পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

** বাংলায় প্ৰাণ ভদ্ৰেশ্বরের নিকটবৰ্ত্ত তেলিনীপাড়া একটি বিখ্যাত গ্রাম। এখানে বন্দ্যোপাধ্যায় উপাধিধারী একঘর জমিদারের বাস। জমিদারবংশের প্রতিষ্ঠিত অন্নপূর্ণাদেবীর মন্দির এদিককার একটি বিখ্যাত দ্রষ্টব্য বস্তু । চন্দননগর—হাওড়া হইতে ২১ মাইল দূর। ভাগীরথী তীরে যে সকল পাশ্চাত্য জাতি উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহাদিগের মধ্যে একমাত্র ফরাসী ভিন্ন অন্য কাহারও অধিকার বর্তমানে নাই। চারিদিকে ব্রিটিশ অধিকৃত স্থানের মধ্যে একমাত্র চন্দননগরই ফরাসী অধিকারভুক্ত স্থান। বাংলায় যখন মুসলমান, ইংরেজ ও ফরাসীর মধ্যে ভাগ্যপরীক্ষার যুদ্ধ চলিতেছিল তখন চন্দননগরের উপর দিয়া অনেক উপদ্রবের ঝটিকা বহিয়া গিয়াছিল। ১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট হইতে লব্ধ সনদের বলে ফরাসীগণ চন্দননগরের অধিকার লাভ করেন। ১৬০৭ খৃষ্টাব্দে চেতোয়াবরদার রাজা শোভা সিংহের অত্যাচার হইতে শহর রক্ষার জন্য ফরাসীগণ এখানে ফোর্ট দ্য আরল (Fort D'Orleans) নামে একটি দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করেন। বর্তমানে এই দুর্গটি পুলিশভবন রূপে ব্যবহূত হইতেছে। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ২৩এ মাচর্চ তারিখে এই দুগের পাদমূলে ইংরেজ ও ফরাসীর ভাগ্য পরীক্ষা হইয়াছিল। চন্দননগরের সবর্বাপেক্ষা গৌরবময় যুগ ছিল গবর্ণর ডুপ্লের শাসনকাল ১৭৩১—১৭৪১ খৃষ্টাব্দ। ডুপ্লে এখানে ফরাসী বাণিজ্যের বিশেষ উন্নতি সাধন করেন এবং ইহাকে একটি মনোরম শহরে পরিণত করেন। বৰ্ত্তমানে ইহার পূবর্ব সমৃদ্ধি আর নাই। পূবেৰ্ব চন্দননগর বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানকার সূক্ষ্য বস্ত্র তখন যুরোপেও রপ্তানি হইত। এখনও বাজারে ফরাসডাঙ্গার কাপড়ের যথেষ্ট নাম আছে। যুরোপে ইংরেজ ও ফরাসীদিগের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে চন্দননগর কয়েকবার ইংরেজগণ কর্তৃক অধিকৃত হয় এবং উভয়পক্ষের মধ্যে সন্ধি সংস্থাপন হইলে উহা পুনরায় ফরাসীগণকে ফিরাইয়া দেওয়া হয়। ১৮১৬ খৃষ্টাবদ হইতে এই স্থান ফরাসীদিগের অধিকারে আছে। বর্তমানে ফরাসী গবর্ণমেণ্টের অধিকার গরুটি (গেীরহাট) চাপদানি, মানকুণ্ডু, গোদলপাড়া ও খাস চন্দননগরের কতকাংশ লইয়া বিস্তৃত। ইহা দৈর্ঘ্যে ৪ মাইল ও প্রস্থে ১ মাইল। চন্দননগরের গঙ্গাতীরবর্তী পথটি বড় সুন্দর। সরকারী কাৰ্য্যালয় ও হোটেল প্রভৃতি এই রাস্তার উপর অবস্থিত। গোদলপাড়ার এক অংশ আজও দিনেমার ডাঙ্গা নামে পরিচিত ; ঐ স্থানে দিনেমারগণের একটি কুঠি ছিল। চন্দননগরে প্রশিয়ান বা জাৰ্ম্মানদেরও একটি কুঠি ছিল। সম্রাট ফ্রেডরিক দি গ্রেট “বেংগলিশে হাণ্ডেলজ গেজেল শাখাট” নামে একটি কোম্পানি গঠন করিয়া ব্যবসায়ের উৎসাহ প্রদান করেন। ফোটু দ্য অারলার এক মাইল দক্ষিণে জাৰ্ম্ম কুঠি অবস্থিত ছিল। ‘. . . চন্দননগরের সহিত প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। সুপ্রসিদ্ধ কবি-ওয়াল রাসু, নৃসিংহ, গোরক্ষনাথ, নিতাই বৈরাগী, নীলমণি পাটনি, এণ্টনি ফিরিঙ্গি ও বলরাম কপালী, পাঁচালী গায়ক চিন্তামালা, নবীন গুই, কথক রঘুনাথ শিরোমণি এবং প্রসিদ্ধ যাত্রা-ওয়াল মদন মাস্টার, ব্রজ অধিকারী ও মহেশ চক্রবর্তী প্রভৃতি এই স্থানে বাস করিতেন। চন্দননগরের গোদলপাড়ায় পূবেৰ্ব অনেকগুলি টোল ছিল। : এখানকার প্রাচীন গৌরবের মধ্যে নন্দদুলালের মন্দির, বোড়াইচণ্ডী, দশভুজা ও ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির এবং তাউংখানার বাগানে ওলন্দাজ গির্জার ধ্বংসাবশেষ, ভাগীরথী তীরে কনভেণ্ট ংলগ্ন গির্জা, কোম্পানীর আমলের গোরস্থান ও লালদীঘি প্রভৃতি দ্রষ্টব্য। ভাগীরথী তীরস্থ গির্জাটি ১৭২৩ খৃষ্টাব্দে ইতালীয় মিশনরীগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান যুগের দ্রষ্টব্য বস্তুর মধ্যে ডুপ্লে কলেজ ও স্কুল, চন্দননগর গ্রন্থাগার, নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দির ও কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দিরের নাম উল্লেখ যোগ্য।

  • f.