পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ S 8ఫి

  • جہ س--مبیے.

কোম্পানিকে যথেষ্ট বেগ পাইতে হইয়াছিল। একদল ব্রিটিশ সৈন্ত কৃষকদের নিকট পরাজিত হয় এবং ক্যাপ্টেন টমাসের অধীন অপর একদল সৈন্যকে তাহারা অবরুদ্ধ করে। রংপুরের বরকন্দাজ বা লাঠিয়াল দ্বারা গঠিত একটি দেশীয় সৈন্যবাহিনীকে অপর তিন দল সৈন্তের সহিত বিদ্রোহ দমন করিবাব জন্য প্রেরণ করা হয়। এই সম্মিলিত সেনাবাহিনী কৃষকদিগকে তাড়িত করিয়া বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলের মধ্যে অবরুদ্ধ করে এবং তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। কৃষকদের মধ্যে অনেকে আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হয় এবং ইংরেজ আদালতে তাহাদের যথাযোগ্য শাস্তিও হয়। বিদ্রোহী কৃষকদের আশ্রয়স্থান বৈকুণ্ঠপুরের অরণ্য বৰ্ত্তমানে বহুলাংশে পরিষ্কৃত হইয়া চা-বাগানে পরিণত হইয়াছে। কোচবিহার রাজবংশের সমগোত্র বৈকুণ্ঠপুরের প্রসিদ্ধ “রায়কত” উপাধিধারী ভূম্যধিকারীর শিকারপুর নামক চা-বাগান এইরূপ পরিষ্কৃত অঞ্চলে জঙ্গলের সীমান্তে অবস্থিত। এই চা-বাগানের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র সুদৃশ্য মন্দিরের সহিত জনশ্রুতি অনুসারে দেবীরাণী বা দেবী চৌধুরাণীর স্মৃতিবিজড়িত। বৈকুণ্ঠপুর বনানীর প্রান্ত দিয়া “দেবী চৌধুরাণী” উপন্যাসে বর্ণিত ত্রিস্রোতা নদী আজিও প্রবাহিত। অনেকের ধারণা নিকটবৰ্ত্তী দেবীগঞ্জ, দেবীঘাট ও দেবীডোবা প্রভৃতি পল্লীগুলি কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কৃষকগণের নেতৃস্থানীয়া উপন্যাস বর্ণিতা দেবী চৌধুরাণীর বাস্তবতার স্মৃতি বহন করিতেছে । - জলপাইগুড়ি হইতে প্রায় ২৪ মাইল পশ্চিমে মহানদীর তীরে তিতালিয়া গ্রাম অবস্থিত। এক কালে ইহা পুরাতন রংপুর জেলার একটি মহকুমা-সদর ছিল। এখন ইহা জলপাইগুড়ি সদরের অন্তর্গত। জলপাইগুড়ি হইতে তিতালিয়া পর্যন্ত ভাল রাস্তা আছে । এখনও বাজারের নিকট অনেকগুলি সুন্দর পাকা বাড়ী এবং পরিত্যক্ত ঘোড়দৌড়ের মাঠ তিতালিয়ার পুরাতন গৌরবের সাক্ষ্য দিতেছে। ক্ষুদ্র একটি পাহাড়ের উপর এখানকার ডাক বাংলাটির অবস্থান অতি মনোরম ৷ তিতালিয়া শিলিগুড়ি হইতে ১৬ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে গ্যাঞ্জেস্ব-দার্জিলিং রোডের উপর অবস্থিত। শিলিগুড়ি—কলিকাতা হইতে ৩১৮ মাইল দূর। ইহা পূর্ববঙ্গ রেলপথের প্রধান লাইনের শেষ স্টেশন। শিলিগুড়ি পূৰ্ব্বে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর স্থান ছিল। রেলের কল্যাণে এখন ইহা একটি বদ্ধিষ্ণু নগরে পরিণত হইয়াছে। ইহা এখন দাৰ্জিলিং জেলার একটি মহকুমা। ইহার চারিদিকে বহু চা-বাগান হওয়ায় এখানকার শ্ৰী ফিরিয়া গিয়াছে। - শিলিগুড়ি শহরটি বিস্তৃত মাঠের মধ্যে গড়িয়া উঠিয়াছে। চারিদিক বেড়িয়াই হিমালয়ের পাদমূলে তরাইয়ের দুর্গম অরণ্য। এই গভীর জঙ্গলে নানাবিধ হিংস্র জন্তুর বাস। শিলিগুড়ি হইতে যে কোন দিকে ভ্রমণে বাহির হইলেই হিমালয় পৰ্ব্বতশ্রেণী দেখতে পাওয়া যায়। তরাইয়ের গভীর অরণ্যপ্রান্ত হইতে ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের মত একটির পর একটি পর্বতশ্রেণী নীল আকাশের সহিত মিলাইয়া গিয়াছে।