পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ >QQ গুয়াছে। এইরূপ অনুমিত হয় যে মহানদী নাম এই নদীর লেপচা নাম মহলদী কথার বাংলা অপভ্রংশ। মহলদীর অর্থ বাক নদী ; এই নামের কারণ এই যে পাহাড় চষ্টতে দেখা যায় এই নদী , সমতলক্ষেত্রে পৌছিয়া হঠাৎ দক্ষিণদিকে বাকিয়৷ গিয়াছে। ইহার সহিত তুলনা করিয়া লেপ ঢারা তিস্তকে বলে রংতু বা সোজা নদী, কারণ ইহাকে সমতলভূমিতে সোজা যাইতে দেখা যায়। মহলদীরাম পৰ্ব্বতের নামের অর্থ মহালদী নদীর উৎস-স্থল । মহানদী ছাড়িয়া একটি কাটিং (পাহাড়কে গভীর করিয়া কাটিয়া দুই পাশ্বে পাহাড়ের উচ্চ প্রাচীর রাখিয়া রাস্তা) পার হইলে দূরে সমতলক্ষেত্রের দৃশ্ব অপরূপ সুন্দর দেখায়। পূৰ্ব্ব হইতে পশ্চিমে পর পর তিস্ত, মহানদী ও বালাসন এই তিনটি নদীকে পরিষ্কার ও স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায় । বালাসন বা বালুআসন নাম হইয়াছে ইহার বিস্তৃত ও স্বর্ণাভ বালুকাপূর্ণ নদীগর্ভ হইতে। শীঘ্রই ট্রেণ গিধর পাহাড়ের মধ্যে এক কাটিং পার হইলে অকস্মাৎ সম্পূর্ণ নূতন দৃশ্যপট উদঘাটিত হইবে। যতদূর দৃষ্টিগোচর হয়, শ্রেণীর পর শ্রেণী পাহাড়ের সারি নীল কুয়াসায় মিশিয়া গিয়াছে ; ইহাদের পাদদেশে তরাইয়ের ঘন জঙ্গলে অসংখ্য পাৰ্ব্বত্য নদী ও নিঝরিণী সূৰ্য্যালোকে রূপার মত ঝিকি মিকি খেলিতেছে । ইহার পরেই কাসিয়ং স্টেশন। . কাসিয়ং- ইহা শিলিগুড়ি হইতে ৩২ মাইল, কলিকাতা হইতে ৩৫০ মাইল এবং দার্জিলিং হইতে মাত্র ২০ মাইল । সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ইহা ৪৮৬৪ ফুট উচ্চ । দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইহা একটি বড় স্টেশন । কাসিয়ং দার্জিলিং জেলার একটি মহকুমার সদর এবং দার্জিলিংএর মত বড় শহর না হইলেও এ অঞ্চলে ইহা একটি সমৃদ্ধিশালী জনপদ । - . হিমালয়ের তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গের মধ্যে এখান ইষ্টতে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু ও জয়র কেবল শিখর দেশটুকু ঘুম পাহাড়ের উপর দিয়া জাগিয়া থাকিতে দেখা যায়। কিন্তু কাসিয়ংএর প্রকৃত আকর্ষণ হইল দক্ষিণদিকে বাংলার বিস্তীর্ণ সমতল ভূমির দৃশ্য । লক্ষ্য করিবার বিষয় এখান হইতে পাহাড় যেন অকস্মাৎ নিম্ন ভূমিতে নামিয়া গিয়াছে। দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রথমে দেখিতে পাওয়া যায় তিস্ত, উহার পর বাম হইতে দক্ষিণে পর পর মহানদী, বালাসন ও নেপাল সীমান্তের মেচী নদী ও বন্য হস্তীর লীলাভূমি মোরুং জঙ্গল ; উহার পর পরিষ্কার দিনে নেপালের মইখোলা ও জোক্‌মই নদীও দেখিতে পাওয়া যায়। তরাইএর জঙ্গল দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় মাঝে মাঝে জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া চাষ আবাদ করা হইয়াছে, এখানে ওখানে চা বাগানের কারখানার টিনের ছাদ নজরে পড়ে। ঘন সবুজ, ফিকে সবুজ প্রভৃতি সবুজ রংএর পার্থক্য দ্বারা এত দূর হইতেও চ, ধান বা পাটের চাষ সহজেই ধরিতে পারা যায় । কার্সিয়ংএর পশ্চিমদিকে ঠিক নীচেই বালাসন উপত্যক এবং উহার অপর পারে নাগরী ও মিরিক নামক শৈলবাহু । -