পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి రి বাংলায় ভ্রমণ N. পশ্চিম বাংলার নদীগুলি দেখিলে সুদৃঢ় ধারণা হয় যে পুরাকালে এগুলি গঙ্গা হইতে কাটা কৃত্রিম খাল ছিল ; কালক্রমে ইহাদের এক একটি ভাগীরথীর স্থায় বৃহৎ নদীতে পরিণত হইয়াছে । ভগীরথের উপাখ্যান বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন সম্ভবতঃ ইনিই ছিলেন সেই সুদক্ষ এঞ্জিনিয়র, র্যাহার খনিত কৃত্রিম খালগুলির সাহায্যে বাংলা সুজলা সুফলা হইয়াছিল। হয়ত গঙ্গাসাগরের মেল সেই ঘটনারই স্মারক হইয়া রহিয়াছে । পূৰ্ব্বে গঙ্গাসাগর তীর্থে যাওয়া বড় কষ্টকর ব্যাপার ছিল । দীর্ঘ দিন ধরিয়া শ্বাপদসস্কুল অরণ্য পথে বা বড় বড় নদী দিয়া নৌকায় করিয়া যাতায়াত করিতে হইত। ইহাতে বিপদের আশঙ্কা যে কত ছিল তাহার আর ইয়ত্তা নাই। ঝড় বৃষ্টি প্রভৃতি দৈব ছবিবপাক, হিংস্র জন্তুর আক্রমণ, জলদসু্যর অত্যাচার ও বিসূচিকা প্রভৃতি মহামারীর জন্য তীর্থযাত্রীদের অনেকেই আর ধন প্রাণ লইয়া গৃহে ফিরিতে পারিত না । লোকে সাগর তীর্থে যাইবার পূৰ্ব্বে আত্মীয় স্বজনগণের নিকট হইতে একরূপ চিরবিদায় লইয়া বাহির হইত। এই কারণেই অতীতে পবিত্র গঙ্গাসাগর হরিদ্বার, কাশী বা প্রয়াগের মত জনপ্রিয় হইয়া উঠিতে পারে নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের “কপালকুণ্ডলা” উপন্যাসে ও রবীন্দ্রনাথের “দেবতার গ্রাস” নামক কবিতায় সেকালের গঙ্গাসাগর তীর্থ যাত্রার অতি উজ্জ্বল চিত্র অঙ্কিত আছে। কিন্তু কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থার অপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে । অন্যান্য তীর্থের দ্যায় গঙ্গাসাগর তীর্থও এখন অতি সুগম ও ঘরের নিকটবৰ্ত্তী হইয়া পড়িয়াছে। ডায়মণ্ড হারবার পর্য্যন্ত রেল গাড়ীতে আসিয়া তথা হইতে স্টীমারে গেলে আজকাল অতি অল্প সময়ের মধ্যে ও অল্প ব্যয়ে ভারতের এই অন্যতম প্রধান তীর্থটি দেখিয়া আসিতে পারা যায়। মকর স্নানের মেলা উপলক্ষে রেল গাড়ী ডায়মণ্ড হারবারে একেবারে গঙ্গার ঘাট পৰ্য্যন্ত চালানো হয়, গাড়ী হইতে নামিয়াই যাত্ৰিগণ সম্মুখে স্টীমারে গিয়া উঠিতে পারেন। যাত্ৰিগণের সুবিধার জন্য বাংলা তথা ভারতের প্রধান প্রধান স্থান হইতে এই সময়ে ডায়মণ্ড হারবার হইয়া রেল ও স্টীমার যোগে গঙ্গাসাগর পর্য্যন্ত সুলভ মূল্যে একটানা যাতায়াতী টিকিট বিক্রীত হয়। মেলা উপলক্ষে সাগরদ্বীপেও আজকাল অতি সুবন্দোবস্ত হয়। নিৰ্ম্মল পানীয় জল, বহুবিধ খাদ্য ও অন্যান্য বস্তুর দোকান, চালাঘর, পুলিস প্রহরী ও স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা, শৌচাগার, রাত্রিকালে উজ্জ্বল আলোকের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা কেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপিত হইয়া মেলার কয়দিন নির্জন সাগরদ্বীপ একটি ছোটখাট শহরে পরিণত হয় । গঙ্গাসাগর যাতায়াতের পথের দৃশ্যও অতি সুন্দর। দিগন্ত বিস্তৃত সলিল রাশির পরপারে শ্যামায়মান বৃক্ষশ্রেণীর সবুজরেখা তীরভূমির অস্পষ্ট আভাষ জানায়। দেখিলেই “কপালকুণ্ডলার” নবকুমারের ন্যায় মনে পড়িবে রঘুবংশের সেই অমর শ্লোক— “দূরাদয়শ্চক্র নিভস্য তন্ত্ৰীঃ তমাল তালী বনরাজি নীলা । আভাতি বেল লবণাম্বুরাশে ধারানিবন্ধেব কলঙ্করেখা ৷ ” পূর্বকালে সস্তানহীনা বহু নারী পুত্রলাভেচ্ছায় মানসিক করিয়া প্রথম সন্তানটি গঙ্গাসাগরে অর্থ্য দিয়া আসিতেন ; তাহারা বিশ্বাস করিতেন, ইহার ফলে আরও