পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> > o বাংলায় ভ্ৰমণ হইয়াছে। বহু কাল হইতে ভূষণার বিবিধ প্রকারের সূক্ষ্ম বস্ত্র, কাগজ, গালা, মোম, তামা, পিতলৰ্কাসা প্রভৃতির দ্রব্যাদি এবং সোনারূপার কারুশিল্পের খাতি ছিল । প্রাকারবেষ্টিত প্রাচীন ভূষণার জঙ্গলাকীর্ণ ভগ্নাবশেষের মধ্যে নানাস্থান বিভিন্ন বাজার নামে অভিহিত হয়। গোপীনাথজীউর আখড়া ও রণরঙ্গিণী দেবীর মন্দিরের ভগ্নাবশেষ এখনও দৃষ্ট হয়। ভূষণার খাসা নামক বস্ত্র বহুকাল হইতে খ্যাত । রামপ্রসাদের ”বিদ্যাসুন্দরে” আছে। বনাত মখমল পট্ট, ভূষণাই খাসা, বুঢ়াদার ঢাকাইয়া দেখিতে তামাসা । এককালে ভূষণা এঅঞ্চলে সভ্যতা ও বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। রাজা সীতারাম রায়ের উত্থানের সহিত ভূষণার বাণিজ্য ক্রমে মহম্মদপুরে চলিয়া যায় এবং ভূষণার পতন মুরু হয়। বোয়ালমারি বাজার স্টেশন হইতে পশ্চিমে বারাসিয়া ও গড়াইনদী পার হইয়া ৬ মাইল দূরে সীতারামের প্রাচীন রাজধানী মহম্মদপুর অবস্থিত। (“মহম্মদপুর” দ্রষ্টব্য) । কালুখালি জংশন হইতে ব্যাসপুর স্টেশন প্রায় ৪১ মাইল দূর। স্টেশনের একটু উত্তরে কারণাপুর নামে ক্ষুদ্র একটি গ্রাম আছে ; ইহা ক্ষুদ্র হইলেও বাঙ্গালীর নিকট পরিচিত হইবার দাবী রাখে। সুপ্রসিদ্ধ জননায়ক ও বাগী সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মহাশয় এই গ্রামের প্রসিদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়বংশ হইতে উদ্ভূত। ব্যাসপুর স্টেশন হষ্টতে প্রায় ৬ মাইল পূর্বদিকে মুকসুদপুর থানার অন্তর্গত খান্দারপাড়া একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এই গ্রামটি রামচন্দ্রপুর নামেও অভিহিত হয় । রজনীকান্ত স্মৃতিভূষণ, বিষ্ণুরাম কবিরাজচন্দ্র প্রভৃতি বহু পণ্ডিত এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । কবিরাজ চন্দ্র মহাশয় কালিদাসের শুঙ্গারতিলক কাব্যের নূতন এক ব্যাখ্যা করিয়াছিলেন। খান্দারপাড়ের সেন কবিরাজবংশে বহু চিকিৎসক জন্মিয়াছেন ; ঠতাদের মধ্যে অভিরাম কবিরাজ মহাশয়ের “খান্দারপাড় সংগ্রহ” একখানি প্রসিদ্ধ চিকিৎসা গ্রন্থ সংগ্ৰহ । ইনি রাজা সীতারাম রায়ের সভাপণ্ডিত ছিলেন । ইহারা বহু পুরুষ ধরিয়া সংস্কৃত অধ্যয়ন ও তাধ্যাপনার জন্তা টোল চালাইয়াছিলেন । এষ্টজন্য গ্রামটি সাধারণ্যে টোলা রামচন্দ্রপুর নামে অভিহিত হইত। সুপ্রসিদ্ধ কবিরাজ ৮দ্বারিকনাথ সেন এই বংশের লোক ছিলেন । ভারতীয় চিকিৎসকগণের মধ্যে পণ্ডিত দ্বারিকানাথ সেন কবিরত্ন মহাশয়ক্ট প্রথম মতামহোপাধ্যায় উপাধিতে ভূষিত হন। এই শাখা লাইনের শেষ স্টেশন ভাটিয়াপাড়া ঘাট কালুখালি জংশন হইতে ৪২ মাঈল দূর । ইহা বারাসিয়া ও মধুমতী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্তিত একটি বাণিজ্য প্রধানস্থান । স্টেশন হইতে মধুমতী পার হইয়া প্রায় ৩ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোহর জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া গ্রামে ১০০ বৎসরেরও পূৰ্ব্বে চন্দ্রশেখর মজুমদার মহাশয় একটি সুন্দর কারুকার্য্যখচিত জোড়বাংলা স্থাপন করেন । আশ্চর্য্যের বিষয় সুদূর পল্লীগ্রামে এই মন্দির ইংরেজ অধিকারের বহু পূৰ্ব্বে নিৰ্ম্মিত হইলেও ইহার তিনটি খিলানে ইংরেজের জাতীয় রাজচিহ্ন উৎকীর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়। যশোহরের সুসস্তান ৬রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার এই গ্রামে চন্দ্রশেখর মজুমদার মহাশয়ের বংশে জন্মলাভ করেন ।