পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ X 8X পাচবিবি হইতে প্রায় ৬ মাইল পূৰ্ব্বদিকে বলিগ্রাম নামক গ্রামে বহু ধ্বংসাবশেষ আছে । বলিগ্রাম ক্ষেতলাল থানার অন্তর্গত এবং ক্ষেতলাল হইতে প্রায় ১০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। কিংবদন্তী, এই স্থানে বলিরাজার প্রাসাদ ও রাজধানী ছিল। বলিগ্রামের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত শিলিমপুর গ্রামেও বহু ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। এই গ্রামে একটি প্রস্তরে খোদিত প্রশস্তি পাওয়া গিয়াছে। বলিগ্রামের এক মাইল দক্ষিণ-পূর্বে মাথরাই গ্রামেও একটি রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ আছে ; এইস্থান হইতে প্রাপ্ত তিনটি প্রকাণ্ড প্রস্তর স্তম্ভ রাজশাহীতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির চিত্রশালায় রক্ষিত আছে । স্তম্ভগুলির শীর্ষদেশে প্রাচীন বঙ্গাক্ষরে খোদিত আছে “ আদেশ বিপঞ্চিক শ্রীপ্ৰহাসিত শৰ্ম্ম।” শিলিমপুরের প্রস্তর-প্রশস্তি পাঠে জানা যায় যে পূর্বকালে বলিগ্রাম ও শিলিমপুরের নাম ছিল বালগ্রাম ও শীয়ম্বপুর ; এই বালগ্রাম ছিল পুণ্ড জনপদের অন্তভুক্ত বিষ্ণু বিগ্রহ, কসবা উচাই ও বরেন্দ্রভূমের অলঙ্কারস্বরূপ। বালগ্রাম ও শীয়ম্বপুরে নানা শাস্ত্রবিদ বহু পণ্ডিত ও গুণীর বাস ছিল। প্রশস্তিটি শীয়ম্বপুর গ্রামের প্রহাস শৰ্ম্মার কুলপ্রশস্তি । কাত্তিকেয়ুপুত্র প্রহাস বহু শাস্ত্রে পারদর্শী ও বহু সদগুণের আকর ছিলেন বলিয়া জনসাধারণের এবং সমসাময়িক নৃপতিপুঞ্জের সম্মানলাভ করিয়াছিলেন। কামরূপরাজ জয়পালদেব তুলাপুরুষ দান উপলক্ষে প্রহাসকে নয়শত স্বর্ণমুদ্রা ও সহস্র মুদ্রার আয়যুক্ত ভূমি গ্রহণ করিবার জন্য বহু অনুনয় করিয়াছিলেন, কিন্তু প্ৰহাস তাহা গ্রহণ করেন নাই। প্ৰহাসের নানারূপ ধৰ্ম্মপালন ও পুণ্য কার্য্যের মধ্যে প্রধান হইল শীয়স্বপুর গ্রামে অতি উচ্চ একটি শুভ্র মন্দিরে অমরনাথ বিগ্রহ স্থাপন। বিগ্রহের সেবার জন্য তিনি ভূমি দান করিয়াছিলেন। পঞ্চাশ বৎসর বয়সে পুত্ৰগণের উপর সংসার-ভার দিয়া তিনি গঙ্গাকুলে বাস করিয়া ধৰ্ম্মসাধনে মনোনিবেশ করেন। প্রহাসশৰ্ম্মার সময় আনুমানিক খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দী। পাঁচবিবির নিকটস্থ জঙ্গলে বাঘ, চিতা, বন্য বরাহ প্রভৃতি দৃষ্ট হয়।