পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

いー。 - বাংলায় ভ্রমণ স্থানে ইংরেজ, পর্তুগীজ, ফরাসী ও দিনেমারদের কুঠি ছিল। তেজগাওএ একটি বিস্তৃত সরকারী কৃষিক্ষেত্র আছে। এই কৃষিক্ষেত্রের মধ্যে ৩৭ ফুট উচচ একটি পুরাতন ইষ্টক-স্তম্ভ বিদ্যমান। কাহারও কাহারও মতে ইহা মগদিগের বিজয়স্তম্ভ, অপর মতে ইহা একটি সমাধি-স্তম্ভ। ইহার অনতিদূরে মণিপুর গ্রাম। এই গ্রামে মণিপুর রাজবংশের দেবেন্দ্র সিংহ ১৮৫০ খৃষ্টাব্দের পর নজরবন্দী ছিলেন ; এই জন্য গ্রামটির নাম মণিপুর হইয়াছে। টঙ্গী জংশন—নারায়ণগঞ্জ হইতে কিঞ্চিদধিক ২৩ মাইল দূর। ভৈরববাজার জংশন হইতে আসাম-বাংলা রেলপথের একটি শাখা এইখানে আসিয়া মিলিয়াছে। স্টেশনের এক মাইল দক্ষিণে টঙ্গী নদীর উপর মীর জুমলা কর্তৃক নিৰ্ম্মিত একটি পুরাতন সেতু আছে। জয়দেবপুর—নারায়ণগঞ্জ হইতে কিঞ্চিদধিক ৩০ মাইল। ইহা প্রসিদ্ধ ভাওয়াল পরগণার জমিদার বংশের নিবাসভূমি। ভাওয়াল মোকৰ্দমার জন্য ভাওয়ালের নাম আজকাল সবর্বত্রই পরিজ্ঞাত। এই বংশের বিখ্যাত ও বদান্য জমিদার কালীনারায়ণ রায় ও রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় প্রভৃতি বিদ্যোৎসাহী ও মুক্তহস্ত বলিয়া পরিচিত। ভাওয়াল রাজবাড়ীর বিরাট অট্টালিকা, মন্দিরগুলি ও এই বংশের শ্মশানের সমৃতিসৌধ বা মঠগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাংলার প্রসিদ্ধ পল্লী কবি গোবিন্দ দাস ভাওয়ালের অধিবাসী ছিলেন। বাংলার অন্যতম সাহিত্যরথী কালীপ্রসন্ন ঘোষ বিদ্যাসাগর মহাশয় একসময়ে এই জমিদারীর প্রধান কৰ্ম্মকৰ্ত্ত ছিলেন। বারভূইয়ার অন্যতম ফজল গাজী ভাওয়ালের অধিপতি ছিলেন। ফজলগাজী প্রথমে ঈশা খাঁ মসনদ-ই-আলির একজন সহকারী ছিলেন। ফজল গাজীর বংশীয়গণ প্রথমে কালীগঞ্জে ও পরে জয়দেবপুর হইতে প্রায় ১৬ মাইল পশ্চিমে মাধবপুর গ্রামে বাস করিতেন ; সেই জন্য মাধবপুর পরে গাজীবীড়ী নামে পরিচিত হয়। এই বংশের দৌলত গাজী মুঘল সরকারে ঠিক মত খাজনা দিতে অক্ষম হওয়ায় মুঘল সরকার তাহাদের কাছ হইতে জমিদারী বর্তমান বংশের হাতে অর্পণ করেন। জয়দেবপুর স্টেশন হইতে প্রায় ২৩ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলার মীর্জাপুর গ্রাম ও থানা। টাঙ্গাইল মহকুমা হইতে ইহা ১৬ মাইল দক্ষিণ-পূবেৰ্ব অবস্থিত। মীর্জাপুরের ২ মাইল দক্ষিণে কাটালিয়া গ্রামে প্রায় আড়াই শত বৎসর পূৰেৰ বৈদ্যবংশীয় কৰি ভবানী প্রসাদ রায় জন্মান্ধ হইয়াও মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর অনুবাদ করিয়া কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। মীর্জাপুরের ৫ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে শাকাসার গ্রামে ৬ ফুট উচচ একটি অতি পুরাতন অষ্টকোণ প্রস্তরস্তম্ভ আছে। ইহা এখন সিদ্ধি মাধব নামে পূজা পাইতেছে ; হিন্দুগণ ইহার নিকটে বন্য বরাহ ও মুসলমানগণ কুকুট বলি দিয়া থাকেন। ইহার গাত্রে উৎকীর্ণ মুক্তিগুলি ক্ষয় প্রাপ্ত হইয়াছে; অস্পষ্ট যাহা দেখা যায় তাহা হইতে মুদ্রাসীন ধ্যানস্থ মূৰ্ত্তি—মস্তকে কিরীট ও কণে কুণ্ডল বলিয়া বুঝিতে পারা যায়। অনেকে মনে করেন এগুলি বুদ্ধ মূত্তি। “ ঢাকার ইতিহাস ’ রচয়িত যতীন্দ্র মোহন রায় মহাশয় লিখিয়াছেন যে ভারতের অন্য স্থানে প্রাপ্ত অশোকস্তম্ভের সহিত এই স্তম্ভের বিশেষ সোসাদৃশ্য আছে এবং শাকাসার হইতে ধামরাই বহুদুর নয় বলিয়া তিনি অনুমান করেন যে ইহা ধামরাইএর ধৰ্ম্মরাজিক স্তম্ভ হওয়া অসম্ভব নয় । " ভাওয়ালের প্রসিদ্ধ জঙ্গল ঢাকা জেলার উত্তরভাগ হইতে ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমা পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত মধুপুর জঙ্গলের পবর্বাংশ। পশ্চিমাংশটি কাশিমপুরের গড় বা জঙ্গল নামে খ্যাত।