পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ অধিবাসী—বাংলাদেশের অধিবাসিগণকে বাঙালী বলে। বিগত শতকে অনেক অ-বাঙালী ব্যবসায় বা কাৰ্য্যবাপদেশে বাংলায় আসিয়া বসবাস করিয়াছেন এবং ইহাদিগের মধ্যে অনেকে আচারে, ব্যবহারে ও সংস্কৃতিতে সম্পূর্ণভাবে বাঙালী হইয়া গিয়াছেন। বাংলার অধিবাসিগণ ধৰ্ম্মভেদে হিন্দু ও মুসলমান এই দুই প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত। কলিকাতা শহরে এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় অল্প সংখ্যক জৈন, চট্টগ্রাম জেলায় লক্ষাধিক বৌদ্ধ ও বাংলার নানা স্থানে কিছু কিছু দেশীয় খৃষ্টানের বাস আছে। বাংলায় কয়েকটি আদিম জাতিরও বসবাস আছে। বৰ্দ্ধমান, বীরভূম ও উত্তর বঙ্গের বরিন্দ এলাকায় নানা স্থানে সাওতাল জাতি বাস করেন, ইহারা প্রধানতঃ কৃষিজীবী। দাৰ্জিলিং জেলায় নেপালী, ভুটিয়া ও লেপচা নামক পাৰ্ব্বত্য জাতির বাস আছে। পাৰ্ব্বত্য চট্টগ্রাম ও পার্বত্য ত্রিপুরার পাহাড়ে নাগ, কুকি, টিপরা ও চাকমা প্রভৃতি আদিম জাতির বাস। ইহার কৃষিকাৰ্য্য ও শিকার প্রভৃতির দ্বারা জীবিকার সংস্থান করেন । ভাষা---বাংলা দেশের ভাষার নাম বঙ্গ ভাষা বা বাংলা। এই দেশের অধিবাসিগণের মধ্যে শতকরা ৯২জন এই ভাষায় কথাবাৰ্ত্তা বলেন। ভাষাতত্ত্ববিদগণের মতে “ইণ্ডে এরিয়ান” ভাষার ‘মাগধী” শাখা হইতে এই ভাষার উৎপত্তি হইয়াছে, অর্থাৎ এই ভাষা প্রধানতঃ সংস্কৃতমূলক। উত্তরকালে প্রাকৃত, হিন্দী, মৈথিলী, ফারসি, উর্দু, পর্তুগীজ, দিনেমার, ফরাসী ও ইংরেজী ভাষা হইতে বহু শব্দাবলী এই ভাষায় প্রবিষ্ট হইয়া ইহার শব্দ-সম্পদকে বিশেষ সমৃদ্ধ করিয়াছে। বাংলা ভাষায় রচিত প্রায় সহস্রাধিক বর্ষের পুরাতন পুস্তক দেখিতে পাওয়া যায়। ভারতের প্রাদেশিক ভাষাগুলির মধ্যে অপর কোন ভাষার সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের ন্যায় উন্নত ও ঋদ্ধিমান নহে। এই ভাষা প্রায় পাঁচ ক্রোর লোকের মাতৃভাষা। ভারতের আর কোন প্রাদেশিক ভাষাকে এত অধিক সংখ্যক লোকে মাতৃভাষারূপে ব্যবহার করে না । সংস্কৃতি-বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতি আৰ্য্য সভ্যতামূলক হইলেও উহার এমন কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, যাহা ভারতখণ্ডের অন্যত্র দৃষ্ট হয় না। উত্তরাধিকার আইন, দেবপূজার পদ্ধতি, আচার ব্যবহার, ধৰ্ম্মচিন্তার ধারা, সাহিত্য, শিল্প ও সঙ্গীত-- প্রত্যেক বিষয়েই বাঙালীর একটা নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য দেখা যায়। বাংলার মন্দির, মসজিদ ও প্রাসাদ প্রভৃতির নির্মাণ প্রণালীতে, দেবমূৰ্ত্তির পরিকল্পনা ও গঠনে, প্রস্তর বা ইষ্টকের উপর ক্ষোদিত চিত্রে, চিত্রপটে, দারুশিল্পে, পিত্তল ও কাংস্য নিৰ্ম্মিত দ্রব্যাদিতে, লৌহ নিৰ্ম্মিত অস্ত্রশস্ত্রাদিতে, বয়নশিল্পে, লোক সাহিত্যের উপাখ্যানভাগে, সঙ্গীতাদিতে নব সব রাগ রাগিনীর সন্নিবেশে, ধৰ্ম্ম সাধনায় নব নব ভাবের প্রবর্তনে- সৰ্ব্বত্রই বাঙালীর সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট রূপ আছে। র্যাহারা বহু দেশ ভ্রমণ করিয়াছেন অথবা এই সকল বিষয় অভিনিবেশ সহকারে আলোচনা করিয়াছেন, র্তাহারা সহজেই ইহা উপলব্ধি করিতে পারিবেন । এই স্বল্পপরিসর ক্ষেত্রের মধ্যে এই সকল বিষয়ের আলোচনা সঙ্কলপৱ নহে । . ; :