পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 88 বাংলায় ভ্রমণ যখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত সেই সময়ে রংপুর জেলার অন্তর্গত কাটাহুয়ারের রাজা নীলাম্বর ঘোড়াঘাটের অধিপতি ছিলেন বলিয়া কথিত। এই স্থানে তাহার একটি অরণাপরিবেষ্টিত ও সুরক্ষিত তুর্গ ছিল। নসরত শাহের সেনাপতি প্রসিদ্ধ মুসলমান ধৰ্ম্ম প্রচারক গাজী ইসমাইল নীলাম্বরকে পরাস্ত করিয়া এই দুর্গ অধিকার করেন ও এই স্থানের “ নসরতাবাদ ” নাম দেন। গাজী ইসমাইলের চেষ্টায় এখানে একটি শহর গড়িয়া উঠে। উত্তরকালে মুঘলেরা যখন আসাম ছাড়িয়া আসিতে বাধ্য হন, তখন ঘোড়াঘাট মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের প্রধান সেনানিবাস হইয় উঠে। কালবশে করতোয়ার প্রবাহ কমিয়া গেলে স্থানটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হইয়া উঠে এবং এই স্থানের ফৌজদারি রংপুরে উঠাইয়া লইয়া যাওয়া হয়। ঘোড়াঘাটের প্রাচীন কীৰ্ত্তির অধিকাংশই নদী গর্ভসাৎ হইয়াছে তবে মুঘল আমলের ফৌজদারের প্রাসাদের এবং একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এখনও বৰ্ত্তমান । ঘোড়াঘাটের তুর্ভেদ্য তুর্গবিজয়ী গাজী ইসমাইলের সমাধি এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য বস্তু। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেই এই সমাধির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকেন । চরকাই-কলিকাতা হষ্টতে ২১৫ মাইল দূর। স্টেশন হইতে ৭ মাইল পূর্বদিকে করতোয়ার পরিত্যক্ত খাতের উপর অবস্থিত নবাবগঞ্জ গ্রামে সীতাকোট নামে পরিচিত একটি প্রাচীন ইষ্টকর্তৃপ আছে। নিকটেই “তপর্ণ ঘাট” নামে করতোয়ার একটি ঘাটও আছে। প্রবাদ এই ঘাটে রামায়ণ প্রণেতা মহামুনি বালিকি স্নান ও তর্পণ করিতেন এবং নিকটেই অধুনা-অজ্ঞাত কোন স্থানে তাহার আশ্রম ছিল। স্থানীয় লোকের বিশ্বাস রামচন্দ্রের আদেশে লক্ষ্মণ সীতাদেবীকে এই স্থানেই বনবাস দিয়া গিয়াছিলেন । সীতাকোট নামটি অতীত যুগের স্মৃতি বহন করিতেছে। আজিও বিশেষ বিশেষ পর্বোপলক্ষে উত্তর বঙ্গের নানাস্থানের লোকে তৰ্পণ ঘাটে স্নান করিয়া থাকেন। নবাবগঞ্জ থানা হইতে ৫৬ মাইল দূরে জঙ্গলমধ্যে একটি ধ্বংসাবশেষ দুষ্ট হয় ; উহা বাণরাজার বাড়ী বলিয়া পরিচিত। ফুলবাড়ী—কলিকাতা হইতে ২২২ মাইল। স্টেশনের নিকটেই দামোদরপুর গ্রামে হরিপুকুর ও খোলাকুটী পুকুরের মধ্য দিয়া পথ তৈয়ার করিবার সময় ১৯১৫ খৃষ্টাবে পাঁচখানি তাম্রলিপি আবিষ্কৃত হয়। এইগুলি রাজশাহীতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির চিত্রশালায় রক্ষিত আছে। ইহাদের মধ্যে প্রথম দুইটি কুমার গুপ্তের, দুইটি বুধ গুপ্তদেবের রাজ্যকালের ও একটি ভানু গুপ্তেদেবের রাজাকালের। এগুলি তাম্রশাসন নহে, ইহার প্রথমটির তারিখ ১২৪ গেপ্তাদ বা ৪৪৩ খৃষ্টাব্দ এবং শেষটির ২১৪ গৌপ্তাদ বা ৫৩৩ খৃষ্টাব্দ। এই তাম্রলিপিগুলি হইতে প্রমাণিত হইয়াছে যে দেড় হাজার বছর পূৰ্ব্বেও বরেন্দ্রভূমির উত্তরভাগ কোটাবর্ষ নামে খ্যাত ছিল এবং গঙ্গার উত্তর তীরের ভূভাগ পুণ্ডবৰ্দ্ধন নামে পরিচিত ছিল ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল। পাৰ্ব্বতীপুর জংশন—কলিকাতা হইতে ২৩৪ মাইল দূর। ইহা পূর্ববঙ্গ রেল পথের একটি প্রধান জংশন। এখান হইতে মাঝারি মাপের রেলপথে পশ্চিমে দিনাজপুর, কাটিহার, পুণিয়া, যোগবণী প্রভৃতি স্থানে ও পূৰ্ব্বদিকে রংপুর, কুচবিহার, ধুবড়ী, পাণ্ড