পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ Σ : 5 খেতুররোড–আবদুলপুর জংশন হইতে খেতুররোড ৪০ মাইল দূর। এই স্থান হইতে প্রেমতলী ও শ্রীপটি খেতুরে যাইতে হয় । খেতুর রোড স্টেশন হইতে খেতুর ১১ মাইল দূর । রাজশাহী হইতেও ১৩ মাইল পশ্চিমে খেতুরে যাইবার রাস্তা আছে। খেতুর সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণব মহাজন নরোত্তম ঠাকুরের জন্মস্থান ও পদ্মানদীর তীরে অবস্থিত । প্রেমতলী হইতে খেতুর দুই মাইল দূর । ঠাকুর নরোত্তম খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে খেতুরের রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম রাজা কৃষ্ণানন্দ দত্ত ও মাতার নাম নারায়ণী দেবী। বৈষ্ণবসাহিত্যে উল্লিখিত আছে যে শ্রীচৈতন্যদেব গৌড় গমন কালে খেতুরির দিকে লক্ষ্য করিয়া “নরোত্তম” বলিয়া ডাকিয়াছিলেন। তখনও নরোত্তমের জন্ম হয় নাই । বৈষ্ণবগণের বিশ্বাস যে শ্রীচৈতন্যদেবের আহবানেই নরোত্তমের আবির্ভাব হইয়াছিল। অতি বাল্য বয়সে নরোত্তম বিষয়মুখ পরিত্যাগ করিয় পদব্রজে বৃন্দাবনে । গমন করেন এবং তথায় লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । তাহার অদ্ভূত প্রেম ও পাণ্ডিত্য দেখিয়া গোস্বামগণ র্তাহাকে “ঠাকুর মহাশয়" উপাধি প্রদান করেন। গুরুর আদেশে নরোত্তম স্বদেশে প্রত্যাগমন করিয়া হরিনাম প্রচার ও কীৰ্ত্তনে আত্মনিয়োগ করেন। “প্রার্থনা”, “প্রেমভক্তি চান্দ্রকা” ও “পাষণ্ড দলন” প্রভৃতি তৎপ্রণীত গ্রন্থ নিচয় বৈষ্ণবসমাজে বিশেষ শ্রদ্ধার সহিত নিত্য পঠিত হইয়া থাকে। র্তাহার জীবন কথা নরহরি চক্রবর্তী কুত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “নরোত্তম বিলাসে” বর্ণিত হইয়াছে। চাদ রায় নামক জনৈক দস্থা সর্দার ঠাকুর নরোত্তমের প্রভাবে বৈষ্ণবধৰ্ম্ম গ্রহণ করে। ১৫০৪ শকাব্দে অর্থাং ১৫৮১ খৃষ্টাব্দে নরোত্তম স্বীয় জন্মস্থান খেতুরিতে ছয়টি বিগ্রহ স্থাপন করিয়া মহাসমারোহে বৈষ্ণব সম্মেলনের অনুষ্ঠান করেন । ইহাই গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের সৰ্ব্ব প্রথম মহাসম্মেলন । এই সম্মেলনে বাংলার সকল স্থানের বৈষ্ণব মহাজনগণ যোগদান করিয়াছিলেন। বৈষ্ণব সাহিতো এই ঘটনা বহুস্থানে বিবৃত হইয়াছে। নরোত্তমের খুল্লতাতপুত্র রাজা সন্তোষ এই কাৰ্য্যে নরোত্তমের সর্বপ্রধান সহায় হইয়ছিলেন। নরোত্তম প্রবর্তিত কীৰ্ত্তন গানের পদ্ধতি “গরাণহাটি” বা “গড়েরহাটি” নামে পরিচিত । গড়ের হাট পরগণায় প্রথম প্রবত্তিত বলিয়া ইহার এইরূপ নাম হইয়াছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বহু কীৰ্ত্তনিয়া এই পদ্ধতিতে কীৰ্ত্তন গান করিয়া থাকেন। আজও প্রতি বৎসর লক্ষ্মীপূজার সময় শ্রীপটি খেতুরে তিন দিনব্যাপী বিরাট মেলার অধিবেশন ও মহোৎসব হয়। যাত্রীরা প্রেমতলীতে স্নান করিয়া খেতুরের পুরাতন মন্দিরে শ্ৰীগৌরাঙ্গ, বিষ্ণুপ্রিয়া এবং নিত্যানন্দের বিগ্রহ দর্শন করেন। এই মেলায় সুন্দর দেশীয় পুতুল প্রভৃতি লোকশিল্পের নিদর্শন দেখিতে পাওয়া যায় । খেতুরের নিকটে বিজয়নগর নামে একটি গ্রাম আছে। ইহা প্ৰেমতলী হইতে ৪ মাইল পূর্বদিকে এবং রাজশাহী হইতে খেতুরের পথে ৯ মাইল দূর। অনেকে অনুমান করেন যে এই স্থানে সেন বংশীয় নৃপতি বল্লাল সেনের পিতা রাজা বিজয় সেনের রাজধানী ছিল এবং পরে তিনি ও র্তাহার উত্তরাধিকারীরা রাজধানী এখান হইতে লক্ষণাবতী বা গৌড়ে লইয়া যান। ইহার উত্তরদিকস্থ দেবপাড়া নামক পল্লী হইতে বিজয় সেনের একখানি প্রস্তরলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছিল। এই শিলালিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে কর্ণাট দেশের সামন্ত সেনের পৌত্র ও হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয় সেন রাঢ় দেশের অধিপতি হইয়াছিলেন এবং পালবংশীয়দিগের নিকট হইতে গৌড় জয় করিয়াছিলেন