পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ 8ፃ সোনারগায়ের অনেক স্থানে কোচ দিগের প্রতিষ্ঠিত দীঘি দেখিতে পাওয়া যায়। সোনারগায়ের “ হরিদাস খানি ? দই ও সরভাজা প্রসিদ্ধ । লাঙ্গলবন্ধ—নারায়ণগঞ্জ হইতে ৪ মাইল উত্তর-পূবেব পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্রের পশ্চিম কূলে অবস্থিত। চৈত্রমাসে অশোকাষ্টমীর সময়ে দূরদূরান্তর হইতে বহুলোক এই স্থানে ব্ৰহ্মপুত্রে স্নান করিতে আসেন। এই সময়ে দুই তিন দিন স্থায়ী চৈত্রবারুণী নামে একটি মেলা বসিয়া থাকে ; মলায় লোকশিল্পের নিদশন স্বরূপ কিছু কিছু দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। অশোকাষ্টমী তিথিতে জগতের কল তীর্থ, নদী ও সাগর ব্ৰহ্মপুত্র নদে উপনীত হয় বলিয়া কথিত। অনেকে এই সময়ে এক মাস রিয়া লাঙ্গলবন্ধে তীর্থাবাস করেন; ইহা প্রয়াগে কল্প বাসের কথা সমরণ করাইয়া দেয়। কথিত আছে পরশুরাম মাতৃহত্যা করিলে তাহার কুঠারটি হস্ত হইতে আর বিচিছা হয় না ; তখন পিতার আদেশে ব্ৰহ্মকুণ্ডে স্নান করিয়া মাতৃহত্য জনিত পাপ হইতে মুক্ত হন ও কুঠারটি হস্ত ইতে স্থলিত হয়। তখন তিনি মানবের কল্যাণের জন্য কুঠারটিকে লাঙ্গলৰূপে ব্যবহার করিয়া ব্রহ্মকুণ্ডের জলরাশি সমতল ক্ষেত্রে লইয়া আসেন; কিন্তু এই স্থানে পৌছিয়া তাহার কুঠার বা লাঙ্গল আটকাইয়া যায়। ব্ৰহ্মপুত্রকে শীতলক্ষ্যার সহিত মিলিতে নিষেধ করিয়া তীর্থরাজে পরিণত করিবার মানসে পরশুরাম তীর্থযাত্রা করেন। ইতিমধ্যে ব্ৰহ্মপুত্র পরশুরামের অজ্ঞাতে শীতলক্ষ্যার দর্শনে গমন করেন। খবর পাইয়া শীতলক্ষ্যা বৃদ্ধার বেশে পথিমধ্যে বসিয়া থাকেন। ব্ৰহ্মপুত্র তাহাকেই আসিয়া জিজ্ঞাসা করেন শীতলক্ষ্যা আর কতদূরে। বৃদ্ধ তখন বলিলেন যে তিনিই শীতলক্ষ্যা, ব্ৰহ্মপুত্রের তাণ্ডবরবে ভীত হইয়া ছদ্মবেশ গ্রহণ করিয়াছেন । ইহা শুনি "ব্রহ্মপুত্র লজ্জা পাইয়া লাঙ্গলবন্ধে ফিরিয়া গেলেন। তীর্থ হইতে ফিরিয়া পরশুরাম সকল বৃত্তান্ত শুনিয়া ব্ৰহ্মপুত্রের উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। অবশেষে ব্ৰহ্মপুত্রের অনুনয় বিনয়ে শাস্ত হইয়া তিনি বলেন যে বৎসরে মাত্র একদিন অশোকাষ্টমী তিথিতে ব্ৰহ্মপুত্র নদ তীর্থরাজ হইবে ও ইহার পশ্চিম কূলে স্নান করিলে সকল তীর্থ স্নানের ফললাভ হইবে। ব্ৰহ্মপুত্রের পূবৰ্বতীরের স্থান পাণ্ডব-বজ্জিত বলিয়া কথিত । লাঙ্গলবন্ধে জাগ্রত প্রাচীন জয়কালী দেবী ব্যতীত বহু দেবদেবী প্রতিষ্ঠিত আছেন। স্নান ঘাটের নিকট একটি বটতলা প্ৰেমতলা নামে খ্যাত ; অশোকাষ্টমীর সময়ে বৈষ্ণবগণ এই স্থানে সমবেত হইয়া অহোরাত্র নামকীৰ্ত্তন করেন বলিয়া ইহার নাম প্ৰেমতলা । কথিত আছে পাণ্ডবগণ বনবাস কালে এই স্থানে আগমন করিয়াছিলেন। লাঙ্গলবন্ধ হইতে ৪ মাইল উত্তর-পূবেব ব্ৰহ্মপুত্রের পশ্চিমকুলে পঞ্চমীঘাট নামক স্থানে তাহারা স্নান ও তর্পণ করিয়াছিলেন বলিয়। কথিত ; তথায় এখনও যাত্রীরা স্নান ও তর্পণ করিয়া থাকেন। অশোকাষ্টমীতে এই স্থানেও লোকে স্নান করিয়া থাকেন। বারদী—মেঘনাকুলে নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। নারায়ণগঞ্জ হইতে মেঘনা পথে ভৈরব হইয়া শ্রীহট্ট পর্য্যস্ত যে স্টীমার যায় ঐপথে বারদী স্টীমার ঘাট মাত্র ৪ ঘণ্টার পথ। এইগ্রামে সুপ্রসিদ্ধ সাধক লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম ছিল। তাঁহার সম্বন্ধে নানারূপ অলৌলিক ঘটনার কথা শোনা যায়। ১৭৩০ খৃষ্টাব্দে পশ্চিম-বঙ্গের কোনও গ্রামে তাহার জন্ম হয়। কথিত আছে তাহার পিতা বংশের উদ্ধার-সাধন মানসে বালক লোকনাথকে উপবীত দিয়া আচাৰ্য্য গুরু ভগবান গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে সন্ন্যাস জীবনের জন্য সঁপিয়া দিয়া চিরতরে বিদায় দেন। তিনি বহুকাল হিমালয়ে তপস্যা করিয়াছিলেন এবং আরবদেশ, ইউরোপ খণ্ড প্রভৃতি নানা স্থানে ভ্রমণ