পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&to * * বাংলায় ভ্রমণ শহরের পশ্চিম প্রাস্তে ইদগা নামক মুসলমান-ধৰ্ম্ম স্থানটি শাহ শুজার সময়ে দেওয়ান মীর আবদুল কাশিম কর্তৃক ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয় । . . . . . শহরের পশ্চিম প্রান্তে বুড়ী গঙ্গার নিকটে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। ধূংসপ্রাপ্ত এই দুর্গের তোরণ দ্বার, প্রাকার ও স্তম্ভ প্রভৃতি যে অংশ দাড়াইয়া আছে তাহাও দেখিবার মত । সম্রাট আওরঙ্গজবের পুত্র মহম্মদ আজম যখন সুবাদার রূপে অল্পকাল ঢাকায় অবস্থান করেন সেই সময়ে তিনি এই কেল্লা ও প্রাসাদ নির্মাণ আরম্ভ করেন। শায়েস্তা খাঁর সময়ে নির্মাণকাৰ্য্য আরও অগ্রসর হয়। দুর্গ মধ্যে একটি জলাশয়ের পশ্চিমে পরী বিবির মকবরা নামে একটি মনোরম সমাধি সৌধ আছে। পরী বিবি নবাব শায়েস্তা খাঁর কন্যা ছিলেন। মকৃবরাট নিৰ্ম্মাণের জন্য চুণার, গয়া ও জয়পুর হইতে প্রস্তরাদি আনীত হইয়ছিল । সমাধি সৌধে নয়টি কক্ষ আছে এবং এগুলিতে নানা রঙের মৰ্ম্মর প্রস্তরের সুন্দর কাজ আছে। সৌধের ছাদটির নিৰ্ম্মাণরীতিতে বিশেষত্ব আছে ; কানিংহাম সাহেবের মতে ইহা হিন্দু স্থাপত্যের পরিচায়ক ; মকৃবরার চন্দন কাষ্ঠের দ্বারগুলিও হিন্দু রীতির সাক্ষ্য দিতেছে। কেল্লার ঠিক্‌ দক্ষিণ পাশ্বে ই একটি পুরাতন ফটকের বাহিরে সুবৃহৎ লালবাগ মসজিদ অবস্থিত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম-উশ-সানের পুত্র সম্রাট ফরুখ শিয়র যখন পিতার প্রতিনিধিরূপে ঢাকায় অবস্থান করিতেছিলেন সেই সময়ে এই মসজিদটি নিৰ্ম্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার নিকটেই বুড়ীগঙ্গা তীরে আজিম-উশ-সান নিৰ্ম্মিত সুপ্রসিদ্ধ পোস্তাপ্রাসাদ অবস্থিত ছিল ; এখন ইহা বুড়ীগঙ্গ গর্ভে গিয়াছে। সুপ্রসিদ্ধ বিশপ হিবার পোস্তাপ্রাসাদ দেখিয়া লিখিয়াছিলেন যে ইহার স্থাপত্য রীতি মস্কো নগরীর সুবিখ্যাত ক্রেমলিন প্রাসাদের অনুরূপ এবং ঢাকা শহর তাহাকে পদে পদে মস্কোর কথা মনে করাইয়া দিয়াছিল। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে লালবাগে বিদ্রোহীদের সহিত ইংরেজ নাবিকদলের একটি ক্ষুদ্র সংঘর্ষ হইয়াছিল ; বিদ্রোহীরা পরাজিত হইয়া জামালপুর ময়মনসিংহ অভিমুখে পলায়ন করে। ঢাকার পশ্চিম প্রান্তে মিউনিসিপাল এলাকার দুই মাইল পশ্চিমে জাফরাবাজার ও বাশবাড়ী নামক স্থানে শায়েস্তা খাঁ নিৰ্ম্মিত মনোরম সাতগুম্বজ মসজিদ অবস্থিত। সৌন্দর্ঘ্যে পরী বিবির মকুবরার পরেই ইহার স্থান । পাশে ই শায়েস্তা খার কন্যা বেগম বিবি ও গুলজার বিবির সমাধিসৌধ। শহরের নবাবপুর মহাল্লায় বসাকগণের আদিপুরুষ কৃষ্ণদাস মুচছদি ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে স্ববিখ্যাত নবাবপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে বিগ্রহটি পূবেৰ বারভূইয়ার অন্যতম চাদরায় কেদার রায়ের ছিল । ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ জন্মাষ্টমীর মিছিল লক্ষ্মীনারায়ণের উদ্দেশে কৃষ্ণদাস কর্তৃক প্রবত্তিত হয়। এই মিছিলে বঁাশ ও কাগজ প্রভৃতি দিয়া নিৰ্ম্মিত দুই তিন তল বাটির চেয়ে উচচ “ চৌকী ” গুলি হইতে নানারূপ কৌশলে পৌরাণিক, সামাজিক ও সাময়িক ঘটনাবলীর অভিনয় করা হয়। জন্মাষ্টমীর বড় চৌকীটির শিল্প-কৌশল বিশেষ প্রসিদ্ধ। বহু লোক এই মিছিল দেখিতে ঢাকায় আগমন করেন। জন্মাষ্টমীর মেলায় লোকশিল্পের নিদশন স্বরূপ কিছু কিছু দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। ইহা ছাড়া ঢাকার ঝুলনযাত্রা, রাস ও রথযাত্রারও প্রসিদ্ধি আছে। ঢাকার লক্ষীৰাজারের লক্ষীনারায়ণ, ঠাঠারি বাজারের জয়কালী মন্দির ও পঞ্চরত্ন মঠ ও এক্রামপুরের বীরভদ্রাশ্রমও উল্লেখযোগ্য। বৈষ্ণব-প্রধান নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র গোস্বামী ধৰ্ম্মপ্রচারাথ ঢাকায় আগমন করিয়াছিলেন এবং তাঁহারই নামে বীরভদ্রাশ্রম স্থাপিত হয় | মুর্শিদাবাদের ন্যায় ঢাকায়ও বহুদিন হইতে খাজা খিজিরের উদ্দেশে ভাদ্রমাসের শেষ বৃহস্পতি বারে ব্যারা বা বের উৎসব অনুষ্ঠিত হইয়া আসিতেছে। মুর্শিদাবাদ স্টেশন দ্রষ্টব্য।