পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ఫి: সন্তান সন্ততি লাভ করবেন। ১৮২ খৃষ্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলী আইন করিয়া এই নিৰ্ম্মম ও নিদারুণ প্রথাটি বন্ধ করিয়া দেন। বৰ্ত্তমানে সাগরদ্বীপে কয়েক ঘর গৃহস্থ সাধুর বসবাস হইয়াছে। যাহারা সুন্দরবন অঞ্চলে মহাল করিতে অর্থাৎ কাষ্ঠ, মোম ও মধু সংগ্ৰহ করিতে যায়, সাধারণতঃ তাহদের দানের উপর নির্ভর করিয়া ইহাদের দিন চলে। এই দ্বীপের উত্তর দিকে পোর্ট কমিশনারগণের লাইট হাউস ও আবহাওয়া অফিস অবস্থিত। লাল রঙের দ্বিতল অফিসগৃহ ও বাতি ঘরটি বহু দূর হইতে দৃষ্টি পথে পতিত হয়। সাগরদ্বীপের পরিমাণ প্রায় ১৭০ বর্গ মাইল। ইহা উত্তর-দক্ষিণে লম্বা । বর্তমানে ইহা জমহীন অরণ্যের অংশ মাত্র হইলেও একসময়ে এখানে বহুলোক বাস করিত । ১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে এক ভীষণ জলপ্লাবনের ফলে এই দ্বীপ জনহীন ও শ্ৰীভ্রষ্ট হয়। ইংরেজ আমলে ১৮১১ খৃষ্টাব্দ হইতে এই দ্বীপে পুনরায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চলে, কিন্তু ১৮৩৩ ও ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দের সাইক্লোনে বহু লোক মারা যায়। দ্বীপের উত্তরভাগে এখন চাষ আবাদ চলিতেছে। যে স্থানে গঙ্গাসাগরের মেলা হয় তাহার সামান্ত উত্তরে জঙ্গলের মধ্যে একটি ভগ্নপ্রায় ইষ্টকালয় আজিও বৰ্ত্তমান আছে। এই স্থানে হইতে কয়েক মাইল উত্তরে বামুনখালি নামক স্থানে একটি প্রাচীন মন্দির দৃষ্ট হয় এবং নিকটবৰ্ত্তী চন্দনপীড়ি নামক জঙ্গলেও একটি ধ্বংসোন্মুখ মন্দির ও বুড়বুড়ীর তট নামক আবাদে “বিশালাক্ষীর মন্দির” নামে একটি পুরাতন মন্দির আছে। সাগরদ্বীপে মহারাজ প্রতাপাদিত্যের একটি তুর্গ ছিল ও একটি নৌ-বহর এখানকার ঘাটি রক্ষা করিত। এই ঘাটি নিরাপদ করিবার জন্য প্রতাপাদিত্য এই জমি অধিকার করেন। সাগরদ্বীপ হইতে রাজধানী ধূমঘাট পৰ্য্যন্ত জলপথ জাহাজ দিয়া পাহার ও রক্ষার ব্যবস্থা হইয়াছিল ; এই কার্য্যে এবং সাগরদ্বীপে জাহাজ নিৰ্ম্মাণ ও মেরামতী কাৰ্য্যে প্রতাপাদিত্যের অনেক ফিরিঙ্গী কৰ্ম্মচারী নিয়োজিত ছিল। সেই জন্য ধূমঘাট যাইবার জলপথের নাম হইয়াছিল “ফিরিঙ্গী ফাড়ী” । কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন সাগরদ্বীপেই প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল ; রামরাম বসু ও হরিশ্চন্দ্র তর্কালঙ্কার প্রভৃতি প্রতাপাদিত্যের জীবনী লেখকগণ র্তাহাকে সাগরদ্বীপের শেষ রাজা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে জেসুইট পাদ্রীগণ প্রতাপাদিত্যকে যে চ্যাণ্ডিকানের রাজা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন, কাহারও কাহারও মতে সেই চ্যাণ্ডিকান বা “চাদখ৷” চক সুন্দরবনের সাগরদ্বীপ অঞ্চলেই অবস্থিত ছিল। (ঈশ্বরীপুর দ্রষ্টব্য)। গঙ্গাসাগর হইতে ১০৷১২ মাইল দক্ষিণ-পূৰ্ব্বে ডায়মণ্ড হারবার মহকুমার দক্ষিণ প্রান্তে বাহির সমুদ্রের উপর নারায়ণতলা দ্বীপ অবস্থিত। নাবিকদিগের নিকট ইহা মেকলেনবার্গ দ্বীপ নামে পরিচিত। উত্তর-দক্ষিণে ইহা নয় মাইল লম্বা এবং প্রস্থে মোটামুটি তিন মাইল। ইহার সাগর সৈকতের উত্তরে বালিয়াড়ি এবং তাহার উত্তরেই বৃক্ষশ্রেণী ; স্থানটি সত্যই মনোরম। দ্বীপের মধ্যে প্রকাও একটি মিষ্ট জলের ঝিল আছে। স্যার এগু. ফ্ৰেজর যখন বাংলার ছোট লাট ছিলেন সে সময়ে তিনি কলিকাতাবাসীদিগের বায়ুপরিবর্তনের জন্য এই দ্বীপটিকে একটি স্বাস্থ্যনিবাসে পরিণত করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। রাস্তা ঘাট, ডাক-বাংলা, ডাক্তারখানা, গলফের মাঠ প্রভৃতি তৈয়ার