পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পবর্ব ভারত রেলপথে ৬৯ বালীতে “ কল্যাণেশ্বর " নামে এক প্রাচীন শিবলিঙ্গ আছেন। এই শিবের মাহাত্ম্য এতদঞ্চলে সুপরিজ্ঞাত। শিবরাত্রির সময় এখানে বহু লোকের সমাগম হয়। পূবেৰ্ব এখানে অনেকগুলি টোল ছিল এবং ছাপাখানার যুগের পূবেৰ্ব এখানকার আচাৰ্য্যরা যে পঞ্জিকা বাহির করিতেন তাহার বেশ আদর ছিল। - উত্তরপাড়া—হাওড়া হইতে ৬ মাইল দূর। বালীর পশ্চিম পাশ্ব দিয়া একটি খাল আছে, উহাই হাওড়া জেলার শেষ সীমা। এই খালের অপর পারস্থিত উত্তরপাড়া গ্রাম হইতে হুগলী জেলার আরম্ভ। উত্তরপাড়া পূবেৰ্ব বালী গ্রামেরই একটি পাড়া ছিল। কালক্রমে ইহা স্বতন্ত্র গ্রামে পরিণত হইয়াছে। বর্তমানে উত্তরপাড়া একটি সুদৃশ্য শহর। এখানে একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজ ও বহু দপ্রাপ্য ও মূল্যবান গ্রন্থ-সমন্বিত একটি প্রাচীন গ্রন্থাগার আছে। ইতালীয় স্থাপত্য রীতিতে নিৰ্ম্মিত গ্রন্থাগার ভবনটি ভাগীরথী হইতে সুন্দর দেখায়। এখানকার মুখোপাধ্যায় বংশ বাংলার প্রসিদ্ধ জমিদারগণের অন্যতম। কোন্নগর-হাওড়া হইতে ৯ মাইল দূর। ইহাও গঙ্গাতীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন পল্লী । বৃটিশ আমলের পূবেৰ্ব এখানে দিনেমারগণের একটি ডক্‌ ছিল। বৰ্ত্তমানে উহার চিহ্ন নাই। এখানে গঙ্গাতীরে দ্বাদশ মন্দির সংযুক্ত একটি ঘাট আছে ; কলিকাতার হাটখোলা দত্তবংশের হরমুন্দর দত্ত উহার প্রতিষ্ঠাতা । জগৎ বিখ্যাত মনীষী শ্রীঅরবিন্দের পৈতৃক নিবাস কোন্নগরে। বিখ্যাত সমাজসংস্কারক শিবচন্দ্র দেবের জন্মস্থানও কোন্নগর। শিবচন্দ্রের জন্যই কোরাগরের যাহা কিছু উন্নতি তাহার চেষ্টায় এখানে ইংরেজী স্কুল, রেল স্টেশন, ডাকঘর, ডাক্তারখানা, ব্রাহ্মসমাজ ও গ্রন্থাগার প্রভূতি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিবচন্দ্র সুবিখ্যাত কেশবচন্দ্র সেনের পিতৃব্য হরিমোহন সেনের সহিত মিলিত হইয়া আরব্য উপন্যাসের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন এবং স্বয়ং ” শিশু পালন ” ও “ অধ্যাত্ব বিজ্ঞান ’ নামে দুইখানি পুস্তক প্রণয়ন করেন। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয়। প্রসিদ্ধ " পদ্যপাঠ ” সঙ্কলয়িত মুকবি যদুগোপাল চট্টোপাধ্যায় কোন্নগরের অধিবাসী ছিলেন। প্রতিবৎসর মাঘী পূর্ণিমার দিন কোনগরে মহাসমারোহে রাজরাজেশ্বরী দেবীর পূজা হয় এবং উহা দেখিবার জন্য নিকটবৰ্ত্তী গ্রাম সমূহ হইতে বহু লোকের সমাগম হয়। * রিষড়া-হাওড়া হইতে ১১ মাইল দূর। ইহা পূবেৰ্ব একটি সমৃদ্ধ স্থান ছিল। বিপ্রদাসের “মনসা মঙ্গলে ” এই স্থানের উল্লেখ আছে। এই স্থানে ওয়ারেন হেষ্টিংসের একটি বাগান বাড়ী ছিল, উহার নাম ছিল “ রিষড়া হাউস ”। উহা এখন “ হেষ্টিং মিল ”এ পরিণত হইয়াছে। ইহার পশ্চিম দিকের প্রাচীরের নিকট যে আয়বীথিক রহিয়াছে, কথিত আছে, উহা হেষ্টিংসৃ-পত্নী কর্তৃক রোপিত হইয়াছিল। হেষ্টিংস ঘাট নামে একটি ঘাট এখনও এখানে আছে। বর্তমানে রিষড়া পাট কলের জন্য বিখ্যাত । স্ত্রীরামপুর—হাওড়া হইতে ১৩ মাইল দুর। ইহা ভাগীরথী তীরে অবস্থিত এবং হুগলী জেলার অন্যতম মহকুমা। ব্রিটিশ অধিকারের প্রাক্কালে ইহা দিনেমারগণের অধিকৃত ছিল এবং ডেনমার্ক রাজের নামে ইহার নাম ছিল ফ্রেডুরিকনগর। ১৮০১ খৃষ্টাব্দে ইংরেজগণ দিনেমারদিগকে পরাজিত করিয়া শ্রীরামপুর অধিকার করেন, কিন্তু ১৮১৫ খৃষ্টাব্দের সন্ধি অনুযায়ী ইহা পুনরায় দিনেমারগণের অধিকারভুক্ত হয়। শেষে দিনেমারগণ এই স্থানটি ইংরেজগণের নিকট বিক্রয় কবিয়া চলিয়া যান। এইরূপে দিনেমারগণের বাংলায় প্রতিষ্ঠা লাভের শতবর্ষব্যাপী চেষ্টার অবসান হয়। শ্রীরামপুর আদালতের নিকটে তাঁহাদের গোরস্থান দৃষ্ট হয়।