পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

48 বাংলায় প্রমণ রীতি অনুসারে শায়েস্তা খ এদেশে প্রচলন করেন ; এজন ইহা শায়েস্তাখানী ধরণ নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদের স্বপ্রসিদ্ধ কাটুর মসজিদ এই ধরণে নিৰ্ম্মিত। বুড়ীগঙ্গর তীরের মত চকবাজারেও মুঘল যুগের একটি তোপ পড়িয়া আছে। বাবু বাজারে শায়েস্তা খাঁ নিৰ্ম্মিত আর একটি মসজিদ আছে। চক বাজারের নিকট যে স্থানে এখন জেল-হাসপাতাল অবস্থিত ঐ স্থানে মুঘল আমলে ইসলাম খার দুর্গে টাকশাল ছিল। এই টাকশালে ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির টাকাও মুদ্রিত হইয়াছিল। শহরের নারিন্দা মহাল্লায় ১৪৫৬ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত বিনট বিবির মসজিদ ঢাকার সবর্বপেক্ষা পুরাতন মসজিদ। মুর্শিদকুল খ নিৰ্ম্মিত বেগম বাজারের মসজিদ ঢাকার সবর্বাপেক্ষা বৃহৎ মৰ্যজিদ ; ইহা দেখিতেও অতি সুন্দর। আরমানি টোলায় ১৭৮১ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত আরমানি গির্জাটি সুবৃহৎ । খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বহু আৰ্ম্মেনীয় বাণিজ্যসূত্রে ঢাকায় আগমন করেন। রেল স্টেশনের সম্মুখেই খাজা আম্বরের মসজিদ ও কূপ দেখিতে পাওয়া যায় ; খাজা আদর শায়েস্ত খার প্রধান খোজা ছিলেন। স্টেশনের পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা ও রমনা মহাল্লার আরম্ভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূতপূবর্ব ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজ ভাঙ্গিয়া গড়া হইয়াছে। পুরাতন ঢাকা কলেজের বাড়ীতে এখন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল অবস্থিত। জগন্নাথ ইণ্টারমিডিয়েট কলেজ উহার কাছে একটি বৃহৎ ও সুন্দর অট্টালিকায় বিদ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাটি পরিস্কার পরিচছন ও অতি সুন্দর । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও কলেজ ভবনগুলি দেখিবার মত। নিকটেই ঢাকার চিত্রশালা ; ইহা নায়েব-নাজিম নবাৰ জসারৎ খার প্রাসাদের বার-দুয়ারী বা বৈঠকখানায় অবস্থিত; চিত্রশালার ছাদে এখনও নবাবী আমলের পুরাতন চিত্র দেখিতে পাওয়া যায়। এই চিত্রশালায় বিক্রমপুর প্রভূতি অন্যান্য স্থানের প্রাচীন মুক্তি প্রভৃতি রক্ষিত আছে এবং ঢাকা ভ্রমণকারীর ইহা অবশ্যই দ্রষ্টব্য। শহরের উত্তর-পশ্চিম কোণে ঢাকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ঢাকেশ্বরীর_মন্দির অবস্থিত ; ইহার কথা কিছু আগে বলা হইয়াছে। ভবিষ্য ব্রহ্মখণ্ডে ঢাকেশ্বরীর উল্লেখ আছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মহারাজ বল্লাল সেন কর্তৃক নিৰ্ম্মিত বলিয়া প্রবাদ । কথিত আছে, তাহার জননী নিবৰ্বাসিত হইয়৷ ঢাকার ১২ মাইল দক্ষিণ-পূবেৰ স্থিত রাণী-ঝি গ্রামে বাস করিতেন; তাহাকে লোকে রাণী-ঝি বলিয়া ডাকিত এবং সেই জন্য গ্রামটির নামও রাণীঝি হয় ; বনমধ্যে এই গ্রামে বল্লাল সেন জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয় তাহার নাম বন-লাল বা বল্লাল হয়। ইহার নিকট লক্ষ্মণ-খোলা গ্রামে মহারাজ লক্ষণ সেন একটি হাট বসাইয়াছিলেন বলিয়া কথিত। এই অঞ্চলের সহিত মহারাজ বল্লালের সম্বন্ধ জনপ্রবাদ দ্বারা সূচিত হয়। ঢাকেশ্বরীর মন্দির বহুবার সংস্কৃত হইলেও উহার পশ্চাদ্ভাগ প্রায় আদি ও অবিকৃত অবস্থায় আছে। ঢাকেশ্বরী সম্বন্ধে অপর কাহিনী প্রচলিত আছে যে মহারাজ মানসিংহ শ্রীপুরের কেদার রায়কে পরাস্ত ও নিহত করিয়া তাহার গৃহদেবী শিলাময়ীকে লইয়া প্রথমে ঢাকায় আসেন এবং তথায় ঠিক অনুরূপ আর একটি মুক্তি নিৰ্ম্মাণ করান। আসল ও নকল মূৰ্ত্তিতে ভেদ ধরিবার উপায় ছিল না। মানসিংহ কেদার রায়ের শিলাময়ীকে জয়পুরে লইয়৷ যান এবং অপরটি ঢাকেশ্বরী নামে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত করেন। শহরের উত্তরে মালীবাগ নামক স্থানে বারভূইয়ার অন্যতম চাদরায় প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কথিত সিদ্ধেশ্বরী মন্দির অবস্থিত। মন্দিরের সম্মুখে একটি রক্ত চন্দন গাছ আছে। সিদ্ধেশ্বরীর পূজারী সৌমার বন গোস্বামী স্বয়ং সিদ্ধপুরুষ ছিলেন বলিয়, কথিত। একবার আজিমপুরার সাধকপ্রবর শাহ