কেদার রায়ের গৃহদেবতা শিলাময়ী দেবী ও পুরোহিত কমলাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্যকে জয়পুরে লইয়া যান। বিগ্রহটি এখনও সন্ত্রা দেবী নামে তথায় পূজিত হইতেছেন। পুরোহিত কমলাকাস্তের বংশ জয়পুরে বিদ্যমান। এই বংশের বিদ্যাধর নানা বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন এবং অম্বর রাজ জয় সিংহের প্রধান মন্ত্রী পর্য্যস্ত হইয়াছিলেন ; সুপ্রসিদ্ধ জয়পুর শহর তাঁহারই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিৰ্ম্মিত। শ্রীপুর ও চাদরায় কেদার রায়ের কীৰ্ত্তি সমূহ আজ পদাগর্ভে বিলীন হইলেও এককালে যে উহা একটি প্রসিদ্ধ স্থান ছিল তাহ পর্য্যটক র্যাল্ফ ফিচের ভ্রমণ বৃত্তান্ত হইতে জানা যায়। ১৫৮৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বাকৃলা হইতে শ্রীপুরে আসিয়া ১৮ মাইল দূরবর্তী সোনার গাও গমন করেন এবং পুনরায় শ্রীপুরে ফিরিয়া তথা হইতে জাহাজ যোগে পেগু গমন করেন। ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে বাংলার প্রথম পাদরী ফ্রান্থসিস্ ফার্নানদেজ শ্রীপুরে আগমন করেন এবং তথায় খৃষ্টান ধৰ্ম্ম প্রচার করিবার অনুমতি পান।