পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6○ বাংলায় ভ্রমণ মসজিদ ; মসজিদের প্রবেশ দ্বারের নিকটে দুইটি প্রস্তর স্তম্ভ হিন্দু মুসলমান রমণীগণ কর্তৃক সিন্দুর লিপ্ত হইয়া থাকে। বামপাশ্বের পশ্চিমে আবদুল্লাপুর ও পাইকপাড়া গ্রামের মধ্যে কানাইচঙ্গের মাঠ নামে একটি ক্ষুদ্র প্রাস্তর দৃষ্ট হয়। কথিত আছে এই স্থানে রাজা দ্বিতীয় বল্লালসেনের সহিত মুসলমানদিগের যুদ্ধে কানাইচঙ্গ নামক একজন সৈনিক দ্বিতীয় বল্লালের পক্ষে বিশেষ সাহস ও দক্ষতা প্রদশন করেন এবং তাহার নাম হইতে যুদ্ধক্ষেত্র কানাইচঙ্গের মাঠ নামে পরিচিত হয় । ইহা আবদুল্লাপুরের যুদ্ধ নামে অভিহিত। কাহারও কাহারও মতে এই যুদ্ধেই দ্বিতীয় বল্লালসেন নিহত হন এবং তাহার পর হইতে পূবর্ব-বঙ্গে হিন্দু রাজত্বের অবসান হয়। আব্দুল্লাপুর গ্রামে মহারাজ বল্লাল সেন নিৰ্ম্মিত মীর কাদিম খালের উপর একটি পুরাতন সাকো আজিও বিদ্যমান। বিক্রমপুরের রাজধানী রামপাল নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে স্বপ্রসিদ্ধ বজযোগিনী গ্রাম অবস্থিত। এই গ্রামটিকে একটি ছোটখাট পরগণা বলা যাইতে পারে ; ইহা সাতাইশটি পাড়ায় বিভক্ত। ইহার এক একটি পাড়া এক একখানি গ্রামের সমান। এই গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় তিনটি ডাকঘর আছে; ইহা হইতেই গ্রামখানির বিশালতা অনুমান করা যাইতে পারে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে এই গ্রাম সুপ্রসিদ্ধ বৌদ্ধাচাৰ্য্য দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশের জন্মস্থান। এই গ্রামে ৯৮০ খৃষ্টাব্দে বিশিষ্ট বৌদ্ধ জ্ঞানী ও পণ্ডিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ এক রাজবংেশ জন্মগ্রহণ করেন বলিয়া কথিত । তাহার পিতার নাম কল্যাণশ্রী ও মাতার নাম প্রভাবর্তী। বার বছর ধরিয়া দীপঙ্কর সুপ্রসিদ্ধ বজাসন বিহারে অধ্যয়ন করেন। পরে তৎকালের প্রাচ্য বৌদ্ধদের সবর্বপ্রধান স্থান সুবর্ণদ্বীপের (ব্ৰন্ধের পেগু জেলার সুধৰ্ম্ম নগর–বৰ্ত্তমান নাম থেটল ) মহাসংঘিকাচার্য্যের নিকট আরও বার বছর অধ্যয়ন করিয়া দেশে ফিরিয়া আসেন। তৎকালে তাহার ন্যায় বৌদ্ধপণ্ডিত দ্বিতীয় ছিল না । মহারাজ নয়পাল তাহাকে বিক্রমশিলা মহাবিহারের সবর্বাধ্যক্ষ পদে বরণ করেন। তথা হইতে তিবৃতীয়গণ কর্তৃক সনিববন্ধ অনুরুদ্ধ হইয়া তিনি তিবৃতে গমন করিয়া তথায় বৌদ্ধধৰ্ম্ম পুনরুজজীবিত করেন। তিববতে তাহার মুক্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। তিববতে দীপঙ্কর প্রতিষ্ঠিত বজ্রযোগিনী মূত্তির নামকরণ স্পষ্টতঃই তাহার জন্মস্থানের নাম হইতেই হইয়াছে। দীপঙ্কর শতাধিক পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। তাহার ভ্রাতুপুত্র দান-শ্রীও অসাধারণ পণ্ডিত বলিয়া খ্যাত ছিলেন। বজ্রযোগিনী গ্রামে দীপঙ্করের গৃহ এখনও নাস্তিক পণ্ডিতের বাড়ী বলিয়া পরিচিত। রামপালের দেড় মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে রঘুরামপুর গ্রামে বিক্রমপুরের চাদরায় কেদার রায়ের অব্যবহিত পূবেব রঘুরাম রায় নামে একজন স্থানীয় রাজা ছিলেন। তাহার বীর সেনাপতি রাম মালিক পল্লী কবিতায় স্থান পাহয়াছেন,— রাম মালিকের লাঠি । রঘু রামের মাটি। উঠলে লাঠির ডাক। দৌড়ে পলায় বাঘ । গুলি ফিরে ঝাঁকে। রামের লাঠির পাকে । মালিক ধরে লাঠি । যম যেন সে খাটি || (ঢাকার ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ৪৯৮ পৃষ্ঠা, যতীন্দ্র মোহন রায় ) 4a