পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ 8Ꮗ ঢাকা জেলায় রাজাবাড়ী, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজঙ্গ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি থানা পল্লী অঞ্চলে ঘন লোক বসতি হিসাবে, বাংলা দেশের অন্য কয়েকটি থানার সহিত পৃথিবীর মধ্যে সবের্বাচচ স্থান অধিকার করে। নারায়ণগঞ্জ-কলিকাতা হইতে গোয়ালন্দ পর্য্যস্ত রেলপথে এবং তথা হইতে স্টীমারে সব শুদ্ধ প্রায় ২৫৯ মাইল দূর। লাক্ষ্যা, শীতলাক্ষ্যা বা শীতল লক্ষী নদীর উপর অবস্থিত এই প্রসিদ্ধ বন্দর হইতে পূবর্ব-বঙ্গ রেলপথের মাঝারি মাপের একটি লাইন ঢাকা, টঙ্গী জংশন, ময়মনসিংহ জংশন, সিংহজানি জংশন প্রভূতি হইয়া ১৪২ মাইল দূরবর্তী বাহাদুরাবাদ পর্য্যস্ত গিয়াছে। পূর্ব-বঙ্গ রেলপথের ইহা একটি বিচিছন্ন অংশ। নারায়ণগঞ্জ হইতে স্টীমার পথে একদিকে মুন্সীগঞ্জ, তারপাশা, ভাগ্যকুল, টেপাখোলা প্রভৃতি হইয়া গোয়ালন্দ ও অপর দিকে চাঁদপুর ও মেঘনা পথে ভৈরব, সুনামগঞ্জ, ছাতক প্রভৃতি হইয়া শ্রীহট্ট পৰ্য্যন্ত পাওয়া যায়। শীতলক্ষ্যা নারায়ণগঞ্জের ৩ মাইল দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদীর সহিত মিশিয়াছে এবং পূবর্বদিকে অল্প কিছুদূর গিয়া পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্র ও মেঘনার সহিত মিলিত হইয়াছে। এই মোহানা কলাগাছিয়া নামে খ্যাত। কয়েক মাইল দক্ষিণে গিয়া এই মিলিত জলধারা পদ্মায় গিয়া পড়িয়াছে। ইহার পর হইতে পদ্মা মেঘনা নামেই পরিচিত। শীতলক্ষ্যা সাতখামাইর স্টেশনের ১০ মাইল পূবর্বদিকে পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্র হইতে নির্গত হইয়াছে ; উপরের দিকে ইহা বানার নামে পরিচিত; এককালে শীতলক্ষ্য পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্রের প্রধান খাত ছিল। ধলেশ্বরী ময়মনসিংহ জেলার সেলিমাবাদের উত্তরে নূতন ব্ৰহ্মপুত্র বা যমুনা হইতে উঠিয়া এলাশিন, কেদারপুর, সাভারের পাশ দিয়া বহিয়৷ আসিয়াছে ; ধলেশ্বরী যমুনা হইতে অনেক পুরাতন নদী এবং ইহার খাত দিয়া এক কালে ব্ৰহ্মপুত্র প্রবাহিত হইত। মেঘনা মণিপুর রাজ্যের উত্তর সীমাস্থ পবর্বতশ্রেণী হইতে বাহির হইয়া প্রথমে সুরমা ও পরে মেঘনা নামে পরিচিত হইয়াছে ; নীচের দিকে ইহা ঢাকা ও ত্রিপুর জেলার সীমা রক্ষা করিয়াছে। নারায়ণগঞ্জের ৪ মাইল পশ্চিমে বুড়ীগঙ্গা ধলেশ্বরীর পূবর্বকূলে আসিয়া মিশিয়াছে ; বুড়ীগঙ্গা সাভার থানার ৪ মাইল দক্ষিণে ধলেশ্বরী হইতে বাহির হইয়া ঢাকা নগরীর পশ্চিমপ্রাস্ত বাহিয়া আসিয়াছে; কালিকাপুরাণে বৃদ্ধগঙ্গা বা বুড়ীগঙ্গার উল্লেখ আছে; এককালে ইহা গঙ্গার কোনও খাত ছিল বলিয়া অনুমিত হয়। বুড়ীগঙ্গা-ধলেশ্বরী সঙ্গমের ২ মাইল দক্ষিণে বিক্রমপুরের ইছামতী নদী ধলেশ্বরীর পশ্চিম কূলে আসিয়া মিশিয়াছে; পাবনা, যশোহর, চৰিবশ পরগণা প্রভূতি স্থানেও ইছামতী নামে নদী দৃষ্ট হয়। (প্রধান লাইনের ঈশ্বরদি স্টেশন দ্রষ্টব্য)। কেহ কেহ অনুমান করেন যে এক কালে ইছামতী পুণ্য সলিল করতোয়ার শাখা ছিল ; কাত্তিকী পূর্ণিমায় যেমন এখনও করতোয়ায় লোকে তীর্থ স্নান করেন, সেইরূপ বিক্রমপুরে ইছামতীর পঞ্চতীথ ঘাটে আজও লোকে উক্ত তিথিতে স্নান করিয়া পুণ্যসঞ্চয় করেন। এতগুলি নদীর সঙ্গম স্থলের নিকট অবস্থিত বলিয়৷ নারায়ণগঞ্জ একটি স্বাভাবিক বন্দর। আন্দাজ ১৭৬০ খৃষ্টাব্দে বর্তমান নারায়ণগঞ্জটি স্থাপিত হয়। ১৮১৪ খৃষ্টাব্দেও এখানে একটি বড় লবণের গোল ছিল এবং তথা হইতে প্রতি বৎসর পাঁচলক্ষ মণ লবণ আমদানি হইত। তৎকালে চীন ও মগ বণিকের কারবারের জন্য এখানে আসিত। ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ স্বাধীন বন্দর বলিয়া ঘোষিত হইয়াছিল। ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হয়। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দের ১২ই মে হইতে নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম বন্দরের অধীন বন্দর বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে। মুসলমান